❤আদমকাবায় সেজদার মাধ্যমে ইবলিসের ঈমান পরীক্ষা করা হবে এবং নবী (সঃ)কে সেজদা দিয়েছে সাহাবীরা তাঁর প্রমাণ স্বরূপ আয়াত কি?❤
আল্লাহর ক্ষেত্রে অতীত বর্তমান ভবিষ্যত সকলই সমান। তিনি ভবিষ্যতের বিষয়টি ও অনুধাবন করতে পারেন। ঈমান পরীক্ষা না করে। ইবলিসকে দোজখে দিলে তাহলে সে এমনটি বলবে আমার ঈমান পরীক্ষা করলে আমি জান্নাতে যেতে পারতাম। কিন্তু আমার উপর জুলুম করা হয়েছে। এজন্য ইবলিসের ঈমান পরীক্ষা করার জন্য আল্লাহ ব্যবস্থা নিলেন (২৯ : ২)। ঈমান পরীক্ষায় ইবলিশ যদি পাশ করে যায় তাহলে তাকে দোজখে দিলে সে বলবে ঈমান পরীক্ষায় পাশ করার পরও আমাকে দোজখে দিয়ে আমার উপর আল্লাহ জুলুম করেছে। আর আল্লাহ কারো উপরে জুলুম করেন না (২ : ২৫৬)। আর যদি ঈমান পরীক্ষায় পাশ করার পর ইবলিশকে জান্নাতে দেয় তাহলে সে বলবে আমাকে ইতিপূর্বে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়াটা আমার উপর জুলুম করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে (২ : ২৫৬) আয়াতটি ব্যর্থ হয়। আল্লাহর আয়াত তো ব্যর্থ হবে না (১১ : ২০)। এই জন্যে ইবলিশের ঈমান পরীক্ষা আল্লাহ এমনভাবে করবে যেন সে ফেল করে। সেটা এইভাবে যে, জান্নাতের ভিতরে যে অবস্থানে বা যে অবয়বে ইবলিসের সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন। ইবলিসের ঈমান পরীক্ষা করার সময় হাশরের দিন আল্লাহ যদি তেমনটিভাবে অবস্থান করে সেজদা দিতে বলে তাহলে ইবলিস সেজদা দিতে সক্ষম হয়ে যায়। কারণ বেহেস্তের ভিতরে সেতো আল্লাহকে সেজদা দিয়েছে। সেক্ষেত্রে যদি আল্লাহ বেহেস্তের মধ্যে আকৃতি হীন ভাবে দৈব বাণীতে কিংবা পর্দার আড়াল থেকে কিংবা জ্যোতিষ্ময় রূপে কিংবা আল্লাহর নিজ অবয়বে ইবলিসের সাথে কথা বলে থাকে। আর সেভাবে ঈমান পরীক্ষা করা হলে ইবলিস আল্লাহকে সেজদা দিতে সক্ষম হয়ে যাবে। তাছাড়া যদি তাকে প্রশ্ন করা হয় তোমার প্রভু কে? সে বলবে আমার প্রভু আল্লাহ (১৫ : ৩৬) (৩৮ : ৬৯)। তাকে যদি প্রশ্ন করা হয় তোমার দ্বীন কি? সে বলবে আমার দ্বীন ইসলাম (৩ : ৮৩)। তাকে যদি প্রশ্ন করা হয় তুমি আল্লাহ ও আরেখরাত বিশ্বাস করো কিনা? সে বলবে আমি আল্লাহ ও আখেরাত বিশ্বাস করি (২ : ৮)। তাকে যদি প্রশ্ন তুমি আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করো কিনা। সে বলবে আমি আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করি (৫৭ : ১)। তাকে যদি প্রশ্ন তুমি আল্লাহকে সেজদা কর কিনা? সে বলবে হ্যাঁ, আমি আল্লাহকে সেজদা করি (১৩ : ১৫)। কারণ এই আয়াতে বলা আছে আসমান ও জমিনের মাঝে যাকিছু আছে সকলেই আল্লাহকে সেজদা