💥কবরের আযাব💥
কবরে শাস্তি আছে কি নাই তা কেউ দেখে না, জানেও না, তাই তা আমাদের জানার বিষয়ও না। এ বিষয় আল্লাহ আমাদেরকে প্রশ্নও করবেন না। এ বিষয় আলোচনা করারও প্রয়োজন হয় না। কারণ, আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষার জন্য- ৬৭:২। এবং পৃথিবীতে মানুষ পাঠিয়েছেন শুধু মাত্র আল্লাহর এবাদাত করার জন্য- ৫১:৫৬। যারা সঠিক নিয়মে আল্লাহর আদেশ নিষেধ পালন করবে আল্লাহ তাদেরকে পরকালে সুখ-শান্তিতে তথা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যারা আল্লাহর আইন অমান্য করবে তাদেরকে চিরস্থায়ী শাস্তি দেয়ার জন্য আল্লাহ জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। কাজেই মানুষের বেচে থাকার পর মৃত্যু, অতঃপর পুনরায় জীবিত করে বিচার করে জান্নাতে বা জাহান্নামে পাঠানোর কথা ক্বুরআনে বলা হয়েছে।
এ জাতীয় কথা বল্লেই সবাই বলে ওঠে আপনি কবরের আযাব বিশ্বাস করেন না? তাহলে আপনি রছূলকে বিশ্বাস করেন না? তাহলে আপনি রছূলের হাদীছ বিশ্বাস করেন না? ইত্যাদি। তাদের এই কথার উত্তর দেয়ার জন্যই এই বিষয়গুলো জানার প্রয়োজন হয়েছে। তাই কবর আযাব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পক্ষে-বিপক্ষে প্রচুর আলোচনা শোনা যায়। এক শ্রেণী বলতে থাকে যে, কবরে কোনো আযাব নাই এবং আর এক শ্রেণী বলতে থাকে যে, কবরে ভয়াবহ আযাব হয়। তখন দোনো পক্ষ্যই ক্বুরআন ও হাদীছ থেকে দলীল প্রমাণ ও তাদের যুক্তি উপাস্থাপন করতে থাকে। মজার বিষয় হলো, কবর আযাব সম্পর্ক ক্বুরআন থেকে যখনই দলীল প্রমাণ চাওয়া হয় তখন উভয় পক্ষ্য একই আয়াত উপাস্থাপন করতে থাকে। কিন্তু, একই আয়াত উপাস্থাপন করেও পুরোপুরি কোনো সমাধানে কেউ আসতে পারে না। এমন কি এক পক্ষ অন্য পক্ষের দেয়া আয়াত ও যুক্তি মানতেও রাজি হয় না। তদ্রুপ আমিও কিছু আয়াত ও যুক্তি উপাস্থপন করলাম, বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিগণ বিবেচনা করুন।
মিনহা খলাক্ব না কুম
[২০:৫৫] (আল্লাহ বলেন) আমি মাটি থেকে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি; তাতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিবো এবং তা থেকেই তোমাদেরকে পুনরায় বের করে আনবো। ছূরা ত্বহা আয়াত ৫৫।
পৃথিবীতেই মরবে ও উঠানো হবে
[৭:২৫] তিনি বললেনঃ সেই পৃথিবীতেই তোমরা জীবন যাপন করবে, সেখানেই তোমাদের মৃত্যু সংঘটিত হবে এবং সেখান হতেই তোমাদেরকে পুনরায় উঠানো হবে। ছূরা আ’রাফ আয়াত ২৫। অনুবাদঃ মুজিবুর রহমান।
বারঝাখ
বারঝাখ/ বারযাখ বলতে মানুষের মৃত্যুর পর কিয়ামতের আগ পর্যন্ত এই সময়টিকে বারযাখ/ অন্তরায়/ অন্তরাল/ আড়াল/ দেয়াল/ প্রাচীর/ পর্দা/ বা বারঝাখের জীবন বা কবরের জীবন বলা হয়। এখানে যে ভুলটা করা হয় তাহলো “বারঝাখের জীবন বা কবরের জীবন” বলাটাই ভুল। আসলে কবরে কোনো জীবন নাই, তাই “বারঝাখের জীবন বা কবরের জীবন” বলাটা সম্পূর্ণ ভুল। মৃত্যুর আগে মানুষ জীবিত থাকে এবং কিয়ামতের সময় মানুষ পুনরায় জীবিতো হবে এর আগে কেউ জীবিতো নয়। কাজেই “বারযাখ” এর সাথে “জীবন” বলাটা সম্পূর্ণ ভুল। মানুষের মৃত্যুর পর সেই বারঝাখ বা অন্তরায় সম্পর্কে আল্লাহ ক্বুরআনে বলেন-
[২৩:১০০]…যেদিন তাদেরকে পুনরায় উঠানো হবে সেদিন পর্যন্ত তাদের সামনে থাকবে বারঝাখ/ অন্তরায়/ অন্তরাল/ পর্দা। ছূরা মু’মিনূন আয়াত ১০০।
আলোচনাঃ আল্লাহ বললেন যে, মানুষের মৃত্যু থেকে পুনরায় জীবিত করার আগ পর্যন্ত তাদের সামনে থাকবে “বারঝাখ বা পরদা”। এই পর্দা থাকার কারণে মৃতো ব্যক্তির নাফছ্ বা আত্মা পৃথবীর এবং পরকালের কিছুই জানতে পারে না। কারণ, মৃত্যুর পর তার আত্মা থাকে নিষ্ক্রিয় এবং তার আমলনামা বা লিপি থাকে ইল্লিয়্যীন এবং ছিজ্জীনে। আবার লক্ষ্য করুন! আল্লাহ বলেছেন যে, “মৃতো ব্যক্তির সামনে কিয়ামত পর্যন্ত “বারঝাখ, পর্দা বা অন্তরায় থাকে”। বোঝার বিষয় হলো, ঐ পর্দা থাকার কারণে এবং মৃতো ব্যক্তির আত্মা নিষ্ক্রিয় থাকার কারণে পৃথিবীর ও পরকালের কিছুই সে জানতে পারে না। যে কিছুই জানতে পারে না তাকে শাস্তি দেয়া হয় কি করে?
(০১) এই একটি মাত্র যুক্তি দ্বারাই তো প্রমাণ হয় যে, কবরে কোনো শাস্তি নাই।
কিয়ামতের আগ মুহের্তে আত্মা ছেড়ে দিলে-৮১:৭, আল্লাহর হুকুমে সয়ংক্রিয়ভাবে দেহ গঠন হয়ে দেহের মধ্যে ঐ আত্মা প্রবেশ করবে। শিঙ্গায় ফুক দেয়ার মাধ্যমে কিয়ামাত সংগঠিত হলে ঐ বারঝাখ বা পর্দা শেষ হবে এবং কবরে যা আছে তা উঠানো হবে।
কবর থেকে উঠালে অন্তরের সব প্রকাশ হবে
[১০০:৯-১১] (আল্লাহ বলেন) তবে কি সে জানে না সেই সময় সম্পর্কে যখন কবরে যা আছে তা উঠানো হবে ও অন্তরে যা আছে তা প্রকাশ করা হবে?… ছূরা আদিয়াত আয়াত ৯-১১।
আলোচনাঃ কবরে যা আছে তা উঠানো হবে অর্থাৎ যে দেহো এতোদিন মাটির সাথে মিশে ছিলো আল্লাহর আদেশে সেই দেহো আগের মতো তৈরি হয়েই উঠে আসলেই তার অন্তরের সবকিছুই সে জানতে পারবে। এই আয়াত দ্বারা প্রমাণ হয় যে, পুনরায় না উঠানো পর্যন্ত কবরবাসী কিছুই জানে না। সেদিনই অন্তরের সব বিষয়াদি পাকাশ করা হবে।
(০২) এই আয়াত দ্বারা প্রমাণ হয় যে, কবরের কিছুই প্রকাশ্যমান নয় তাই কবরের আযাব সম্পর্কে মৃতো ব্যক্তি কিছুই জানে না, তাই কবরে কোনো আযাবও নাই।
পুনরায় জীবিত করবেন
[৮০:২১-২২] (আল্লাহ বলেন) অতঃপর (আল্লাহ) তার মৃত্যু ঘটান ও তাকে কবরস্থ করা হয়। এরপর যখন ইচ্ছা করবেন তখন তাকে পুনরায় জীবিত করবেন… ছুরা আ’বাছা আয়াত -২১-২২।
আলোচনাঃ আল্লাহ বললেন যে, মৃত্যুর পর মানুষকে পুনরায় জীবিত করা হবে। আল্লাহর কথা অনুযায়ী বোঝাগেলো যে, পুনরায় জীবিত করার আগ পর্যন্ত মানুষ মৃতো থাকবে। যারা বলেন কবরে শাস্তি দেয়া হয় তাদের কাছে প্রশ্নঃ মৃতো ব্যক্তিকে কিভাবে শাস্তি দেয়া হয়? আল্লাহর কথায় পুনরায় জীবিতো না করা পর্যন্ত সেতো মৃতো। মৃতো মানুষকে শাস্তি দেয়া না দেয়া সমান কথা। কারণ সেতো মৃতো।
(০৩) এই একটি মাত্র যুক্তি দ্বারাই প্রমাণ হয় যে, কবরে কোনো শাস্তি নাই।
পুনরায় সৃষ্টির অস্তিত্ব ও প্রতিদান দেয়া
[১০:৪] (আল্লাহ বলেন) তাঁর কাছেই তোমাদের সকলকে ফিরে যেতে হবে। আল্লাহর ওয়াদা নিশ্চিত সত্য। তিনি সৃষ্টির সূচনা করেছেন। পুনরায় তিনিই আবার সৃষ্টি করবেন যাতে তিনি- যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে- তাদেরকে পূর্ণ ইনসাফের সাথে প্রতিদান দিতে পারেন…। ছূরা ইঊনুছ আয়াত ৪।
আলোচনাঃ আল্লাহ বললেন যে, তিনি পুনরায় সৃষ্টি করে তার পর পূর্ণ ইনসাফের সাথে প্রতিদান দিবেন। যারা বলেন কবরে শাস্তি দেয়া হয় তাদের কাছে প্রশ্নঃ আল্লাহ পুনরায় সৃষ্টি না করে কিসের উপর শাস্তি দিবেন? কারণ, যেখানে সৃষ্টির অস্তিত্বই নাই সেখানে শাস্তি হবে কিসের উপরে? সৃষ্টি না করেই কি কাউকে শাস্তি দেয়া যায়?
