“হে ঈমাণদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ,(৪ঃ৪৩)
يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنوا لا تَقرَبُوا الصَّلوٰةَ وَأَنتُم سُكٰرىٰ حَتّىٰ تَعلَموا ما تَقولونَ
ইয়া আইয়ূহাল্লাযিনা আমানু লা তাক্বরাবুউ স সালাওয়াতা ওয়া আনতুম সুকারা হাত্তা তা’আলা মুৃমা তাক্বুলুনা।
ইয়া আইয়ূহাল্লাযিনা আমানু — হে ঈমানদারগণ!
লা তাক্বরাবুউ স সালাওয়াতা- তোমরা কাছে যেও না সলাতের।
ওয়া আনতুম সুকারা– যখন তোমরা নেশাগ্রস্থ থাকব।
হাত্তা তা’আলামুৃ – যতক্ষন না তোমরা বুঝতে পার
মা তাক্বুলুনা — যা তোমরা বলছো।
নেশা কি ? যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন তাদের মাথায় বিভিন্ন রকম চিন্তা-ভাবনা আসে। এটাই নেশা আর সালাতে যে সূরা গুলো পড়ে তাও তারা বোঝে না।
সাধারন ভাবে আমরা নেশা বলতে প্রথমেই বুঝি মদ পান। তার সাথে গাজা, ভাং, আফিম এমনকি তামাক জাত দ্রব্য সেবন। যা গ্রহন করলে সাময়িক ভাবে মানুষের স্মৃতি লোপ পায়, হিতাহিত জ্ঞান শুন্য হয় বা মস্তিষ্কের সাময়িক বিকৃতি ঘটে।
এ ছাড়া কিছু কাজকেও কিন্তু আমরা নেশা বলি। যা হল এডিকশন বা আসিক্তি। আর এ জাতীয় নেশা গুলি উপরোক্ত নেশার চেয় ক্ষতিকর এবং সাময়িক নয় বরং দীর্ঘ সময়ের আসক্তির ফসল। যেমনঃ আমরা বলে থাকি সংসারের নেশা, টাকার নেশা, নারীর নেশা, খেলার নেশা, ইত্যাদী ইত্যাদী। তার মধ্যে পৃথিবী এবং সংসার জগতের নেশা সবচেয়ে বড় নিশা। পার্থিব্য এ নেশায় পাপ জেনেও মানুষ অনেক অসৎ কাজ করে বসে। এ ধরনের নেশা গুলোর চালিত শক্তি ইবলিশ। সংসার,নারী, টাকাকড়ি, এসব পার্থিব্য নেশার কারনেই মানুষ খুন,যখম, যেনা,হত্যা,রাহাজানি,প্রতারনা,সুদ,ঘুষ,এমন কি মিরাস থেকে বঞ্চিত করার মত জুলুম ও পাপাচারে লিপ্ত হয়। একজন মানুষের যখন এই পার্থিব্য জীবনের কোন নেশা না থাকে সে তখন নফসে মুত্তামাইনের আজ্ঞা বাহী হয়ে চলে। শয়তান তাকে আর ধোকায় ফেলিয়ে কোন পাপাচারে লিপ্ত করতে পারে না। সংসার জগতের এই পার্থিব্য নেশা একটি বড় নেশা।
যার প্রভাবে আমরা যখন সালাতে দাড়াই, তখন পার্থিব্য নেশাগ্রস্থতা থেকে মুক্ত হতে না পাড়ায় নামাজে দাড়িয়েও আমরা ভুলে যাই কি বলছি, এমন কি কয় রাকাত পড়ছি সেটাও মনে রাখতে পারি না অনেক সময়। দোয়া কুনুত পড়তে গিয়ে একই লাইন বার বার পড়ি, পরের লাইন বলতে পাড়ি না আর । মেয়েটা স্কুল থেকে আসতে পারলো কি না, অফিসের পেন্ডিং কাজটা কাল কখন করবো, এ মাসের আর কি বাজার বাকি,গ্যাস বিল দেয়া হয়নি, ইত্যাদি ইত্যাদি পার্থিব্য নেশা আমাদের ভুলিয়ে দেয় — সালাতে দাঁড়িয়ে কি বলছি, আর কি বলার বাকি। মদ্য পান করে নেশা গ্রস্থতার চেয়ে ব্রেইনে শয়তান কর্তৃক নেশার উদ্রেক সৃষ্টি করে আল্লাহর স্মরনকেও ভুলিয়ে দেয় বড় নেশা গ্রস্থতা।
তাই আল্লাহ বলেন তোমরা সালাতের কাছে এসো না, যখন তোমরা এমন নেশায় আক্রান্ত হয়ে থাক, কারন তখন কি বল কি চাও তা তোমরা নিজেও বুঝ না।
লা তাক্বরাবুউ স সালাওয়াতা- তোমরা কাছে যেও না সলাতের।
ওয়া আনতুম সুকারা– যখন তোমরা নেশাগ্রস্থ থাকব।
হাত্তা তা’আলামুৃ – যতক্ষন না তোমরা বুঝতে পার
মা তাক্বুলুনা — যা তোমরা বলছো।
কিন্তু আমরা এ আয়াতের অর্থ বুঝে থাকিঃ হে ঈমাণদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ,।
বাংলা এমন অনুবাদ থেকে মনে প্রশ্ন জাগে- মদ নামাজের সময় ছাড়া খেতে আল্লাহ নিষেধ করেন নাই। এমন প্রশ্নে আমাদের আলেম সম্প্রদায় বলেনঃ এ আয়াত কে রহিত করে পরবর্তি আয়াত নাযিল করে মদ,জুয়া,বাজি কে আল্লাহ সম্পুর্ণ রুপে হারাম করেছেন। এমন মোটা ভাবনার বক্তব্য শোনে নাস্তিকদের প্রশ্ন রাখার সুযোগ সৃষ্টি হয় । নাস্তিক স্কলাররা তখন বলে যে আয়াতটি রদ বা বাতিল করা হয়েছে তা আবার কোরানে স্থান পায় কেমনে?
আবার কিছু ওয়াজিনরা বলে থাকেন হযরত আলী রাঃ একদিন মদ খেয়ে নামাজে সুরা কাফেরুন পড়তে গিয়ে উল্টা পাল্টা বলা শুরু করলে, তখন তাঁকে উদ্দেশ্য করে এ আয়াত নাযিল হয়েছিল। কত বড় ভ্রান্ত আকীদা নিয়ে এমন বলতে পারে।
মুলত (৪ঃ৮০) আয়াতটি মুনসুখ করাও হয় নি এবং মদ পান ধীরে ধীরে নিষেধের জন্য এ আয়াত দূই স্তরে নাযিল করাও হয় নি।
প্রকৃত কথা এখানে পার্থিব্য নেশার মোহ নিয়ে সালাতে দাড়ানো আল্লাহর নিকট পছন্দীয় নয়। আল্লাহ সে উদ্দেশ্যে এ আয়াতটি নাযিল করেছেন।
আমার প্রজ্ঞা থেকে আমি এতটুকু বুঝি মাত্র। বাকি আল্লাহ পাক ভাল জানেন এবং তাঁর রাসুল, যার নিকট এ মহাগ্রন্থ নাযিল করা হয়েছে।
আমাদেরকে খুব সীমিত জ্ঞানদান করা হয়েছে। (ইসরাঃ৮৫)।
One reply on “তোমরা নেশা গ্রস্থ অবস্থায় সালাতের কাছেও যেও নাঃ”
Thank