করে। তাহলে এই আয়াত অনুসারে ইবলিশও আল্লাহকে সেজদা করে। কারণ ইবলিশ তো আসমান-জমিনের ভেতরেই অবস্থান করে। তাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, তুমি সালাত আদায় করো কিনা? সে বলবে আমি তো আমার মতো করে সালাত আদায় করি (১০৭ : ৬)। তাকে যদি প্রশ্ন করা হয় তুমি আল্লাহ ও রসুল বিশ্বাস করো কিনা? সে বলবে আমি আল্লাহ ও রসুল বিশ্বাস করি (২৪ : ৪৭)। তাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, তুমি আল্লাহ ও রসুলের আনুগত্য স্বীকার করো কিনা? সে বলবে হ্যাঁ আমি আল্লাহ ও রসুলের আনুগত্য স্বীকার করি (২৪ : ৪৭)। তাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, তুমি আল্লাহর ইবাদত করেছো কিনা? সে বলবে হ্যাঁ আমি জান্নাতে থাকা অবস্থায় অনেক ইবাদত করেছি। তাছাড়া যেহেতু আমি জিন জাতীয় (১৮ : ৫০)। আর আল্লাহ তো জিন এবং ইনসানকে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যেই তৈরি করেছেন (সুরা জাসিয়া আয়াত নং-৫৬)। তাকে যদি প্রশ্ন করা তুমি দোজখ, বেহেশত ও ফেরেস্তা বিশ্বাস করো কিনা? হ্যাঁ আমি তো ইতিপূর্বে জান্নাতে ফেরেস্তাদের সাথেই ছিলাম (২ : ৩৪)। তাকে যদি নবী মোহাম্মদ (সা.)কে দেখিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তুমি এই ব্যক্তিকে চেনো কিনা? সে বলবে হ্যাঁ আমি ইতিপূর্বে নবী মোহাম্মদ (সা.)কে দেখেছি বিধায় তাকে আমি চিনি। তাকে যদি প্রশ্ন করা হয় তুমি মৃত্যু এবং কিয়ামত দিবস বিশ্বাস করো কিনা? সে বলবে হ্যাঁ, আমি কিয়ামত ও মৃত্যু বিশ্বাস করি (৩৮ : ৬৯)। উপরোক্ত প্রশ্নগুলো করে ঈমান পরীক্ষা করলে ইবলিশ পাশ করে যাবে বিধায় উপরোক্তভাবে ঈমান পরীক্ষা না করে আদমকাবায় সেজদার মাধ্যমে সেদিন ইবলিশের ঈমান পরীক্ষা করার জন্য আল্লাহ মানবআকৃতি ধারণ করে ইবলিশের ঈমান পরীক্ষা করার জন্য পায়ে সেজদা দিতে বলবে। সেক্ষেত্রে ইবলিস সেজদা করতে সক্ষম হবে না (৬৮ : ৪২)। তখন সে লজ্জায় পড়ে যাবে (৬৮ : ৪২)। সে এই জন্য সেদিন মানবআকৃতি বিশিষ্ট আল্লাহর পায়ে সেজদা দিতে পারবে যে, সে যখন নিরাপদ ছিল তখন তাকে আদমকাবায় সেজদা করো (৭ : ১১)। তখন সে ঐ সেজদা না করে কাফের (২ : ৩৪)। এই জন্য সেদিন ইবলিশ মানবাআকৃতি বিশিষ্ট আল্লাহর পায়ে সেজদা দিতে পারবে না (৬৮ : ৪৩)। এভাবে ইবলিস ঈমান পরীক্ষায় ফেল করবে বিধায় তাকে দোযখে দেওয়া সম্ভব হবে। এজন্য আল্লাহর ইবলিশের ইমান পরীক্ষা করার সময় মানব আকৃতি ধারণ করে পায়ে সিজদা দিতে বলবে। আর ইবলিশ তখন সেজদা দিতে পারবে না, কারণ সে তো আদমকে সেজদা করে নাই। তখন ইবলিশ এমনটিভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করবে (১৬ : ১১১)। যে আমাকে যেভাবে ঈমান পরীক্ষা করা হইল সকলকে যেন একইভাবে ঈমান পরীক্ষা করা হয়। তখন ইবলিশের এই প্রশ্নের সম্মখীন হওয়ার আশঙ্কায় সকলকে একইভাবে এইভাবে পায়ে সেজদার মাধ্যমে ঈমান পরীক্ষা করা হবে। আর একই পরীক্ষাই মুমিনদেরও ঈমান পরীক্ষা করা হবে (৮ ঃ ২৫)। তখন ইবলিশ আত্মপক্ষ সমর্থনে এমনটি বলবে যে, আদমকাবায় সেজদা করে নাই এমন কাউকে যদি আল্লাহ জান্নাতে দেওয়া হয় তাহলে ইবলিশ বলবে, হয় তাকে দোজখে দাও, তা না হলে আমাকে জান্নাতে দাও। এজন্য নবী (সঃ) সাহাবারা যেন সেদিন সেজদা দিতে সক্ষম হয় তার জন্য ইউসুফ (আ.)কে সেজদা দিয়েছে তাঁর ১১ ভাই এবং পিতা মাতা (১২ : ১০০) এই আয়াত নাযিল হয়ে গেল। এই আয়াত অনুসারে ইউসুফ (আ.) সেজদা যোগ্য নবী ছিলেন সাহাবিরা এটা বিশ্বাস করলেন। আর নবীদের মধ্যে মর্যাদাগত কোনো পার্থক্য নেই (২ঃ১৩৬)। তাই নবী মোহাম্মদ (সঃ) সাহাবারা নবী (সঃ)কে সেজদা যোগ্য মনে করে তাকে সেজদা করেছিলেন। তাই যখন মানব আকৃতিবিশিষ্ট আল্লাহর পায়ে সেজদার মাধ্যমে ইমান পরীক্ষা করা হবে তখন নবী (সা.) সকল সাহাবিরা সেজদা দিতে সক্ষম হয়ে যাবে। কারণ তারা তো নবী (সা.)কে সেজদা দিয়েছেন। যেমনটিভাবে ফেরেস্তারা সেজদা দিয়েছিল আদমকে (১৫ঃ২৯) (৩৮ঃ৭২)। সেই থেকে যারা আদম কাবায় আল্লাহকে সেজদা করে তারাই সেদিন আল্লাহর পায়ে সেজদা দিতে সক্ষম হবে আর যারা এখানে আদম কাবায় আল্লাহকে সেজদা করে নাই তারা সেদিন আল্লাহর পায়ে সেজদা দিতে পারবে না (৬৮ ঃ ৪২) (৬৮ ঃ ৪৩) বিধায় তারা নবী (সঃ) এর অনুসারী ছিল না বরং তাঁরা ইবলিসের অনুসারী বলে প্রমানিত হবে। এই জন্য আল্লাহ্ বলেন তোমরা ইবলিশের অনুসরণ করিও না। এই সেজাদ কর এবং আমার নিকটবর্তী হয়ে যাও (সুরা আলাক আয়াত নং-১৯) আবার অনেকেই বলেন এই সেজদা রহিত করা হয়েছে। তাদের কথা ঠিক নহে। কারণ যে সেজদা না দিযে ইবলিশ লা’নত প্রাপ্ত হয়। সেই সেজদা রহিত করলে ইবলিশকে লা’নত থেকে মুক্তি দেওয়া লাগে। যেহেতু ইবলিশকে লা’নত থেকে মুক্তি দেওয়া হয় নাই বিধায় আদম সেজদা রহিত হয় নাই। আবার অনেকেই বলে এই সেজদা সেরেক। তাদের কথা ঠিক নয়। এটা শেরেক হলে আল্লাহ কেন ফেরেস্তাদেরকে এই সেজদার হুকুম করে। যেহেতু আল্লাহ কখনো কাহারো শেরেকের হুকুম দেন না। কাজেই এই সেজদা তথা আদম কাবায় আল্লাহকে সেজদা করা শেরেক নহে এটা নিশ্চিত। জীবিত অবস্থায় আদমকাবায় আল্লাহকে সেজদা না করে যেভাবে তারা ইবাদত-বন্দেগী করেছিল তা বিফল হবে। সেদিন তারা নিজেদের দ্বীনের মধ্যে মিথ্যা উদ্ভাবন দ্বারা প্রবঞ্চিত হবে (৩ঃ২৪)।
Categories