(০৪) এই একটি মাত্র যুক্তি দ্বারাই তো প্রমাণ হয় যে, সৃষ্টির অস্তিত্ব না থাকাতে কবর আযাব বলে কোনো শাস্তিই নাই।
আল্লাহ বললেন, পুনরায় সৃষ্টি করে প্রতিফল দেবেন, আর আপনারা বলছেন সৃষ্টির আগেই আল্লাহ প্রতিফল দেয়া শুরু করেন, তাহলে আল্লাহ কি দুই রকম কথা বলেন? (মা’আজাল্লাহ) তার মানে আপনারা আল্লাহর কথা মানছেন না। তার মানে আল্লাহর কথা বাদ দিয়ে আপনাদের কথা মানতে হবে কি? এই আয়াতের আরও একটি বিষয় তাহলো, আল্লাহ পুনরায় সৃষ্টি করে পূর্ণ ইনসাফের সাথে প্রতিদান দেবেন। যারা বলে কবরে শাস্তি দেয়া হয় তারা আল্লাহ কে বে-ইনসাফ বলে ঘোষনা করলো। কারণ, ইনসাফ হবে বিচারের দিন। কাজেই আল্লাহ বে-ইনসাফ করেন না তাই ইনসাফ ছাড়া কবরে শাস্তিও দিতে পারেন না।
(০৫) এই যুক্তি দ্বারাও প্রমাণ হয় যে, কবরে কোনো শাস্তি হয় না।
ছিজ্জীন এবং ইল্লিয়্যীন
আরবি ডিক্সনারী অনুযায়ী “ছিজ্জীন” অর্থ “কারাগার, কয়েদখানা, জেলখানা, গর্ত, নথি, লিপি ও খাতা। অর্থাৎ ছিজ্জীন হচ্ছে অমোচনীয় লিপি, সিলমোহরকৃত কিতাব বা আমলনামা রাখার স্থান। সেই ছিজ্জীনে রাখা হয় অবিশ্বাসী ও পাপীদের কৃতকর্ম, লিপি বা আমলনামা। এখানে বোঝানো হয়েছে মৃত্যুর পর পাপীদের আমলনামা কিয়ামত পর্যন্ত ছিজ্জীনে রাখা হয়। আর ইল্লিয়্যীন হচ্ছে সেই স্থান যেখানে ঈমানদার বা সৎকর্মশীলদের লিপি, আমলনামা বা সিলমোহরকৃত কিতাব রাখা হয় “কিতাবুম মারকূম”- ৮৩:১। যারা দুনিয়াতে সৎকর্ম করবে তাদের আমলনামার কিতাব ইল্লিয়্যীনে থাকবে, আর যারা অসৎ কর্ম করবে তাদের আমলনামার কিতাব ছিজ্জীনে থাকবে। যখন আল্লাহ আমাদেরকে পুনরায় সৃষ্টি করে বিচারের দিনে একত্রিত করবেন তখন সেই ছিজ্জীন এবং ইল্লিয়্যীন থেকে আমাদের আমলনামার খাতা আনা হবে। আল্লাহ বলেন:
[৮৩:৭-৯] এটা কিছুতেই উচিত নয়, নিশ্চয় পাপাচারীদের আমলনামা আছে ছিজ্জীনে আপনি জানেন, ছিজ্জীন কি? এটা লিপিবদ্ধ খাতা। ছূরা মুতাফফিফীন আয়াত ৭-৯।
[৮৩:১৮-২২] কখনও না, নিশ্চয় সৎলোকদের আমলনামা আছে ইল্লিয়্যীনে। আপনি জানেন ইল্লিয়্যীন কি? এটা লিপিবদ্ধ খাতা। আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণ একে প্রত্যক্ষ করে। ছূরা মুতাফফিফীন আয়াত ১৮-২২।
আলোচনাঃ উপোরক্ত আয়াত থেকে বুঝতে হবে যে, (১) মৃতো ব্যক্তির আমল নামা কোথায় থাকে? কবরে নাকি ইল্লিয়্যীন-ছিজ্জীনে? (২) মৃতো ব্যক্তি কি জীবি থাকে নাকি মৃতো থাকে? যেহেতু তার সমস্ত আমলনামা ছিজ্জীন এবং ইল্লিয়্যীনে চলে গেছে। (৩) মৃতো ব্যক্তি কি জাগ্রত থাকে নাকি ঘুমিয়ে থাকে? (৪) মৃতো ব্যক্তির রূহ বা আত্মা কোথায় থাকে? (৫) “রূহ” কি?
রূহ
“রূহ” সম্পর্কে মানুষকে সামান্য জ্ঞান দেয়া হয়েছে। “রূহ” কোথাও থাকার বিষয় না। তাই “রূহ” থাকার বা রাখার কোনো কথা আল্লাহ ক্বুরআনে বলেননি, তাই সে বিষয় আমাদের ভাবনা-চিন্তা করাও উচিৎ না। “রূহ” হচ্ছে আল্লাহর একটি আদেশ মাত্র। যখন আল্লাহ আদেশ করেছেন তখন আমরা হয়েছি। অতঃপর আমাদের মৃত্যু হয়। আবার যখন তিনি আদেশ করবেন তখন আমরা হয়ে যাবো। এটা কোথাও থাকা না থাকার বিষয় না, আল্লাহর আদেশই “রূহ”। আল্লাহ বলেন:
[১৭:৮৫] তারা আপনাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলে দিনঃ রূহ আমার পালনকর্তার আদেশ। এ বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে। ছূরা বনী ইছরাঈল আয়াত ৮৫।
আলোচনাঃ আল্লাহ বলেছেন “রূহ” হচ্ছে আল্লাহর আদেশ। আর “নফস” হচ্ছে আত্মা বা প্রাণ- ৮১:৭। এই আত্মা যা আমল করবে বা যা অর্জন করবে তা হচ্ছে আমল বা “কর্ম”। এই আমলনামা যাতে লেখা হয় তা হচ্ছে “লিপি” বা “কিতাব”। এই আমলনামা যারা লিখে রাখেন তারা হচ্ছেন “কিরামান কাতিবী”-৮২:১১। এই আমলনামা বা লিপি থাকবে ইল্লিয়্যীন বা ছিজ্জীনে। যখন আত্মার বাঁধন ছেড়ে দেয়া হবে-৮১:৭, এবং আল্লাহ পুনারায় যখন আদেশ করবেন তখন ঐ আদেশ তথা “রূহ” ঐ নফছের সাথে বা আত্মার সাথে মিলিত হয়ে স্থির হয়ে রবের দিকে ছুটতে থাকবে। সেদিন কোন দিকে ছুটতে হবে তা সকলেই বুঝে নিতে পারবে। কারণ, একটি মাত্র ওয়ে ছাড়া অন্য কোনো পথ সেদিন আর থাকবে না।
যাই হোক আল্লাহ বলেছে “রূহ” সম্পর্কে আমাদের কম জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাই এর বেশি পৃথিবীর মানুষ কিছু বলতে পারবে না। তাই আমাদের বুঝে নিতে হবে যে, “রূহ” হচ্ছে আল্লাহর আদেশ। যেমন, আল্লাহ আদমের মধ্যেও আদেশ তথা রূহ ফুঁকে দিয়েছিলেন- ১৫:২৯, ৩৮:৭২। অতঃপর আদমের পৃষ্টদেশ হতে আদমের বংশধর বের করে তাদেরকে ওয়াদা করিয়ে ছিলেন এবং সেই মানুষ পর্যায়ক্রমে পৃথিবীতে আসে, অতঃপর মানুষের মৃত্যু হয়, অতঃপর আত্মা বিহীন বা প্রাণহীন মাটির দেহো মাটিতেই রাখা হয়, অতঃপর আল্লাহ সেই মানুষকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন এবং কিয়ামতের সময় আত্মগুলো ছেড়ে দেয়া হবে তারপর বিচার করা হবে। আল্লাহ মরিয়মের মধ্যেও আদেশ তথা “রূহ” ফুঁকে দিয়েছেন- ২১:৯১, ঈছা নবীকেও “রূহ” দ্বারা শক্তি দান করেছেন- ২:৮৭, আল্লাহ আল ক্বুরআনে ছূরা তাকবিরের ৭ নং আয়াতে বলেছেন যে, যখন কিয়ামাত সংঘটিত হবে ঠিক তখনই সেই “নুফূছু”/ “নাফছ্”/নফছ্/ নফস্/ প্রাণ/ আত্মাগুলোকে ছেড়ে দেয়া হবে।
নফছ/ আত্মা ছেড়ে দেয়া হবে
[৮১:১-৬] (আল্লাহ বলেন) যখন সূর্যকে গুটিয়ে নেয়া হবে, যখন নক্ষত্ররাজি খসে পড়বে, যখন পর্বতমালা অপসারিত হবে, যখন পূর্ণ-গর্ভা উষ্ট্রী উপেক্ষিত হবে, যখন বন্য পশুরা একত্রিত হয়ে যাবে, যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে।
[৮১:৭] দেহে যখন আত্মা পুনঃসংযোজিত হবে। অনুবাদঃ মুজিবুর রহমান।
[৮১:৭] যখন দেহের সঙ্গে আত্মাগুলোকে আবার জুড়ে দেয়া হবে। অনুবাদঃ তাইসিরুল কুরআন।
[৮১:৭] যখন আত্মাসমূহকে যুগল করা হবে। অনুবাদঃ মুহিউদ্দিন খান।
[৮১:৭] আর যখন আত্মাগুলোকে (সমগোত্রীয়দের সাথে) মিলিয়ে দেয়া হবে। অনুবাদঃ আল বায়ান ফাউণ্ডেশন। ছূরা তাকবীর আয়াত ১-৭।
আলোচনাঃ আল্লাহর কথায় ইহাই প্রমাণ হলো যে, “নফছ”, আত্মা বা প্রাণ আসবে কিয়ামতের সময়। কিন্তু বর্তমানে কবরে আল্লাহর আদেশ তথা “রূহ”, আত্মা বা প্রাণ দেয়ার কথা তো আল্লাহ ক্বুরআনের একটি আয়াতেও বলেননি।
কোনো দলীল প্রমাণ ছাড়াই যারা বলে কবরে মৃতো ব্যক্তিকে “রুহ” দিয়ে তার পর শাস্তি দেয়া হয় তাদের এই কথা ধোপে টেকে না। কারণ, দেহো তো মিশে যায় মাটির সাথে, মাছে খেয়ে ফেলে, আগুনে পুড়ে যায়, নদী ভাঙ্গনে কবর বিলিন হয়ে যায় এবং আল্লাহ বলেছেনঃ “অস্থিসমূহ জরাজীর্ণ অবস্থায় পচে গলে যায়”- ৩৬:৭৮। তাহলে বর্তমানে প্রাণহীন কবরে শাস্তি দেয়া হয় কিসের উপরে? কে শাস্তি দেয়? প্রমাণ কি? ক্বুরআন অস্বীকারকারীরা আমার এই কথাগুলোর কোনো যুক্তি বা প্রমাণ দিতে পারবে কি? তবে তারা শুধু অহংকার করতে পারে।
মূল কথা হলো আল্লাহ কিয়ামতের সময় যখন বলবেন “কুন” হয়ে যাও “ফা’ইয়াকুন” অমনি আল্লাহর আদেশে মানুষের দেহসহ সব কিছুই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়ে যাবে। দেহো তৈরির পর যখন নফস/ প্রাণ/ আত্মাগুলোকে ছেড়ে দেয়া হবে তখনই আত্মাগুলো দেহের মধ্যে প্রবেশ করবে। তবে যারা বলে প্রাণহীন দেহে কবরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং প্রাণহীন দেহে কবরে শাস্তি দেয়া হয় তাদের মধ্যে ভাবনা-চিন্তার অভাব রয়েছে।
(০৬) উপোরক্ত আয়াত ও যুক্তি দ্বারাই প্রমাণ হয় যে, কবরে কোনো আযাব নাই।
আত্মা দেহে আসার পর তারা ভীত সন্ত্রস্থ হবে, কেউ কারো দিকে তাকানোর সুযোগ পাবে না, নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে ছুটতে থাকবে এবং বিচারের মুখোমুখি করে তাকে প্রতিদান দেয়া হবে, এবং সঠিক ভাবেই সে প্রতিদান পাবে। এ প্রতিদান বিচারের আগে নয় বরং বিচারের পরে।
সিঙ্গায় ফুক দেয়া, কে ঘুম থেকে উঠালো?
