ধর্ম এবং রাজনীতি হলো কোন রাষ্ট্রের প্রধান দু’টি দর্শনগত অবকাঠামো, যার উপর নির্ভর করে কল্যাণ রাষ্ট্র এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রর ভিত্তি তৈরী হয়।
ধর্মের দুইটি রুপ রয়েছে। এক ঐশীতন্ত্র দুই মোল্লাতন্ত্র। ঐশীতন্ত্রের মুল বিষয় হলো ঐশী ইচ্ছা, অর্থাৎ ধর্মের এই ধরণে মানুষ চালিত হয় স্রষ্টার ইচ্ছার কাছে নিজের ইচ্ছা আত্মসমর্পণ করার মধ্য দিয়ে।
অন্যদিকে, মোল্লাতন্ত্রের সার হলো কতিপয় মোল্লা পুরোহিত পাদ্রীর ইচ্ছা। এখানে কতিপয় মোল্লারা সকল ধর্মাবলম্বীদের ইচ্ছা স্বপ্ন কল্পনা আশা ভয় হতাশা যৌনতা এমনকি মানবীয় প্রায় সকল অনুভূতিগুলোর একটা নির্দিষ্ট ছক এঁকে দেয়। এই ছকটা আঁকে মূলত তাদের স্বার্থ রক্ষার তাগিদে। স্বার্থের উপর নির্ভর করে পাক কিতাবগুলোকে তারা নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করে। আর এই ব্যাখ্যাকে পাক কিতাব বলে সাধারণ ধর্মাবলম্বীদের উপর চাপিয়ে দেয়।
এবার আসি রাজনীতির বিষয়ে। রাজনীতিরও মোটাদাগে দু’টি ধরণ রয়েছে: এক গনতন্ত্র/খলিফাতন্ত্র দুই স্বৈরতন্ত্র/জাহেলিয়াত।
গনতন্ত্র/খলিফাতন্ত্রের মূল স্পিরিট হলো সকল মানুষই পরমের খলিফা বা প্রতিনিধি। তারা নিজেদের স্বাধীন ইচ্ছার মাধ্যমে নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে বা একটা দলকে রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য নির্বাচিত করে।
আর স্বৈরতন্ত্রের মূল স্পিরিট হলো একজনই কেবল পরমের প্রতিনিধি, বাদবাকি সকল মানুষ তার দাস বা গোলাম।
এই তন্ত্রে যেহেতু অধিকাংশ মানুষের খলিফাত্বকে অস্বীকার করা হয়, তাই এই তন্ত্রে মানুষের বাক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং স্বাধীন ইচ্ছা শক্তিকেও নাকচ করা হয়। ফলে ঐ একজন শাসক তার ইচ্ছা স্বপ্ন কল্পনা আশা ভয় সবকিছু সাধারণ জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়। সে কয়েকটা ছকে মানুষকে বিভাজিত করে মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। এখানে একমাত্র শাসকই স্বাধীন, বাদবাকি সবাই পরাধীন।
স্বৈরতন্ত্রের সাথে মোল্লাতন্ত্রের সারগত জায়গা থেকে সাদৃশ্য আছে বিধায় তারা নিজেদের মধ্যে ধর্ম এবং রাজনীতির মৈত্রী স্থাপন করে মানুষের ইহকাল এবং পরকাল নিয়ন্ত্রণ করে। রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বৈরতন্ত্র বাই নেচার মোল্লাতন্ত্রের সাথে আঁতাত করবে, একই সাথে মোল্লাতন্ত্র তার ব্যবসা এবং কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে বাই নেচার রাষ্ট্র ক্ষমতায় সবসময় স্বৈরতন্ত্রের সহযোগী হবে।
এই ধরণের রাষ্ট্র কাঠামোকে বলা হয় ব্যর্থ রাষ্ট্র বা জুলুমের হাতিয়ার রাষ্ট্র। অন্যদিকে কল্যাণ রাষ্ট্র তৈরী করতে হলে ঐশীতন্ত্রের সাথে গনতন্ত্র বা খলিফাতন্ত্রের মৈত্রী তৈরী করতে হয়। যারা কল্যাণ রাষ্ট্র তৈরী করতে চান, তাদেরকে অবশ্যই একই সাথে মোল্লাতন্ত্র এবং স্বৈরতন্ত্রের বিরোধিতা করতে হবে, নতুবা একটা বিরোধিতা করে অন্যটায় চুপ থাকলে, এই বিরোধিতা আদতে কোন ফল দেয় না।
আবার শুধু বিরোধিতাতেও কোন কাজ হয় না, যদি নিজে আধ্যাত্মিক ভাবে খোদার খলিফা হয়ে না উঠা যায়।
একজন সত্যিকার ইনসানে কামেলকে এই বহুমুখী সংগ্রামের মধ্য দিয়েই হয়ে উঠতে হয় এবং বহুমুখী সংগ্রামের মধ্য দিয়েই তৈরী করতে হয় মদীনা রাষ্ট্র।