সূরা আল কদর – এর অসতর্কতা মূলক অর্থ নিয়ে ।
اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنٰهُ فِىۡ لَيۡلَةِ الۡقَدۡرِ.
وَمَاۤ اَدۡرٰٮكَ مَا لَيۡلَةُ الۡقَدۡرِؕ.
لَيۡلَةُ الۡقَدۡرِ ۙ خَيۡرٌ مِّنۡ اَلۡفِ شَهۡرٍؕ.
‘কদর’ শব্দটি অপরিবর্তিত রেখেই আয়াত তিনটির সরল অর্থ:
তা (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর তুমি কি জানো- কদরের রাতটি কি? কদরের রাতটি হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
কদর শব্দটি নিয়ে আরো কিছু আয়াত :
03. সূরা আল ফুরকান – 25/2:
وَخَلَقَ كُلَّ شَىۡءٍ فَقَدَّرَهٗ تَقۡدِيۡرًا.
অনুবাদ: আর তিনি সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন , অতঃপর তাঁর তাকদীর নির্দিষ্ট করেছেন।
04. সূরা আল-ক্বামার- 54/49
اِنَّا كُلَّ شَىۡءٍ خَلَقۡنٰهُ بِقَدَرٍ.
অনুবাদ: নিশ্চয়ই আমরা প্রত্যেকটি বস্তু সৃষ্টি করেছি ‘কদর ‘ সহকারে।
05. সূরা আত তালাক – 65/3
اِنَّ اللّٰهَ بَالِغُ اَمۡرِهٖ ؕ قَدۡ جَعَلَ اللّٰهُ لِكُلِّ شَىۡءٍ قَدۡرًا.
অনুবাদ: অবশ্যই আল্লাহ তাঁর কাজ শেষ করেন; আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি ‘কদর’ নির্দিষ্ট করেছেন।
06. সূরা-শুরা- 42/27
وَلٰكِنۡ يُّنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَّا يَشَآءُ.
অনুবাদ: কিন্তু তিনি নিজ ইচ্ছায় তৈরি ‘ কদর’ অনুযায়ী তা ( রিজিক) দিয়ে থাকেন।
** প্রশ্ন হল , কদর শব্দের বাংলা অর্থ যদি ভাগ্য ধরা হয় এবং ভাগ্য যদি পূর্ব নির্ধারিত হয় , তাহলে – কোরআনে পরস্পর বিরোধী মন্তব্য চলে আসে। যা কোরআনের মূলনীতির সম্পূর্ণ বিপরীত এবং তা সম্পূর্ণ অসম্ভব।
তাই উৎকর্ষিত আকলের ভিত্তিতে সমর্থনযোগ্য কদরের বাংলা অর্থ হবে প্রোগ্রাম ( বিধি-বিধান বা প্রাকৃতিক আইন) । তাহলে উপরের সকল আয়াত সমর্থনযোগ্য অর্থবহ হবে।
উদাহরণ-01. সূরা আন-নাজম- 53/39
وَاَنۡ لَّيۡسَ لِلۡاِنۡسَانِ اِلَّا مَا سَعٰىۙ.
অনুবাদ: মানুষ শুধু তাই পায় যার জন্য সে চেষ্টা করে ( আল্লাহর প্রোগ্রামের ভিত্তিতে কর্মপ্রচেষ্টা চালায়)।
উদাহরণ 2. সূরা আশ-শুরা- 42/30
وَمَاۤ اَصَابَكُمۡ مِّنۡ مُّصِيۡبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتۡ اَيۡدِيۡكُمۡ….
অনুবাদ: তোমাদের উপর যে বিপদ আসে, তা তোমাদের নিজ হাতের অর্জন ( আল্লাহর প্রোগ্রামের বিপরীতে কাজ করে নিজ কর্মের দোষে আসে) ।
উদাহরণ 3. সূরা রুম- 30/41
ظَهَرَ الۡفَسَادُ فِى الۡبَرِّ وَالۡبَحۡرِ بِمَا كَسَبَتۡ اَيۡدِى النَّاسِ….
অনুবাদ: স্থল ও সমুদ্রে বিপর্যয় উপস্থিত হয় মানুষের কৃতকর্মের জন্য।…
উদাহরণ 4. সূরা আন নিসা- 4/79
…..وَمَاۤ اَصَابَكَ مِنۡ سَيِّئَةٍ فَمِنۡ نَّـفۡسِكَ…..
অনুবাদ: … আর তোমার যা অকল্যাণ হয় তা তোমার নিজের পক্ষ থেকে ( আল্লাহর প্রোগ্রামের বাহিরের কর্ম দোষে ) হয়…
উদাহরণ 5. সূরা ইউনুস- 10:44
اِنَّ اللّٰهَ لَا يَظۡلِمُ النَّاسَ شَيۡــًٔا وَّلٰـكِنَّ النَّاسَ اَنۡفُسَهُمۡ يَظۡلِمُوۡنَ.
অনুবাদ: নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের প্রতি কোনো জুলুম করেন না, বরং মানুষ ই নিজেদের প্রতি জুলুম করে থাকে ( আল্লাহর প্রোগ্রামের বাহিরে কাজ করে থাকে) ।
উদাহরণ 6. সূরা রাদ- 13/11
….اِنَّ اللّٰهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوۡمٍ حَتّٰى يُغَيِّرُوۡا مَا بِاَنۡفُسِهِمۡ……
অনুবাদ: …. নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন জাতির অবস্থান পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ পর্যন্ত না জাতির লোকেরা ( আল্লাহর প্রোগ্রামের উপর ভিত্তি করে কর্মের মাধ্যমে) নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে….
সুতরাং কোন জাতির কর্ণধার বা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত লোকজন যদি আল্লাহর প্রোগ্রামের ভিত্তিতে বিধি-বিধান মেনে কাজ না করেন, তাহলে সেই জাতির উন্নয়ন ও সফলতা ও আল্লাহ সুবহানাতায়ালা স্বয়ংক্রিয়ভাবে করবেন না।
উদাহরণ 7. সূরা আনআম- 6/164
…..وَلَا تَكۡسِبُ كُلُّ نَـفۡسٍ اِلَّا عَلَيۡهَاۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزۡرَ اُخۡرٰى ۚ……
অনুবাদ: আর প্রত্যেক ব্যক্তি (তা থেকে) কিছুই অর্জন করে না যা তার উপর বর্তায় না ( প্রত্যেকে স্বীয় কৃতকর্মের জন্য দায়ী); আর কেহ অন্যের বোঝা বহন করবে না।….
আল্লাহ সুবহানুতায়ালা, যেহেতু নিজেই অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণ করে দিয়েছেন কোরআনে কোন পরস্পরবিরোধী বক্তব্য নেই-
সূরা আন নিসা- 4/82
….وَلَوۡ كَانَ مِنۡ عِنۡدِ غَيۡرِ اللّٰهِ لَوَجَدُوۡا فِيۡهِ اخۡتِلَافًا كَثِيۡرًا.
অনুবাদ: … আর তা ( কুরআন) যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে আসতো তবে নিঃসন্দেহে তারা তাতে অনেক পরস্পর বিরোধিতা ( পরস্পর বিরোধী বক্তব্য) পেত।
তাই কদর এবং তাকদীর শব্দের অর্থ ভাগ্য নয় বরং সূরা আল কদর এ ‘ মর্যাদা’ অর্থে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ‘ আল্লাহর প্রোগ্রাম বিধি-বিধান’ ধরলে, কোরআনের কোন আয়াত অন্য কোন আয়াতের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য হয়না।