কে আমাদেরকে ঘুম থেকে জাগালো? এর অর্থ আমি যা বুঝি তা হচ্ছে আমল নামা ইল্লিয়্যীনে এবং ছিজ্জীনে চলে যাবার পর কিয়ামতের সময় তাদের “নফছ”/ আত্মা/ প্রাণ ছেরে দিলে দেহ তৈরি হয়ে দেহের মধ্যে আত্মা প্রবেশ করলে বিবেক জাগ্রত হবে এবং তারা মনে করবে যে, আমরা তো এতদিন নিষ্ক্রিয় তথা ঘুমের মধ্যে ছিলাম। কে আমাদেরকে জাগ্রত করলো। দেহের সাথে আত্মা সংযোজন হলে তারা ঐ কথা বলে পঙ্গপালের মতো দৌড়াতে দৌড়াতে রবের নিকট যেতে থাকবে। এখানে কবর বলা হয়েছে এই জন্য যে, মৃতো দেহোকে কবরে রাখা হয়। আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করে মৃতো মানুষের দেহ কাক দ্বারা কবরস্থ করার নিয়ম দেখিয়েছেন বলেই আল্লাহ কবরের কথা বলছেন। কবর শব্দটি আভিধানিক অর্থে ব্যবহার হয়েছে। আসলে কবর বলতে নফছ ছেরে দিলে সেদিন সমস্ত মানুষ মাটি থেকেই উঠবে।
[৩৬:৫১] (আল্লাহ বলেন) সিঙ্গায় ফুকদিলে সকলে কবর থেকে বের হয়ে রবের নিকট ছুটে চলবে। ছূরা ইয়াছীন আয়াত ৫১।
[৩৬:৫২] তারা বলবে, ‘হায় আমাদের দুর্ভোগ! আমাদেরকে আমাদের ঘুমের জায়গা থেকে কে উঠালো? (তাদেরকে জবাব দেয়া হবে) ‘‘এটা হলো তাই- দয়াময় আল্লাহ যার ওয়াদা দিয়েছিলেন, আর রছূলগণ সত্য কথাই বলেছিলেন। ছূরা ইয়াছীন আয়াত ৫২। অনুবাদঃ তাইসিরুল কুরআন।
আলোচনাঃ এই আয়াতের ভিত্তিতে কিয়ামত পর্যন্ত এক ঘুমে থাকা মানুষগুলো কিভাবে আযাব বা শাস্তি ভোগ করতে পারে তা আমার বোধগম্য নয়। কাউকে শস্তি দিলে সে কি ঘুমের মধ্যে থাকতে পারে? শাস্তি দিলে তো সঙ্গে সঙ্গে তার ঘুম ভেঙ্গে যেতো। আচ্ছা বলুন তো! ঘুমের মধ্যে কি কাউকে শাস্তি দেয়া যায়? এই পৃথিবীর কোনো জ্ঞানবান ব্যক্তি কি এই কথা বিশ্বাস করতে পারে? মানুষ তো দুরের কথা, কোনো প্রাণীকেও ঘুমের মধ্যে শাস্তি দেয়া যায় কি? ইহা অযুক্তিক কথা ছাড়া আর কিছুই কি হতে পারে? যারা বলে কবরে শাস্তি দেয়া হয় তারা যে কতোবড়ো ভুলের মধ্যে আছে তা আল্লাহই মা’লুম।
(০৭) এই একটি যুক্তি দ্বারাই প্রমাণ হয় যে, কবরে কোনো শাস্তি নাই।
উপরের আয়াতে আরও একটি বিষয় লক্ষ্যনীয়ঃ যখন কবরবাসিকে আত্মা দেয়া হবে তখন কবরবাসি আফসোস করে বলে উঠবে যে, “কে আমাদেরকে নিদ্রা থেকে জাগালো”? এর কারণ, মৃতো ব্যক্তির দেহের সাথে আল্লাহর আদেশ তথা রূহ বা আত্মা না থাকাতে হটাৎ আল্লাহর আদেশে সে জীবিতো হলে তখন তার কাছে মনে হবে যে, সে অনেক দিন ঘুমিয়েই ছিলো। তাই সে বলে উঠবে “কে আমাকে ঘুম থেকে জাগালো”? যেমন, আল্লাহ বলেছেন, মানুষ ঘুমের মধ্যেও মৃতো- ৩৯:৪২। তাই আছহাবে কাহাফের যুবকরাও কয়েক বছর পর জীবিত হয়ে বা ঘুম থেকে উঠে বলেছিলো যে, তারা সেখানে একদিন বা দিনের কিছু সময় অবস্থান করেছিলো মাত্র, এটা তাদের কাছে মনে হয়েছিলো।
জানার বিষয় হলোঃ ঘুম ভেঙ্গে যাওয়াতে কবরবাসীর দুর্ভোগ বেড়ে গেলো। তাহলে এতোদিন কবরে তারা আরামেই ছিলো। শাস্তি দিলে তো তারা আগে থেকেই দুর্ভোগে থাকতো, তাই নয় কি? যারা বলে কবরে আযাব দেয়া হয়, তাদের কথায় বোঝা যায় যে, আযাব হবে খুব স্বাদের আযাব, আরামের আযাব, মজাদার আযাব বা খুব মধুর আযাব। কারণ, ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার কারণেই যদি তাদের দুর্ভো বেড়ে যায় তাহলে এর আগে তারা যে আযাবের মধ্যে ছিলো তা নিশ্চয় তাদের জন্য আরামদায়ক আযাব ছিলো। তাহলে আযাবও আরামদায়ক তাই নয় কি? আর এতো স্বাদের আযাব যা কবরবাসীকে নিদ্রাবস্থায় দেয়া হয় যা তারা টেরও পায় না জানতেও পারে না। তাদের মধ্যে নূন্যতম জ্ঞান থাকলেও তারা কবর আযাবের ওয়াজ করতে পারতো না।
(০৮) উপোরক্ত আল্লাহর এই একটি মাত্র আয়াত দ্বারাই প্রমাণ হয় যে, কবরে কোনো শাস্তি নাই তাই তারা কোনো দুর্ভোগেই থাকে না।
কিছু আযাব দিলেই বলে উঠবে
[২১:৪৬] আপনার পালনকর্তার আযাবের কিছুমাত্রও তাদেরকে স্পর্শ করলে তারা বলতে থাকবে, হায় আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা অবশ্যই পাপী ছিলাম। ছূরা আম্বিয়া আয়াত ৪৬।
আলোচনাঃ এই আয়াতের “ছিলাম” শব্দ দ্বারা অতিতকাল বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ বললেন যে, আযাব থেকে যদি কিছু আযাব দেই তাহলেই তারা বলে উঠবে যে, আমরা পাপী ছিলাম। কবরে যদি আযাব দেয়া হতো তাহলে তারাও ঐভাবে বলে উঠতো যে, “হায় আমাদের দুর্ভোগ, আমরা পাপী ছিলাম যার কারণে আমাদেরকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে”। কিন্তু কবরবাসী কবরের আযাব পেয়েও কি এরুপ কোনো মন্তব্য করেন? এরুপ মন্তব্যের কথা কি আল্লাহ ক্বুরআনে বলেছেন? অর্থাৎ কবরে আযাব হলে কি তারা এমন মন্তব্য করতো না যে, আমরা পাপী ছিলাম? আর আল্লাহ কি তা আমাদেরকে জানাতেন না?
(০৯) এই যুক্তি দ্বারাই তো প্রমাণ হয় যে, কবরবাসীর কোনো শাস্তি নাই তাই তারা কিছু বলেও না।
সেদিন পরিমান মতো প্রতিদান দেয়া হবে
[৩৬:৫৪] (আল্লাহ বলেন) অতপরঃ (ঘোষণা হবে) আজ কারোও প্রতি (বিন্দু মাত্র) যুলুম করা হবে না, (আজ) তোমাদের শুধু সেটুকু প্রতিদান দেয়া হবে যা তোমরা দুনিয়াতে করে এসেছো। ছূরা ইয়াছীন আয়াত ৫৪।
আলোচনাঃ লক্ষ্য করেছেন কি? সেদিনই পরিমান মতো প্রতিদান দেয়া হবে। আল্লাহ বলেছেন “আজ”, এবং বলেছেন “পরিমাণ মতো” এবং বলেছেন “জুলুম করা হবে না”। আবার লক্ষ্য করুন! আল্লাহ বলেছেন “আজ”, “পরিমাণ মতো”, এবং বলেছেন “জুলুম করা হবে না”। আল্লাহর কথা অনুযায়ী “আজ” অর্থাৎ সেই দিন আসার পূর্বেই কি আল্লাহ কাউকে তার প্রাপ্যের পরিমাণ দিয়ে শাস্তি দিতে পারেন? সেই দিন আসার আগেই যদি কাউকে শাস্তি দেয়া হয় তাহলে তা কি তার প্রতি জুলুম করা হলো না? তাহলে আল্লাহ কি দুই রকম কথা বলেন? (মা’আজাল্লাহ)।
(১০) এই একটি মাত্র যুক্তি দ্বারাই কি প্রমাণ হয় না যে, কবরে কোনো শাস্তি নাই?
সেদিন অপরাধ জানিয়ে দেওয়া হবে
[৫৮:৬] (আল্লাহ বললেন) যে দিন আল্লাহ তাদের সকলকে পুনরুজ্জীবিত করে উঠাবেন অতঃপর তারা যে আমল করেছিলো তা তাদেরকে জানিয়ে দেবেন। আল্লাহ তা হিসাব করে রেখেছেন যদিও তারা তা ভুলে গেছে। আর আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী। ছূরা মুজাদালা আয়াত ৬।
[২৪:২৪] যেদিন তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে তাদের জিহবা, তাদের হাত, তাদের পা- তাদের কৃতকর্মের ব্যাপারে। ছূরা নূর আয়াত ২৪।
[২৪:২৫] আল্লাহ সেদিন তাদেরকে তাদের ন্যায্য পাওনা পুরোপুরিই দেবেন আর তারা জানতে পারবে যে, আল্লাহই সত্য স্পষ্ট ব্যক্তকারী। ছূরা নূর আয়াত ২৫।
আলোচনাঃ আল্লাহ বললেনঃ (১) কিয়ামতে তাদের অপরাধের কথাগুলো তাদেরকে জানিয়ে দেবেন। প্রশ্নঃ কবরে জানার কথা আল্লাহ ক্বুরআনে বলেছেন কি? (২) তাদের হাত, পা, জিহবা তাদের বিরুধ্যে সাক্ষ্য দিবে। প্রশ্নঃ কবরে হাত-পা সাক্ষ্য দেয়ার কথা আল্লাহ ক্বুরআনে বলেছেন কি? (৩) আল্লাহ আরও বললেন যে, সেদিন তাদেরকে ন্যায্য পাওনা পুরোপুরিই মিটিয়ে দিবেন। প্রশ্নঃ তাহলে কাউকে তার অপরাধের কথা না জানিয়ে তার হিসাব তাকে না দেখিয়ে এবং ন্যায্য পাওনা না দিয়ে আগেই কাউকে শাস্তি দেয়া যায় কি? এটা পৃথবীর কোনো বিচারক মেনে নেবেন কি? কোনো মানুষ মেনে নিবেন কি?
(১১) এই তিনটি আয়াতের যুক্তি দ্বারা কি প্রমাণ হয় না যে, কবরে কোনো শাস্তি নাই?
তখন তারা জানতে পারবে
[১৯:৭৫] বলো, যারা গুমরাহীতে পড়ে আছে, দয়াময় তাদের জন্য (রশি) ঢিল দিয়ে রাখেন, যে পর্যন্ত না তারা দেখতে পাবে যার ওয়া‘দা তাদেরকে দেয়া হয়েছে- তা শাস্তিই হোক কিংবা ক্বিয়ামতই হোক।’ তখন তারা জানতে পারবে মর্যাদায় কে নিকৃষ্ট আর কে জনবলে দুর্বল। ছূরা মার’ইয়াম আয়াত ৭৫।
আলোচনাঃ যার ওয়াদা তাদেরকে দেয়া হয়েছে, এই ওয়াদা হচ্ছে “কিয়ামত”। কিয়াময়াত হউক বা শাস্তি হউক যাই হউক তা সেদিনই জানতে পারবে। সেদিন অর্থাৎ কিয়ামতের দিন। অর্থাৎ কবরের সময় শেষ হলেই তা জানতে পারবে অর্থাৎ কবরে সে কিছুই জানবে না। আর যে জানে না তাকে শাস্তি দেয়াও যায় না।
(১২) এই যুক্তি দ্বারাই তো প্রমাণ হয় যে, কবরে সে কিছু জানে না তাই তার কোনো শাস্তিও হয় না।
বিচারের আগে জাহান্নাম সামনে আনা হবে
আলোচনাঃ আল্লাহ বললেন, সকল মানুষকে একত্রিত করে শাস্তি দেয়ার জন্য জাহান্নামকে সামনে আনা হবে, আল্লাহর এই কথাকে উপেক্ষা করে যারা বলে কবর থেকেই শাস্তি শুরু হয়ে যায়, যারা আল্লাহর সত্য বাণী মানে না, যারা মানুষের বানানো বাণী আল্লাহর বাণীর সাথে সংযুক্ত করে, কবরে আযাব না থাকা সত্বেও কবর আযাবের মতো মিথ্যা বিধান দিয়ে মানুষকে পথভ্রষ্ট করে ও ধোঁকা দেয়, মিথ্যা কথা শুনিয়ে আল্লাহর সত্য বিধান প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহ তাদের জন্য হুসিয়ারী বাক্য উচ্চারণ করলেন। আল্লাহ বলেন-
[১৮:৯৯-১০০]…অতঃপর আমি তাদের সবাইকে একত্রিত করবো। আর সেদিন আমি সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের নিকট জাহান্নামকে সরাসরি উপস্থিত করবো। ছূরা কাহাফ আয়াত ৯৯-১০০। জান্নাতকেও সামনে আনা হবে- ৮১:১৩।
আলোচনাঃ শাস্তি দেয়ার জন্য জাহান্নাম সামনে আনা হবে, কবরে শাস্তি দেয়ার জন্য জাহান্নাম সামনে আনা হবে কি? এমন কথা আল্লাহ ক্বুরআনে বলেছেন কি?
(১৩) এই আয়াত দ্বারাও কি প্রমাণ হয় না যে, কবরে কোনো শাস্তি নাই?
যারা কবরের আযাব বিশ্বাষ করে তারা মুখে মুখে ক্বুরআন মানলেও মূলোতো তারা কুরআনের আয়াত বাদ দিয়ে নিজেদের বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করে থাকে। যে আযাবের নাম গন্ধও ক্বুরআনে নাই সে বিষয় আলোচনা করাও উচিৎ না। কারণ, ক্বুরআনে আল্লাহ কবরের আযাব বিষয়ক একটি আয়াতও নাজিল করেননি। কিন্তু হাদীছের কিতাবগুলোতে কবরের আযাব সম্পর্কে অসংখ্য বর্ণনা থাকাতে বার্যাখ নিয়ে কিছু আলোচনার প্রয়োজন হয়েছে।
কবর আযাব ক্বুরআনে নাই কেনো?
আমরা কবরের ভয়াবহ ‘আযাব সম্পর্কে ওয়াজ নছিহাত শুনি। যদি কবরে আযাব থাকে তাহলে এই ভয়াবহ আযাব বা এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও আল ক্বুরআনে এর বর্ণনা উল্লেখ নাই কেনো? আল্লাহ কি এ বিষয় বলতে ভুলে গেছেন? মা’আ’জাল্লাহ। সমাজে কবরের আযাব সম্পর্কে অসংখ্য জাল হাদীছ, দুর্বল হাদীছ, যঈফ হাদীছ, বানোয়াট হাদীছ ও মিথ্যা হাদীছ চালু রয়েছে। কুরআন হলো ইসলামী জ্ঞানের একমাত্র নির্ভূল উৎস ও পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। তাই আসুন, আলোচ্য বিষয়টি কুরআনের সাথে মিলিয়ে এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।
প্রথম সৃষ্টি এবং আলাছতু বিরব্বিকুম
জেনে রাখা ভালো যে, আমরা পৃথিবীতে আসার পূর্বে কোনো নমুনা ছাড়াই এবং অস্তিত্বহীন থেকে আল্লাহ আমাদেরকে প্রথম সৃষ্টি করেছিলেন। আল্লাহ বলেন-
[১৯:৬৭] মানুষ কি স্মরণ করেনা যে, আমি তাকে ইতি পূর্বে সৃষ্টি করেছি যখন সে কিছুই ছিলো না? ছূরা মার’ইয়াম আয়াত ৬৭।
আলোচনাঃ প্রথম সৃষ্টির পর আমরা আল্লাহর সঙ্গে যে ওয়াদা করেছিলাম, যখন বিচার দিবসে আমরা পুনরায় আল্লাহর সামনে সারিবদ্ধভাবে দাড়াবো তখন সেই ওয়াদার কথা আল্লাহ আমাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন। আল্লাহ বলেন-
[১৮:৪৮] আর তাদেরকে তোমার রবের নিকট উপস্থিত করা হবে সারিবদ্ধভাবে এবং বলা হবেঃ তোমাদেরকে প্রথমবার যেভাবে সৃষ্টি করেছিলাম সেভাবেই তোমরা আমার নিকট উপস্থিত হয়েছ…। ছূরা কাহাফ আয়াত ৪৮।
[৬:৯৪] (ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ বলবেন) তোমরা আমার নিকট তেমনই নিঃসঙ্গ অবস্থায় হাজির হয়েছো যেমনিভাবে আমি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম…। ছূরা আন’আম আয়াত ৯৪।
[১০:৪] তোমাদের সকলকে তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য, নিশ্চয় তিনিই প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনিই পুনর্বার সৃষ্টি করবেন…। ছূরা ইঊনুছ আয়াত ৪।
[৭:১৭২] আর স্মরণ করো, যখন তোমার রব বনী-আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের বংশধরকে বের করলেন এবং তাদেরকে তাদের নিজদের উপর সাক্ষী করলেন যে, ‘আমি কি তোমাদের রব নই’? তারা বলল, ‘হ্যাঁ, আমরা সাক্ষ্য দিলাম। (আল্লাহ বলেছিলেন) যাতে কিয়ামতের দিন তোমরা বলতে না পারো যে, এ বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। ছূরা আ’রাফ আয়াত ১৭২।
আলোচনাঃ আল্লাহর সাথে ওয়াদা করা, নবীগণকে সাহায্য করা, পৃষ্ঠপ্রদর্শন না করার ওয়াদা সত্বেও মুনাফেকরা নবীর কাছ থেকে পালিয়ে যায়- ৩৩:১৪। মানুষ পৃথিবীতে এসে সে ওয়াদার কথা ভুলে যাওয়াতে কিয়ামতে অবশ্যই সেই পূর্বের ওয়াদা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। আল্লাহ বলেন-
[৩৩:১৫] অথচ তারা ইতোপূর্বে আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করেছিল যে, তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে না। আল্লাহর সঙ্গে কৃত ওয়াদা সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞেস করা হবে। ছূরা আহযাব আয়াত ১৫।
আলোচনাঃ এ পৃথিবীতে যতো মানুষ আসছে এবং আসবে তাদের সকলকে আগেই তৈরি করে আল্লাহ সকলের অঙ্গিকার নিয়েছিলেন। আল্লাহ জিজ্ঞেস করেছিলেন “আলাছতু বিরব্বিকুম” “আমি কি তোমাদের রব নই”? আমরা সেদিন সাক্ষ্য দিয়েছিলাম যে, ‘হ্যাঁ, আপনিই আমাদের রব। আল্লাহ তখন বলেছিলেন এ বিষয়টি এ জন্য যে, “যাতে কিয়ামতের দিন তোমরা বলতে না পারো যে, এ বিষয়টি আমাদের জানা ছিলো না”। আমরা আরও ওয়াদাবদ্ধ হয়েছিলাম যে, পৃথিবীতে এসে আমরা পৃষ্টপ্রদর্শন করবো না অর্থাৎ আল্লাহর কোনো আদেশই অমান্য করবো না এবং নবীগনের কিতাব মান্য করবো ও নবীগণকে সাহায্য করার ওয়াদাও করেছিলাম- ৩:৮১। তদ্রুপ মৃত্যুর পর পুনরায় সৃষ্টি করার পর আমরা সকলেই সেই কিয়ামতের দিন আবার আল্লাহর সামনে সারিবদ্ধভাবে দ্বাড়াবো এবং প্রথমবার সৃষ্টি করার পর আল্লাহর সাথে যে ওয়াদা করেছিলাম তাও আমাদের মনে পরে যাবে, এবং মনে পরে যাবে আল্লাহর সাথে সেই ওয়াদার কথাও।
১০ দিন, ১ দিন, দিনের কিছু অংশ
নিচের এই বিষয়টি ধীরে ধীরে মন দিয়ে পড়ুন আর বুঝুন। মানুষ পৃথিবীতে যতোদিন জীবিত থাকবে ততোদিনের একটা ধারনা করে বা অনুমান করে কেয়ামতের দিন বলবে যে, আমরা ১০ দিন, ১ দিন বা দিনের কিছু সময় পৃথিবীতে ছিলাম। অর্থাৎ কেউ শতো বছরের বেশি, কেউ ৬০ বছর আবার কেউ ৩০/২০ বছর বেচে থাকে বা তার আগেই মারা যায়। মানুষ পৃথিবীতে যতোদিন জীবিতো থাকবে ততোদিনের কথাই তাদের মনে পড়বে। কবরে ছিলো মৃতো দেহো, তাদের প্রাণ কবরে ছিলো না, তাই কবরে সময়গুলোর কথা তারা বলবে না, বলতে পারবেও না, মানুষের কবর এই পৃথিবীতেই। কাজেই, যারা বলে কবরে আযাব হয় তাদের কাছে প্রশ্নঃ কবরসহ পৃথিবীতে হাজার হাজার বছর থেকেও তারা কেনো বলবে যে, আমরা ১ দিন, বা দিনের কিছু সময় পৃথিবীতে ছিলাম?
(১৪) এই একটি যুক্তি দ্বারাই কি প্রমাণ হয় না যে, কবরে কোনো আযাব নাই?
