অন্যান্য সকল ভাষার মতো, আরবি ভাষা হল একটি জীবন্ত ভাষা , যা সময়ের সাথে সাথে বিকশিত এবং পরিবর্তিত হয়েছে। যদি কুরআন না থাকত, তাহলে আরবি ভাষাটি সম্ভবত আরামাইক, সিরিয়াক বা ল্যাটিন ভাষার মতো একইভাবে মারা যেত বা অদৃশ্য হয়ে যেত। মিশরীয় এবং অন্যান্য আরব দেশের আরবি উপ ভাষা গুলির সাথে কুরআনের অনন্য আরবির কোনো সম্পর্ক নেই। ফলে আমরা কুরআনের পরিভাষা বোঝার জন্য বাইরের উৎস ব্যবহার করতে পারি না। উদাহরণ স্বরূপ, কোরানে সুন্নাহ শব্দের অর্থ আল্লাহর পদ্ধতি, শরিয়া বা পথ “আল্লাহ নবীর জন্যে যা নির্ধারণ করেন, তাতে তাঁর কোন বাধা নেই পূর্ববর্তীদের ক্ষেত্রেও এটাই ছিল আল্লাহর সুন্নাত (سُنَّةَ)। আল্লাহর আদেশ নির্ধারিত,অবধারিত(৩৩:৩৮) যেখানে সুন্নীরা একই শব্দটি ব্যবহার করে তাদের হাদিসগুলি বোঝাতে এবং তারা এই শব্দটিকে ভুলভাবে বর্ণনা করে।
উমাইয়া যুগের বিরোধী ব্যক্তিরা প্রথম ‘নবীর সুন্নাহ’ শব্দটি রাজনীতিতে আমদানি করেছিল উমাইয়া খলিফা এবং গভর্নরদের পরোক্ষভাবে সমালোচনা করার জন্য। ‘নবীর সুন্নাহ’ বলা হতো , যেভাবে মুহাম্মদ ইয়াথ্রেব নগর-রাষ্ট্রকে ন্যায় বিচারের সাথে শাসন করেছিলেন , সেটাকে। শিয়া আলাউয়ীরা যখন বিদ্রোহ উস্কে দিতে এবং উমাইয়াদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার বিদ্রোহীকে একত্রিত করতে সক্ষম হয়, তখন ব্যানার/স্লোগান ছিল নবী মুহাম্মদের পরিবারের একজন শাসক দ্বারা সন্তুষ্টি পরিপূর্ণ হয়।
কুরআনী পরিভাষা অনুযায়ী ‘উম্মি’ অর্থ বিধর্মী (যাদের তাওরাত বা ইঞ্জিলের জ্ঞান নেই), সেখানে আব্বাসীয় যুগের আরবি এবং আজকের আরবীতে ‘উম্মি’ শব্দের অর্থ “নিরক্ষর”। কুরআনের শব্দ ‘হাদ’ মানে আল্লাহর আইন বা অধিকার, যেখানে সুন্নীরা শব্দটিকে “দণ্ড/শাস্তি” বোঝাতে তৈরি করেছে।
এইভাবে পার্থিব, মানব সৃষ্ট ধর্মগুলি মেনে চলাদের ধর্মীয় প্রভাবের কারণে কুরআনে ব্যবহৃত একটি প্রদত্ত শব্দ কখনও কখনও নির্দিষ্ট যুগের মধ্যে আরবীতে বিভিন্ন অর্থ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। যেমন, কুরানের পরিভাষায় ‘ওলী/আউলিয়া’ নশ্বর মানুষ দেবতাদেরকে বোঝায় যাদেরকে মুশরিকরা আল্লাহর সাথে পূজা করত, যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে আউলিয়া (أَوْلِيَاءَ ) গ্রহণ করে রেখেছে এবং বলে যে, আমরা তাদের এবাদত এ জন্যেই করি যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। (৩৯:৩)। তবুও, সুফিরা তাদের সাধু/শেখ/গুরুদের বোঝাতে ‘আওলিয়া’ শব্দটি ব্যবহার করে। আরো একটি বহুল প্রচলিত ও ব্যাবহৃত শব্দ ‘মাওলানা’ কুরআনি পরিভাষায় আল্লাহকেই বোঝায়। তুমিই আমাদের প্রভুব(مَوْلَانَا)..।(২:২৮৬)। তবুও , আমাদের হুজুররা মাওলানা খেতাব দিয়ে নিজদেরকে প্রভু আল্লাহর আসনে বসিয়েছে। তাই কুরআনের পরিভাষা বোঝার জন্য আরবি ভাষার অভিধানের উপর নির্ভর করা যায় না। কুরআনের কোন আরবি শব্দের মানে বাক্যের প্রসঙ্গে এবং অন্য আয়াতে একই শব্দের ব্যাবহারের মাঝে খুঁজতে হবে।