‘কাফের’ একটি আরবি শব্দ, যা আরবি কুফর ধাতু থেকে আগত, যার শাব্দিক অর্থ হল ঢেকে রাখা, লুকিয়ে রাখা এবং এর ব্যবহারিক অর্থ হল অবাধ্যতা, অস্বীকার করা, অকৃতজ্ঞতা।
এখন কথা হলো সব মানুষই কিছু না কিছু অন্য থেকে লুকিয়ে রাখে, ঢেকে রাখে। তাহলে যে যার সাপেক্ষে ঢেকে রাখছে লুকিয়ে রাখছে সে কাফের। এই বিবেচনায় পৃথিবীর সব মানুষই স্থান কাল পাত্র ভেদে কাফের।
ধর্ম ও নীতিগত দিক থেকে কাফের শব্দের সাথে সত্যের সম্পর্ক। প্রথমত সত্যকে সাধনার ভেতর দিয়ে জানা, অতপর স্বার্থের মোহে সত্যকে ঢেকে রাখা কিংবা সত্য যেন সবাই জানতে না পারে সে ব্যবস্থা করা। সবাই সত্য জেনে গেলে নিজের স্বার্থ বা খায়েশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই ভেবে সত্য ঢেকে রেখে নিজস্ব স্বার্থ হাসিল করার সার্বিক (আর্থসামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ধর্মীয় শিক্ষাগত ও আধ্যাত্মিক) ব্যবস্থাটাই হলো কুফরি ব্যবস্থা। আর এই ব্যবস্থার যারা সুবিধাভোগী তারাই কাফের।
এখন কাফের হওয়ার জন্য প্রথমত সত্যের সাধনায় যেতে হয়, অতপর সত্যের সন্ধান পেতে হয়, তারপর সত্যকে ঢেকে রাখার যাবতীয় প্রচেষ্টা করতে হয়। এই জায়গা থেকে দেখলে কাফের হওয়ার জন্য বিশাল সাধনার প্রযোজন পড়ে। এমন সাধক কাফের আছে কি?
এছাড়া অধিকাংশ মুসলিমরা যে অমুসলিম বা বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কাফের বলে এটা হিংসা বিদ্বেষ ঘৃণা পরশ্রীকাতর প্রসূত চিন্তা। এর সাথে সত্যের সংযোগ নেই। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানেই যে সত্য মানে না তা নয়, বরং ভিন্নতা আসে সত্যের ভিন্ন বুঝাপড়া থেকে। সত্যের ভিন্ন বুঝাপড়ার সত্যতা কোরআন দিয়ে থাকে, বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থগুলো দিয়ে থাকে। (কোরআন ৫:৪৮)
কিন্তু এই জায়গায় যেসব ধর্মাবলম্বীরা তাদের কিতাবে স্বীকৃত সত্যের বহুমুখী বুঝাপড়ার সত্যতাকে ঢেকে একক সত্যের বয়ান দেয় এবং নিজস্ব বুঝাপড়াকেই একমাত্র সত্য ভাবে তারাই কাফের। কারণ তারাই ঐশী কিতাবের বহুমাত্রিক বুঝাপড়ার বিষয়টাকে গোপন করে, বা বহুমাত্রিক বুঝাপড়ার যাবতীয় রাস্তা বন্ধ করে নিজেদের বুঝাপড়াকে গ্রহণ করতে বাধ্য করে। এই বিবেচনায় সব ধর্মেই কাফের আছে। আবার সব ধর্মেই সত্যানুরাগী মানুষও আছে।
আবার যারা সত্যের ইশারা পাওয়ার পর, ঐ ধর্মের নিয়ম নীতি নৈতিকতার চর্চা করেন না, তারাও মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে কুফরের মধ্যে থাকেন। এই যে মানুষের মধ্যে অসততা, জুলুম, মিথ্যাচার, অন্যের ক্ষতি করা, সকল সৃষ্টির জন্য রহমত হওয়ার বদলে গজব হয়ে উঠার প্রবণতা, সবই হলো কুফরের চিহ্ন।