একশ বছর মৃতো ছিলো
আল্লাহ ছূরা বাক্বারার ২৫৯ নং আয়াতে বলেছেন যে, তিনি এক ব্যক্তিকে ১০০ বছর মৃতো অবস্থায় রেখে তাকে পুনরায় জীবিতো করার পর তাকে জিজ্ঞাসা করাতে সে বলল আমি এক দিন বা দিনের কিছু সময় এ অবস্থায় ছিলাম। ঐ ব্যক্তি ভেবে ছিলো যে, সকালে আমার মৃত্যু হয়েছিলো এবং বিকালেই আমি জীবিতো হলাম। তদ্রুপ আছহাবে কাহাফের যুবকদের ব্যপারও।
আছহাবে কাহাফ
আল্লাহ ছূরা ঝুমারের ৪২ নং আয়াতে বলেছেন যে, মানুষ ঘুমের মধ্যেও মৃতো। উক্ত আয়াতে প্রমাণ হলো যে, পৃথিবীর সকল মানুষ ঘুমের মধ্যে মৃতো থাকে। তদ্রুপ আছহাবে কাহাফের যুবকরা কোনো শাস্তি ছাড়াই কয়েক বছর মৃতো অবস্থায় ঘুমের মধ্যে ছিলো- ১৮:১১+২৬। যুবকরা কয়েক বছর ঘুমের মধ্যে কাটিয়ে জাগ্রত হওয়ার পর তাদের কেউ বললোঃ তারা এক দিন বা দিনের কিছু অংশ অবস্থান করেছিলো- ১৮:১৯। অর্থাৎ তারা কোনো শাস্তির মধ্যে ছিলো না, তাই তাদের কাছে মনে হয়েছিলো যে, মাত্র দিনের কিছু অংশ তারা ঘুমিয়ে ছিলো। যদি তারা কোনো শাস্তির মধ্যে থাকতো তাহলে তাদের মনে থাকতো এবং তারা বিরামহীনভাবে এক নিয়মে ঘুমের মধ্যে থাকতে পারতো না। যদি তারা শাস্তি অবস্থায় থাকতো তাহলে তা তাদের মনে থাকার কারণে তারা একদিনের কথা বলতো না। তাহলে তারা বলতো যে, আমরা বহু বছর অবস্থান করেছি।
আছহাবে কাহাফের এই ঘটনায় আল্লাহ কিয়ামত ও কিয়ামতের ওয়াদা যে সত্য তা বুঝিয়েছেন- ১৮:২১। তদ্রুপ কিয়ামতের দিনেও মানুষ সেই আছহাবে কাহাফ গূহাবাসীদের মতোই বলবে যে, আমরা ১০ দিন/ ১ দিন/ দিনের কিছু অংশ পৃথিবীতে অবস্থান করে ছিলাম। আছহাবে কাহাফের এ বিষটি এখানে টানার কারণ এই জন্য যে, যুবকরা যেমন শাস্তি ছাড়া ঘুমের মধ্যে মৃতো অবস্থায় কাটিয়েছে তাই তাদের মনে হয়েছিলো যে, আমরা সকালে ঘুমিয়ে বিকালে উঠলাম তাই তারা বলেছিলো একদিনের কথা। ঠিক তদ্রুপ, কবরবাসিরাও শাস্তি ছাড়া মৃতো অবস্থায় ঘুমের মধ্যে থাকে, যার কারণে মৃতো অবস্থায় থাকার সময়গুলো তাদের জানা থাকবে না। তারা পৃথিবীতে যতোদিন জীবিতো ছিলো ততো দিনের কিছু তাদের মনে পরবে। তাই তারা একটা ধারনা করে বলবে যে, আমরা পৃথিবীতে ১০ দিন/ ১ দিন বা দিনের কিছু অংশ অবস্থান করেছিলাম। আল্লাহ বলেন-
[২০:১০৩-১০৪] (কিয়ামতের দিন) সেদিন তারা নিজেদের মধ্যে চুপি চুপি বলাবলি করবেঃ তোমরা (পৃথিবীতে) মাত্র দশ দিন অবস্থান করেছিলে। তারা কি বলবে তা আমি ভালো জানি। তাদের মধ্যে যে অপেক্ষাকৃত সৎপথে ছিলো সে বলবেঃ তোমরা এক দিনের বেশি অবস্থান করনি। ছূরা ত্বহা আয়াত ১০৩-১০৪।
আলোচনাঃ উক্ত আয়াতে বলা হয়েছে তারা কেয়ামতের দিন বলাবলি করবে যে, তোমরা মাত্র ১০ দিন বা একদিন পৃথিবীতে অবস্থান করেছিলে, যদি তারা আছহাবে কাহাফের যুবকদের মতো শাস্তি ছাড়া নিরাপদে না থাকতো তাহলে কিয়ামতে পৃথিবীতে জীবিত থাকার ১০ দিন বা একদিনের কথা বলতে পারবে না। কারণ, তাদেরকে শাস্তি দেয়া হলে তারা জাগ্রত থাকতো। আর জাগ্রত থাকলে একদিন দশদিন বলার সুযোগ থাকতো না। কারণ, তাদের জন্ম থেকে মৃত্যু, মৃত্যু থেকে কবরে শাস্তিসহ কিয়ামত পর্যন্ত হাজার জাজার দিনের কথা মনে পরতো আর বলতো আমরা বহু বছর/ হাজার বছর পৃথিবীতে ছিলাম। অর্থাৎ কবরবাসিকে কবরে শাস্তি দেয়া হলে তা তাদের মনে থাকতো, তাই তারা কিয়মতে বলতো আমরা পৃথিবীতে বহু বছর বা হাজার বছর ছিলাম, কিন্তু সেইদিন তারা তা বলবে না।
(১৫) এই একটি মাত্র যুক্তি দ্বারাই প্রমাণ হয় যে, কবরে কোনো শাস্তি নাই।
১ দিন বা দিনের কিছু অংশ
[২৩:১১৩] (আল্লাহ বলেনঃ কিয়ামতে) তারা বলবে, আমরা একদিন বা এক দিনের কিছু অংশ অবস্থান করেছি। না হয় আপনি গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করুন। ছূরা মু’মিনূন আয়াত ১১৩। (গণনাকারী দুইজন ফেরেস্তা যথা কেরামান কাতেবীন- ৮২:১১)।
এক সন্ধ্যা বা এক সকাল ছিলো
[৭৯:৪৬] যেদিন তারা একে দেখবে, সেদিন মনে হবে যেনো তারা দুনিয়াতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক সকাল অবস্থান করেছে। ছূরা নাজিয়াত আয়াত ৪৬।
মুহূর্তকাল
[৩০:৫৫] যেদিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন অন্যায়কারীরা কসম করে বলবে যে, তারা মূহূর্তকালের বেশি অবস্থান করেনি। এভাবেই তারা সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হতো।
আলোচনাঃ আল্লাহ ৭৯:৪৬ আয়াতে বললেন যে, তাদের “মনে হবে”। এবং ৩০:৫৫ আয়াতে বলেছেন মুহূর্তঃ অর্থ “চোখের পলক/ অল্পক্ষণ/ নিমিষ/ অতি সামান্য সময়”। অর্থাৎ অপরাধীরা আল্লাহকে বুঝাইতে চাইবে যে, আমরা মুহূর্তকাল বা সামান্য সময় পৃথিবীতে ছিলাম কাজেই, আমরা অপরাধ করার সময়ই পাইনি। আল্লাহ সে জন্যই বললেন যে, “এভাবেই তারা সত্য থেকে বিমুখ থাকতো”। অর্থাৎ তারা পৃথিবীতেও এভাবে সত্যবিমুখ ছিলো।
সামান্য সময় ছিলে
[১৭:৫২] যেদিন তিনি তোমাদেরকে ডাকবেন আর তোমরা তাঁর প্রশংসা করতে করতে তাঁর ডাকে সাড়া দিবে আর তোমরা ধারণা করবে/ মনে করবে/ অনুমান করবে যে, তোমরা সামান্য সময়ই (পৃথিবীতে) অবস্থান করেছিলে। ছূরা বনি ইছরাঈল আয়াত ৫২।
আলোচনঃ লক্ষ্য করুন! আল্লাহই বলে দিলেন যে, সেদিন মানুষ “ধারনা” করবে, যেমন ধারনা করেছিলো আছহাবে কাহাফের যুবকরাও। ক্বুরআন থেকে কোনো দলীল-প্রমাণ ছাড়া যারা বলেন কবরে দেহের মধ্যে “রূহ” দিয়ে দেহোকে শাস্তি দেয়া হয় তাদের কাছে প্রশ্নঃ “রূহ” দিলে তো সে জীবিত হয়ে যাবে, তাহলে হাজার হাজার বছর কবরে শাস্তি ভোগ করেও তারা কেনো বলবে যে, আমরা ১০ দিন/ ১ দিন অবস্থান করেছি, এটা কি হাস্যকর বিষয় নয়?
(১৬) এই যুক্তি দ্বারাই কি প্রমাণ হয় না যে, কবরে কোনো শাস্তি নাই?
তারা কেনো ধারনা করবে?
এবার আসুন তারা কেনো ধারনা করবে সে বিষয় একটু আলোচনা করি। অনেকেই মনে মনে ভাবতে পারেন যে, মানুষ পৃথিবীতে ৫০/৬০ বছরেরও কমবেশি বেচে থাকে, কিন্তু কিয়ামতে কেনো ধারনা করবে যে, ১০ দিন/ ১ দিন, দিনের কিছু অংশ বা সামান্য সময় পৃথিবীতে ছিলাম? ধারনা করার কারণ কি? আসলে “ধারনা” কথাটা সরাসরি আল্লাহ নিজেই বলেছেন। আমাদের একটি বিষয় মনে রাখা দরকার আর তা হলো আমরা এ পৃথিবীতে কেউ ২০, ৪০, ৮০, ১০০ বছরের বেশি ও কম বেচে থাকি। আবার এ পৃথিবীতে এমন মানুষ ছিলো যাদের জন্য আল্লাহ নির্ধারিত করেছিলেন ধীর্ঘায়ু- ২১:৪৪। আয়ুষ্কাল ধীর্ঘ ছিলো “নূহ নবীরও”। আল্লাহ তাঁকে ৫০ কম হাজার বছর বাচিয়ে রেখে ছিলেন- ২৯:১৪। সে অনুযায়ী কিয়ামতেও লোকেরা বলবে দিনের কিছু অংশ, ১ দিন আবার কেউ ১০ দিনের কথা বলবে। এর কারণটি লক্ষ্য করুন, আল্লাহ বলেন-
[৩২:৫] তিনি আকাশ হতে পৃথিবী পর্যন্ত কার্য পরিচালনা করেন, অতঃপর সকল বিষয়াদি তাঁরই কাছে একদিন উত্থিত হবে যার পরিমাপ তোমাদের গণনায় হাজার বছর।
আলোচনাঃ আল্লাহর গণনায় একদিনের সমান পৃথিবীর মানুষের গণনায় তা হাজার বছর- ৩২:৫। আমাদের দেশে সূর্য উঠলেও অন্য দেশে রাত অর্থাৎ সূর্য উঠে না। আল্লাহর আরশের ক্ষেত্রে এরকম অবস্থা হয় না। সেখানের পদ্ধতি আল্লাহই ভালো জানেন। পৃথবীর চেয়েও বড় কোটি কোটি নক্ষত্র আল্লাহ ঝুলিয়ে রেখেছেন যার আলো সূর্যের চেয়েও বেশি। কত দুরে তারপরও কিছু আলো দেখা যায়। আমরা আল্লাহর কাছে চলে যাওয়ার পর আল্লাহর গণনার হিসেবেই সেই সময় অতিবাহিত করবো, আমরা তা জানতেও পারবো। তাই সে গণনা অনুযায়ী আমাদের মনে হবে যে, আমরা পৃথিবীতে ১০ দিন/ একদিন/ একদিনের কিছু সময় পৃথিবীতে ছিলাম।
আমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করে আল্লাহ আমাদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন “আলাছতু বিরব্বিকুম”, আমরা আল্লাহর এ প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছিলাম- ৭:১৭২। কাজেই প্রথমবার সৃষ্টিতে আমরা প্রথমে সেখানেই ছিলাম। পৃথিবীতে আসা অতঃপর পৃথিবী থেকে মৃত্যু হওয়ার পর আবার আমরা সেখানেই ফিরে গেলে সেখানকার অর্থাৎ আল্লাহর গণনার সেই হিসাবই আমরা করবো। সেখানের দিন অর্থাৎ বিচারের দিনও অনেক বড় হবে। যেমন, সেখানে কোনো বালক দাড়িয়ে থাকতে থাকতে বৃদ্ধ হয়ে যাবে- ৭৩:১৭। আর সেখানে তো বর্তমানের এই সূর্যটা সকাল-সন্ধ্যা উদয়-অস্ত যাওয়ার কথা আল্লাহ বলেননি।
নেকি বদি ওজন তার পর শাস্তি
[২৩:১০২-১০৩] (আল্লাহ বলেন, সেদিন) যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম, এবং যাদের পাল্লা হাল্কা হবে তারাই নিজেদের ক্ষতিসাধন করেছে, তারা জাহান্নামেই চিরকাল বসবাস করবে। ছূরা মু’মিনূন আয়াত ১০২-১০৩।
আলোচনাঃ আল্লাহ বললেন যে, সেদিন নেকি-বদি বা পাপ-পূণ্য ওজন করার পর যাদের পাল্লা ভারি হবে তারা সফল হবে অর্থাৎ জান্নাতে যাবে। আর যাদের পাল্লা হালকা হবে তারা চিরকাল বসবাসের জন্য জাহান্নামে থাকবে।
(১৭) আল্লাহর এই একটি কথায় প্রমাণ হয় যে, নেকি-বদি ওজনের পর থেকেই শাস্তি শুরু হবে, কবরে কোনো শাস্তি নাই। আল্লাহ নেকি-বদি ওজন না করে সেই আদম থেকে শুরু করে কিয়ামাত পর্যন্ত কাউকে হাজার হাজার বছর কবরে শাস্তি দিয়ে অবিচার করতে পারেন না, আল্লাহ অবিচারক নন।
প্রাণ হরণ মৃত্যুর সময়, কবরে রূহ দেয়া হয় না
[৩৯:৪২] (আল্লাহ বলেন) আল্লাহ মানুষের নফছ/ আত্মা/ প্রাণ হরণ করেন তার মৃত্যুর সময়, আর যে মরে না, তার নিদ্রাকালে…। ছূরা ঝুমার আয়াত ৪২।
আলোচনাঃ এই আয়াতে প্রমাণ হলো যে, “নফছ” অর্থ “প্রাণ” বা “আত্মা”, এবং পরের আয়াতে কিয়ামতের সময় “নফছ” বা আত্মা ছেড়ে দেয়া হবে। আল্লাহ বলেন-
[৮১:৭] যখন দেহের সঙ্গে আত্মাগুলোকে আবার জুড়ে দেয়া হবে। ছূরা তাকবীর আয়াত ৭।
আলোচনাঃ আল্লাহ বললেন যে, মৃত্যুর সময় প্রাণ হরণ অর্থাৎ জান কবজ করা হয় এবং কিয়ামতের সময় দেহে প্রবেশের জন্য ঐ প্রাণগুলো ছেড়ে দেয়া হবে। কোনো দলীল প্রমাণ ছাড়া যারা বলেন কবরে পূনরায় “রুহ” দিয়ে তার পর কবরে আযাব দেয়া হয় তাদের কাছে প্রশ্নঃ কোন আয়াতের দলীলে আপনারা “রূহ” দেয়ার দাবী করেন? প্রমাণ কি? কিয়ামাত পর্যন্ত সময় নিলেও প্রমাণ দিতে পারবেন না। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম যে, কবরে “রূহ” দেয়া হয় তাহলে কবরের ঐ ব্যক্তির “রূহ” আবার কোন সময় হরণ করা হবে? অর্থাৎ কবরে যদি প্রাণ দেয়া হয় তাহলে তাকে পুনরায় জানকবজ করতে হবে তারপর কিয়ামতের সময় আবার প্রাণ দিয়ে জীবিতো করে তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। নাকি ঐ প্রাণসহ কিয়ামতের সময় উঠে আসবে? নাকি আল্লাহর কথা অনুসারে কিয়ামতের আগ মুহুর্তে “আত্মাগুলো” ছেড়ে দিলে-৮১:৭ তখন দেহে প্রাণ প্রবেশ করবে, কোনটি?
(১৮) এই একটি মাত্র যুক্তি দ্বারাই কি প্রমাণ হয় না যে, কবরে রূহ দেয়ার এই কথা ডাহা মিথ্যা? আর তাদের এই যুক্তি মিথ্যা হওয়ার কারণে তাদের কবর আযাবের দাবীও মিথ্যা। তাদের এই অযুক্তিক মিথ্যা তথ্যে আবারও প্রমাণ হলো যে, কবরে কোনো আযাব নাই এটাই মহা সত্য।
কবরসমূহ উম্মোচিত হলে প্রত্যেকে জানতে পারবে
[৮২:৪-৫] (আল্লাহ বলেন) এবং যখন কবরসমূহ উম্মোচিত হবে, তখন প্রত্যেকে জানতে পারবে, সে যা আগে পাঠিয়েছে এবং যা পিছনে রেখে এসেছে। ছূরা ইনফিতার আয়াত ৪-৫।
আলোচনাঃ এই আয়াতে দুটি বিষয় লক্ষনীয়ঃ (১) “যখন কবর সমূহ উম্মেচিত হবে” অর্থাৎ মৃত্যুর সাথে সাথে মৃতো ব্যক্তির জন্য এই চেনা পৃথিবী সম্পূর্ণরূপে অচেনা হয়ে যাবে এবং কিয়ামতের আগ মুহুর্তে আত্মা ছেড়ে দিলে মানুষের জন্য পরকালের বাস্তবতা শুরু হবে। (২) “তখন প্রত্যেকে জানতে পারবে”, অর্থাৎ মৃতো ব্যক্তির দেহে প্রাণ প্রবেশ করলে সে জীবিত হবে এবং পৃথিবীতে থাকাকালীন সে যা আমল বা কর্ম করেছিলো তা এবং কিয়ামত হওয়ার যে কথা ছিলো তাও সে জানতে পারবে। আল্লাহর কথায় প্রমাণ হলো যে, কবরসমূহ উম্মোচিত হওয়ার পরই প্রত্যেকে তার কর্মসহ সবকিছুই সে জানতে পারবে। আল্লাহর কথায় ইহাও প্রমাণ হলো যে, পুনরায় উঠার আগ পর্যন্ত মৃতো ব্যক্তির দেহো কবরে থাকাকালীন সময় কিছুই জানতে পারে না।
(১৯) আল্লাহর এই একটি মাত্র কথা দ্বারাই প্রমাণ হয় যে, কবরে কোনো প্রশ্ন নাই এবং কোনো আযাবও নাই। কবরে কিছু নাই বলেই সে কিছুই জানতে পারে না। যে কিছু জানতে পারে না, সে শাস্তি সম্পর্কেও কিছু জানতে পারে না, তাই কবরে কোনো প্রশ্নও নাই কোনো আযাবও নাই। আর সে জানবেই বা কি করে, সে তো জীবিতই না। আপনি না মানলে না মানতে পারেন কিন্তু আল্লাহর কথা অনুযায়ী এটাই মহা সত্য।
একত্রিত করবেন কাউকেই ছাড়বেন না
[১৮:৪৭] (আল্লাহ বলেন) (সেদিনের কথা চিন্তা করো) যেদিন আমি পাহাড়কে চলমান করবো এবং আপনি পৃথিবীকে দেখবেন একটি উম্মুক্ত প্রান্তর সেদিন মানুষকে আমি একত্রিত করবো অতঃপর তাদের কাউকেই ছাড়বো না। ছূরা কাহাফ আয়াত ৪৭।
আলোচনাঃ আল্লাহ বললেন সেদিন তিনি কাউকে ছাড়বে না। অর্থাৎ ভালো মানুষ এবং মন্দ মানুষ উভয়কেই আল্লাহ বিচারের মুখোমুখি করবেন। আল্লাহ কি কবরে না ছাড়ার কথা বলেছেন নাকি সেদিন কাউকে ছাড়বেন না বলেছেন? কোনটি? আল্লাহ বললেন সেদিন তিনি কাউকে ছাড়বে না, যদি কবরে শাস্তি দেওয়া হয় তাহলে তো সেদিন আসার পূর্বেই আল্লাহ কবরবাসিকে ধরে ফেললেন ও শাস্তি দিয়ে দিলেন। তাহলে আল্লাহ সেদিনের কথা বলে আবার কবরেও শাস্তি দেয়ার জন্য আক্রমণ করবেন তার মানে আল্লাহ কি দুই রকম কথা বলেন? (মা’আজাল্লাহ)।
(২০) এই একটি মাত্র যুক্তি দ্বারা কি প্রমাণ হয় না যে, সেদিন আসার পূর্বে আল্লাহ কবরে শাস্তি দেয়ার জন্য কাউকেই আক্রমণ করেন না?
কবর থেকে অপমান ও লাঞ্ছনা অবস্থায় উঠবে
[৫৪:৭] (আল্লাহ বলেন) (সেদিন) তারা অপমানে তাদের দৃষ্টি অবনত অবস্থায় কবর থেকে বের হয়ে আসবে। মনে হবে যেনো তারা বিক্ষিপ্ত পঙ্গপাল। ছূরা ক্বামার আয়াত ৭।
[৭০:৪৩-৪৪] (আল্লাহ বলেন) সেদিন তারা কবর হতে বের হবে দ্রুত বেগে। মনে হবে তারা কোনো একটি লক্ষ্যস্থলের দিকে ধাবিত হচ্ছে- তাদের দৃষ্টি হবে অবনমিত, লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে। এটাই হলো সেই দিন যার ওয়াদা তাদেরকে দেয়া হয়েছিলো। ছূরা মা’আরিজ আয়াত ৪৩-৪৪।
আলোচনাঃ উপরের দুটি আয়াতে প্রমাণ হয় যে, আত্মা দেহে আসার পর সেদিন আল্লাহ মানুষকে একত্রিত করবেন এবং সেদিনই অপরাধী মানুষগুলোকে লাঞ্ছনা আচ্ছন্ন করবে। তারা অবনমিত হয়ে অপমান অবস্থায় নির্দিষ্ট লক্ষ্যস্থলের দিকে বা সমাবেশ স্থানের দিকে ছুটতে থাকবে, যেদিনের ওয়াদা আল্লাহ আগেই করেছেন। প্রশ্নঃ তারা কোন দিন অপমানীত হবে কবরে নাকি কিয়ামতে? কবরে শাস্তি দিলে সেকি অপমান হলো না? কবরে অপমানের কথা আল্লাহ বলেছেন কি? কবরে প্রশ্ন, কবরে শাস্তি, কবরে সাপ-বিচ্ছুর কামর, হাতুরী দিয়ে পিটানো ও দুইপাশের মাটি দ্বারা চাপ দেয়ার ওয়াদা আল্লাহ করেছেন কি? নাকি শাস্তির ব্যপারে সেদিনের ওয়াদা করেছেন?
(২১) এই যুক্তি দ্বারাও প্রমাণ হয় যে, কবরে কিছুই হবে না, যা হবার সেই ওয়াদার দিনেই হবে।
আমার মৃত্যুই যদি শেষ হতো
কেয়ামতের ময়দানে মানুষ বিচার ও শাস্তির ভয় দেখে যা বলবে এবং আল্লাহ যা বলবেন-
[৬৯:২৫-২৭] কিন্তু যার ‘আমালনামা বাম হাতে দেয়া হবে সে বলবে, ‘হায়! আমাকে যদি আমার ‘আমালনামা না দেয়া হতো, আর আমার হিসাব কী তা যদি আমি না-ই জানতাম, হায়! (দুনিয়ার) মৃত্যুই যদি আমার শেষ হতো! ছূরা হাক্কা আয়াত ২৫-২৭।
আলোচনাঃ অপরাধি মানুষ কিয়ামতে আফসোস করে বলবে যে, আমার মৃত্যুই যদি আমার শেষ হয়ে যেতো। (যারা বলে কবরে শাস্তি আছে তাদের ভাষায় বলি) মৃত্যু শেষ হওয়া অর্থাৎ তাকে যদি কবর থেকে আর না উঠানো হতো তাহলে সে শান্তিতে বেচে যেতো। এতেই বুঝা যায় যে, তার কবরে থাকাটা তার জন্য ভালই ছিলো। সে কবরে আযাবের মধ্যে থাকলে তো সে ভালো থাকতো না, কবরে আযাব থাকলে তার এমন মন্তব্য করার সুযোগও থাকতো না। কারণ, কবরেও শাস্তি এবং জাহান্নামেও শাস্তি, তাহলে সে কেনো বলবে যে, আমার মৃরত্যুই যদি শেষ হতো? এতেই বোঝা যায় যে, কবরে তার কোনো শাস্তিই ছিলো না তাই কিয়ামতে সে ঐ মন্তব্য পেশ করবে।
(২২) এই একটি মাত্র যুক্তি দ্বারাই প্রমাণ হয় যে, কবরে কোনো শাস্তি নাই।
[৭৮:৪০] (আল্লাহ বলেন) আমি তোমাদেরকে আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম; সেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম প্রত্যক্ষ করবে যা তার দু’হাত আগেই পাঠিয়েছে এবং কাফির বলতে থাকবেঃ হায়রে হতভাগা আমি! আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম!
আলোচনাঃ এই আয়াতে বলা হয়েছে “আমি তোমাদেরকে আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম সেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম প্রত্যক্ষ করবে যা তার দু’হাত আগেই পাঠিয়েছে”। এই আসন্ন শাস্তি কোনটি কবরে নাকি পরকালের শাস্তি। তাহলে কবর আযাব সম্পর্কে না বলে আল্লাহ কেনো সরাসরি পরকালের আসন্ন শাস্তির কথা বললেন? এর কারণ, কবরে কোনো শাস্তি নাই তাই কবর না বলে আল্লাহ সরাসরি পরকালের আসন্ন শাস্তির কথা বলেছেন।
(২৩) এই কথায় কি প্রমাণ হয় না যে, কবরে কোনো শাস্তি নাই?
এই আয়াতের আরও একটি বিষয় হলো, এই আয়াতটিও ৬৯:২৫-২৭ এর আয়াতের মতো, অর্থাৎ “কাফির ব্যক্তি বলতে থাকবেঃ হায়রে হতভাগা আমি! আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম!” কেনো কাফের ব্যক্তি মাটি হতে চাইবে? কবরে যদি শাস্তি হতো তাহলে সেতো কবরের আযাবের ভয়ে তখনও বলতো যে, “যদি আমি মাটি হয়ে যেতাম” কিন্তু কবরে মৃতো ব্যক্তি কি ঐরূপ মন্তব্য করেছেন? করেননি। যদি করতেন তাহলে আল্লাহ সে কথাও আমাদেরকে জানিয়ে দিতেন যেরুপ জানিয়েছেন ৭৮:৪০ আয়াতে।
(২৪) এই যুক্তি দ্বারাও প্রমাণ হয় যে, কবরে কোনো সাস্তি নাই।
পুনরায় দুনিয়াতে পাঠাও
[২৩:৯৯] (আল্লাহ বলেন) এমনকি যখন তাদের কারো কাছে মৃত্যু এসে হাজির হয় তখন সে বলে : ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আবার প্রেরণ করো। ছূরা মু’মিনূন আয়াত ৯৯।
আলোচনঃ এখন আল্লাহকে কেউ রব/ প্রতিপালক বলে না কিন্তু তখন ঠিকই বলবে। লক্ষ্য করুন! মৃত্যুর সময় দুনিয়াতে পাঠাতে বলবে। কবরের আযাব শুরু হলে দুনিয়াতে পঠাতে বলবে না। কারণ, মানুষ বিচার দিবস, জাহান্নাম ও ফেরেস্তার কথা শুনলেও তা বাস্তবে কোনোদিন চোখে দেখেনি এবং অনেকে বিশ্বাসও করে না। কিন্তু মৃত্যুর সময় যখনই সে জান কবজকারী ফেরেস্তাগণকে দেখবে তখনই সে মনে করবে যে সবই তো সত্য। তাই আত্মা বের হওয়ার আগেই সে বলে উঠবে আমাকে আরও কিছুকাল সময় দাও সৎকর্ম করবো যা আমি আগে করেনি। যেমন আল্লাহ বলেন-
[৬৩:১০] আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় করো, অন্যথায় সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। ছূরা মুনাফিক্বূন আয়াত ১০।
আলোচনঃ মৃত্যুর সময় পুনরায় পৃথিবীতে পাঠাতে বলবে। কিন্তু কবরে শাস্তি থাকলে তো সেই শাস্তি দেখেই মৃতো ব্যক্তির বলার কথা ছিলো যে, আমাকে পুনরায় পৃথিবীতে পাঠাও।
(২৫) এই যুক্তি দ্বারাও প্রমাণ হয় যে, কবরে শাস্তি নাই তাই সে কবরের আযাবের সময় পৃথিবীতে পাঠাতেও বলবে না। যদি বলতেন তাহলে আল্লাহ তা আমাদেরকে জানিয়ে দিতেন।
(২৭) এই একটি মাত্র যুক্তি দ্বারাই প্রমাণ হয় যে, কবরে কোনো আযাব নাই এবং কবরে কোনো প্রশ্নও নাই।
শাস্তি কবরে নয়, দহন-যন্ত্রণার শাস্তি কিয়ামতে
[২২:৭-১০] (আল্লাহ বলেন) (কিয়ামতের দিন আমি তাকে দহন-যন্ত্রণা ভোগ করাবো)। ছূরা হজ্জ আয়াত ৭-১০।
আলোচনাঃ আল্লাহর কথায় কি প্রমাণ হলো? শাস্তি কি কিয়ামতের বিচারের পরে নাকি বিচারের আগে? কিয়ামতের আগে বা কবরে কোনো শাস্তির কথা আল্লাহ কুরআনে বলছেন কি?
(২৮) আল্লাহর এই কথা দ্বারা কি প্রমাণ হয় না যে, শাস্তি কবরে নয়, শাস্তি কিয়ামতে?
সেদিনই শাস্তি দেয়া হবে
[৪৬:২০] (আল্লাহ বলেন) (সেদিন জাহান্নামের কাছে নিয়ে বলাহবে আজ তোমাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে)- ছূরা আহকাফ আয়াত ২০।
আলোচনঃ লক্ষ্য করুন! এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে, “আজ তোমাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে”। যেসমস্ত ক্বুরআন অস্বীকারকারীরা বলে যে, কবরে শাস্তি দেয়া হয় তাদের কাছে প্রশ্নঃ আজ শাস্তি দিলে কবরে হাজার হাজার বছর কি দেয়া হয়েছে? এই আয়াতের “আজ” শব্দটি লক্ষ্য করুন! আল্লাহ কিয়ামতের দিন কাফেরদেরকে বলবেন যে, “”আজ তোমাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে””। কাজেই শাস্তি সেদিনই দেয়া হবে, সেদিন আসার আগে কবরে কোনো শাস্তির কথা আল্লাহ বলেননি। যারা বলে কবরে শাস্তি দেয়া হয় তারা আল্লাহর এই কথা বিশ্বাস করে না। যারা বলে কবরে শাস্তি দেয়া হয় তাদের কথার অর্থ দ্বাড়ায় তারা আল্লাহর চেয়েও বেশি জানে। (মা’আজাল্লাহ)।
(২৯) এই একটি মাত্র আয়াত দ্বারাই প্রমাণ হয় যে, কবরে কোনো শাস্তি নাই। জাহান্নামের কাছে নিয়েই শাস্তির কথা বলা হবে।
[৬৯:৩০-৩১] (আল্লাহ বলেন) (তখন নির্দেশ আসবে) ধর ওকে, ওর গলায় ফাঁস লাগিয়ে দাও/ বেড়ি পড়িয়ে দাও, অতঃপর তাকে নিক্ষেপ করো জাহান্নামে। ছূরা হাক্কা আয়াত ৩০-৩১।
[৬৯:৩২] (পুনরায়) ওকে শিকল দিয়ে বাঁধো- সত্তর হাত দীর্ঘ এক শিকলে। ছূরা হাক্কা আয়াত ৩২।
আলোচনাঃ কবরে দুই পাশের মাটি দ্বারা চাপ দিয়ে শাস্তি নয়, সাপ-বিচ্ছুর কামর দ্বারা শাস্তি নয়, হাতুরী দ্বারা পিটিয়ে শাস্তি নয়, সত্তর হাত দীর্ঘ এক শিকলে বেধে গলায় বেড়ি পড়িয়ে সেদিনই শাস্তি দেয়া হবে যেদিনের ওয়াদা আল্লাহ করেছেন।
(৩০) এই আয়াত দ্বারাও প্রমাণ হয় যে, কবরে কোনো শাস্তি নাই, শাস্তি পরকালে।
[৪৬:৩৪] (সেদিন) আল্লাহ বলবেন শাস্তি ভোগ করো- ছূরা আহকাফ আয়াত ৩৪।
আলোচনঃ আল্লাহ কোন দিন শাস্তি ভোগ করতে বলবেন? কবরে নাকি কিয়ামতে?
(৩১) এই আয়াত দ্বারাও কি প্রমাণ হয় না যে, কবরে শাস্তি ভোগ করার কথা আল্লাহ বলেন নাই?
[৫১:১৩-১৪] সেদিন তারা অগ্নিতে পতিত হবে- (বলাহবে) তোমরা শাস্তি ভোগ করো। ছূরা জারিয়াত আয়াত-১৩-১৪।
আলোচনাঃ সেদিন আল্লাহ বলবেন, তোমরা শাস্তি ভোগ করো। আল্লাহ কোন দিন শাস্তি ভোগ করতে বলবেন কবরে নাকি কিয়ামতের বিচারের দিনে?
(৩২) এই একটি মাত্র আয়াত দ্বারাই প্রমাণ হয় যে, কবরে কোনো শাস্তি নাই।
[৫২:১৩] (আল্লাহ বলেন) সেদিন ধাক্কা মেরে মেরে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। ছূরা তূর আয়াত ১৩।
আলোচনঃ লক্ষ্য করেছেন কি? সেদিনই ধাক্কাইতে ধাক্কাইতে জাহান্নামের দিকে নেয়া হবে। বার বার বলা হয়েছে সেদিনের শাস্তির কথা। কবরে শাস্তির কথা আল্লাহ একবারও বলেছেন কি?
(৩৩) এই একটি মাত্র আয়াত ও যুক্তি দ্বারাই প্রমাণ হয় যে, কবরে কোনো শাস্তি নাই।
অনেকেই বলে শাস্তি ৪ জায়গায়
কবরের শাস্তি প্রমাণ করার জন্য অনেকেই ছূরা তাওবার ১০১ নং আয়াত দেখিয়ে বলে থাকে যে, মৃত্যু যন্ত্রনা ও কবর আযাবসহ চারবার শাস্তির কথা ক্বুরআনে বলা হয়েছে। অর্থাৎ একবার পৃথিবীতে শাস্তি, একবার মৃত্যু যন্ত্রনার শাস্তি, একবার কবরে শাস্তি এবং পরে জাহান্নামে শাস্তি। তাদের এই যুক্তি এখনই মিথ্যা প্রমাণীত হয়ে যাবে।
কারণ, আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষকে অসংখ্যবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলচ্ছাস, ভূমিকম্প, ঝড়-তুফান ও বিভিন্ন ক্ষয়-ক্ষতি দ্বারা বিভন্ন সময় বিভিন্নরকম শাস্তি দিয়ে থাকেন। এই শাস্তি আল্লাহ কাউকে একবার, আবার কাউকে দুইবার, আবার কাউকে তিনবার ও তার চেয়েও বেশি দিয়ে থাকেন যাকে বলা হয়েছে দুনিয়ার শাস্তি। তারপর মুনাফেকদের মৃত্যুর সময় একটা শাস্তি আছে যে শাস্তিকে আল্লাহ ক্বুরআনের ভাষায় “ছাকরাতাল মাঊত” বা মৃত্যুযন্ত্রনা বলেছেন তবে তা অল্প কিছুক্ষনের জন্য- ৫০:১৯। তারপর চুরান্ত শাস্তি আখেরাতে। কাজেই ছূরা তাওবার ১০১ নং আয়াতের দুইবার শাস্তি তা পৃথিবীতেই অর্থাৎ মানুষ জীবিতো থাকা অবস্থায় দুনিয়ার শাস্তি এবং জীবিত থাকা অবস্থায় মৃত্যুর সময় মৃত্যু যন্ত্রনার শাস্তি হবে, তা কবরে নয়। কারণ, কবরে মানুষ জীবিত থাকে না। আল্লাহ রছূলকে বললেন-
[৯:১০১] আর কিছু তোমার আশ-পাশের মুনাফেক এবং কিছু লোক মদীনাবাসী কঠোর মুনাফেকীতে অনঢ়। তুমি তাদের জানো না; আমি তাদের জানি। আমি তাদেরকে আযাব দান করবো দুবার, তারপর তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হবে কঠিন আযাবের দিকে। ছূরা তাওবা আয়াত ১০১।
আলোচনাঃ এই আয়াতে আল্লাহ পৃথিবীর সকল অপরাধীর কথা বলেননি। কিছু মুনাফেক ও কিছু মদীনাবাসীকে নির্দিষ্ট করে বলেছেন যে, তাদেরকে আল্লাহ জানেন এবং তাদেরকে দুবার শাস্তি দিবেন। এই দুবার শাস্তি পৃথিবীতে গজব ও মৃত্যুর সময় মৃত্যুযন্ত্রনায় পতিত হবে যে সময়গুলোতে রছূল ও রছূলের সঙ্গি-সাথীরা সুখে দিন কাটাবে, এবং রছূল ও রছূলের সঙ্গি-সাথীদের মৃত্যুর সময় তাদেরকে ছালাম সহকারে শান্তিতে মৃত্যু ঘটানো হবে- ১৬:৩২। এই আয়াতের আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এই আয়াতে শাস্তির ব্যপারে আল্লাহ “কবর” শব্দ উল্লেখ করেননি। শাস্তির ব্যপারে অনুমান ও নির্দিষ্ট করে সরাসরি “কবর” শব্দ উল্লেখ করা মোটেই ঠিক না। পৃথিবীর শাস্তি দুইবার যথা গজব ও মৃত্যুযন্ত্রনা। কিছুক্ষনের জন্য মৃত্যু যন্ত্রনার শাস্তি ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদি শাস্তি দুই জায়গায় যথা পৃথিবীতে ও আখেরাতে, কবরে কোনো শাস্তির কথা আল্লাহ ক্বুরআনে বলেননি।
মৃত্যু যন্ত্রনার শাস্তি ছাড়া শাস্তি দুই সময় দুনিয়া ও আখিরাতে
[৩:৫৬] (আল্লাহ বলেন) অতঃপর যারা অবিশ্বাসী, তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কঠোর শাস্তি দেবো এবং কেউই তাদের সাহায্যকারী নেই। ছূরা আল ইমরান আয়াত ৫৬।
[৯:৭৪]…আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে ভয়াবহ শাস্তি দিবেন…। ছূরা তাওবা আয়াত ৭৪।
আলোচনাঃ উপোরক্ত দুটি আয়াতে পৃথিবীতে ও আখেরাতে শাস্তি দেয়ার কথা আল্লাহ বলেছেন। এখানে কবরের শাস্তির কথা বলা হয়নি। ছূরা তাওবার ১০১ আয়াতে যদি পৃথিবীর দুইবার শাস্তির একটি কবরের শাস্তি হয় তাহলে উপোরক্ত আয়াতে আল্লাহ কবর বাদ দিয়ে কেনো দুনিয়া ও আখেরাতের শাস্তির কথা বললেন? অর্থাৎ আল্লাহ কবর আযাব বলেননি কেনো?
(৩৩) এই একটি মাত্র যুক্তি দ্বারাই প্রমাণ হয় যে, কবরে কোনো শাস্তি নাই।
আল্লাহ আরও স্পষ্ট করে কি বলে দেখুন!
[১৩:৩৪] (আল্লাহ বললেন) তাদের জন্যই রয়েছে দুনিয়ার জীবনে আযাব, আর আখিরাতের আযাব তো আরো কঠিন। আল্লাহর আযাব থেকে তাদের কোনো রক্ষাকারী নেই। ছূরা র’দ আয়াত ৩৪।
আলোচনাঃ লক্ষ্য করুন “দুনিয়ার জীবনে আযাব”। অর্থাৎ এই আয়াতে আল্লাহ “হায়াতিদ দুন’ইয়া” অর্থঃ “দুনিয়ার জীবনে” বলেছেন। “হায়াত” অর্থ জীবন। হায়াত বা জীবন না থাকলে আযাব কাকে দেয়া হবে? মানুষের জন্য মৃত্যু কোনো জীবন নয়। শাস্তি দিতে হলে তার জীবন থাকতে হবে। তাই আল্লাহ দুনিয়ার জিবনে ও আখেরাতের জীবনে শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন। আল ক্বুরআনে উপোরক্ত আয়াতগুলোর মতো এরকম আরও বহু আয়াত আছে। আযাব সম্পর্কিত প্রতিটি আয়াতেই বলা হয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের আযাব। উপোরক্ত আয়াতে প্রমাণ হলো যে, শাস্তি দুই জায়গায়, অর্থাৎ দুনিয়ার জীবনে লাঞ্চনা, হিনতা, অপমান, বিভিন্ন গজব ও মৃত্যু যন্ত্রনার দ্বারা দুনিয়ার শাস্তি। এবং পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি। দুনিয়ার জীবনে, কবরের জীবনে ও আখিরাতের জীবনে অর্থাৎ এইরকম তিন জায়গায় শাস্তি দেয়ার কথা আল্লাহ ক্বুরআনে একবারও বলেননি? কবরে শাস্তি থাকলে আল্লাহ তিন সময় শাস্তির কথা বলতেন। আল্লাহ কি পৃথিবীতে, কবরে ও পরকালে অর্থাৎ তিন জায়গায় শাস্তির কথা বলেছেন? বলেননি।
(৩৪) এই একটি মাত্র প্রমাণ দ্বারাই প্রমাণ হয় যে, কবরে কোনো শাস্তি নাই।
আপনি হয়তো বলতে পারেন যে, দুনিয়ার শাস্তিই হচ্ছে দুনিয়া ও কবরের শাস্তি, যেহেতু কবর তো এই দুনিয়াতেই, কিন্তু আপনার এই যুক্তি কুরআন দ্বারা টেকে না। কারণ মৃত্যু হবার আগ পর্যন্ত পৃথিবীর শাস্তির কথা আল্লাহ সরাসরি বলেছেন। দেখুন আল্লাহ কি বলেন?
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পৃথিবীতে শাস্তি
[৯:৫৫] (আল্লাহ রছূলকে বলেছেন) কাজেই তাদের ধন-সম্পত্তি আর সন্তান-সন্ততি যেনো তোমার চোখ ধাঁধিয়ে না দেয়, ওসব দিয়েই আল্লাহ দুনিয়াতে ওদেরকে শাস্তি দিতে চান আর কাফির অবস্থাতেই যেনো তাদের জান বাহির হয়। ছূরা তাওবা আয়াত ৫৫। অনুবাদঃ তাইছিরুল ক্বুরআন।
[৯:৮৫] (আল্লাহ রছূলকে বলেছেন) আর তোমাকে যেন মুগ্ধ না করে তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি, আল্লাহ এর দ্বারা কেবল তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে আযাব দিতে চান এবং তাদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত যেনো তারা কাফেরই থাকে। ছূরা তাওবা আয়াত ৮৫।
আলোচনাঃ আল্লাহ বললেন যে, মৃত্যু পর্যন্ত দুনিয়ার জীবনে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে। এই শাস্তি দিনিয়ায় এবং মৃত্যু যন্ত্রনার শাস্তি। আল্লাহ কি মৃত্যুর পরে কবরের জীবনে শাস্তির কথা বলেছেন? বলেননি।
(৩৫) এই যুক্তি দ্বারাও প্রমাণ হয় যে, কবরে কোনো শাস্তি নাই।
পৃথিবীর শাস্তি
[১৬:২৬] (আল্লাহ বলেন) তাদের পূর্ববর্তীরাও চক্রান্ত করেছিল। আল্লাহ তাদের ইমারাতের ভিত্তিমূলে আঘাত করেছিলেন; ফলে ইমারাতের ছাদ তাদের উপর ধ্বসে পড়ল এবং তাদের প্রতি শাস্তি নেমে এলো এমন দিক হতে যা ছিল তাদের ধারনার বাহির। ছূরা নাহল আয়াত ২৬।
আলোচনাঃ দেখলেন তো? আল্লাহ দুনিয়ায় শাস্তির কথা বলেছেন। কবর আযাবের ভয়াবহতা নিয়ে যতো কথা শোনা যায় তা যদি সত্য হয় তাহলে আল্লাহ কি তা একবারও বলতেন না? যেমন, প্রশ্ন করা হবে দুই সময়, শাস্তিও দুই সময়, ঠিক তেমনি পুরষ্কারও দুই সময়।
দুইবার পুরষ্কার
[২৮:৫৪] (আল্লাহ বলেন) তাদের ছবুরের কারণে তারা দুইবার পুরস্কৃত হবে। তারা ভালো দ্বারা মন্দকে প্রতিহত করে। আর আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। ছূরা ক্বাছাছ আয়াত ৫৪। (লক্ষ্য করুন! দুইবার পুরষ্কার)।
[১৬:৪১] যারা অত্যাচারিত হওয়ার পর আল্লাহর পথে হিজরাত করেছে আমি অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়ায় উত্তম আবাস প্রদান করবো এবং আখিরাতের পুরষ্কারইতো শ্রেষ্ঠ। হায়! তারা যদি তা জানতো! ছূরা নাহল আয়াত ৪১। (লক্ষ্য করুন! দুইবার পুরষ্কার)।
[১৬:৩০] (আল্লাহ বলেন)…যারা সৎকাজ করে তাদের জন্য রয়েছে এই দুনিয়ার মঙ্গল এবং আখিরাতের আবাস আরও উৎকৃষ্ট…। ছূরা নাহল আয়াত ৩০। অনুবাদঃ মুজিবুর রহমান। (লক্ষ্য করুন! দুইবার পুরষ্কার)।
আলোচনাঃ আল্লাহ সরাসরি সুস্পষ্ট করে বলেদিলেন যে, দুইবার পুরষ্কার, দুনিয়া ও আখেরাতে। কবরে যদি শাস্তি ও শান্তি দুটোই থাকতো তাহলে এই আয়াতে আল্লাহ দুইবার পুরষ্কারের কথা বলতেন না। তাহলে আল্লাহ বলতেন যে, যারা সৎকর্ম করবে তাদের জন্য তিন জায়গায় পুরষ্কার রয়েছে। কিন্তু আল্লাহ কি তিন জায়গায় পুরষ্কারের কথা বলেছেন?
(৩৬) এই একটি মাত্র আয়াত দ্বারাই প্রমাণ হয় যে, কবরে কোনো শাস্তি নাই।
ক্বুরআনে এইরকম আরও অনেক আয়াত আছে যেখানে দুইবার শাস্তি, দুইবার পুরষ্কার ও দুইবার প্রশ্নের কথা বলা হয়েছে। তদ্রুপ মানুষ দুনিয়া চায় ও আখেরাতও চায়, কিন্তু কেউই কবরের শান্তি চায় না, চায় না কবরের আযাব থেকে মুক্তিও।
দুনিয়া ও আখেরাত চায়, কবরে শান্তি চায় না
[৩:১৪৫] (আল্লাহ বলেন) আর আল্লাহর আদেশে লিপিবদ্ধ নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত কেহই মৃত্যুমুখে পতিত হয়না; এবং যে কেহ ইহলোকের প্রতিদান কামনা করে, আমি তাকে তা দুনিয়ায় প্রদান করে থাকি; পক্ষান্তরে যে লোক আখিরাতে বিনিময় কামনা করে আমি তাকে তা প্রদান করবো, এবং আমি কৃতজ্ঞগণকে অচিরেই পুরস্কার প্রদান করবো। আল ইমরান আয়াত ১৪৫।
[৩:১৫২] (আল্লাহ বলেন)…তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা পার্থিব বস্তু কামনা করে এবং কিছু লোক পরকাল পছন্দ করে…। ছূরা আল ইমরান আয়াত ১৫২।
(৩৭) মানুষ দুনিয়া ও পরকাল চায়, কেউই কবর আযাব থেকে মুক্তি চায় না। এই যুক্তি দ্বারা প্রমাণ হয় যে, কবরে কোনো আযাব নাই তাই মানুষ কবর আযাব থেকে মুক্তিও চায় না।
প্রশ্ন যেমন দুই জায়গায়, তেমন শাস্তিও দুই জায়গায়, পুরষ্কার দুই জায়গায়, মানুষ চায়ও দুটি স্থান যথা দুনিয়া ও আখেরাত, তদ্রুপ আমল বা কর্ম নষ্টও হবে দুই জায়গায়।