❤দ্বীনের ক্ষেত্রে তিন পন্থীরা বা তিন পন্থী পীরপন্থীরা শেরেকে গণ্য❤
এখানে উল্লেখ্য যে, আল্লাহ বলেন, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রসূলের আনুগত্য কর এবং উলিল আমরগণের আনুগত্য কর (নেসা, ৫৯ আয়াত)। এই আয়াতের মধ্যে দুই ধরনের আনুগত্যের কথা বলা হয়েছে। (১) একটি হচ্ছে দ্বীনের ক্ষেত্রে আনুগত্য করা, (২) অপরটি হচ্ছে দুনিয়াবী ক্ষেত্রে আনুগত্য করা। এখন আমাদের জানতে হবে, দ্বীনের ক্ষেত্রে আনুগত্য কাকে বলে আর দুনিয়াবী ক্ষেত্রে আনুগত্য কাকে বলে। অর্থাৎ দ্বীনের ক্ষেত্রে আনুগত্য আর দুনিয়াবী ক্ষেত্রে আনুগত্যের পার্থক্য কী? যে আনুগত্য আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে সে আনুগত্যটা দ্বীনের আনুগত্য। কারণ দ্বীনের বিষয়ে সকল কিছু আল্লাহ পাবে (জুমার, ৩ আয়াত) আর যে আনুগত্য দুনিয়াবী শৃঙ্খলা ও শান্তি রক্ষার জন্য করা, সে আনুগত্য দুনিয়াবী আনুগত্য। যেহেতু রসূলের আনুগত্য করলে আল্লাহর আনুগত্য করা হয় (নেছা, ৮০ আয়াত) সেহেতু রসূলের আনুগত্য দ্বীনের আনুগত্যে গণ্য। পক্ষান্তরে উলিল আমরগণের আনুগত্য করলে সে আনুগত্য আল্লাহর হবে কিংবা রসূলের হবে এমন কোনো আয়াত নেই বিধায় উলিল আমরগণের আনুগত্য দ্বীনের আনুগত্যে গণ্য হচ্ছে না। শুধু দুনিয়াবী শৃঙ্খলা ও শান্তি রক্ষার উদ্দেশ্যে উলিল আমর গণের আনুগত্য করতে বলা হয়েছে বিধায় উলিল আমরগণের আনুগত্য দুনিয়াবী আনুগত্যে গণ্য। এখন আমরা এই দুই আনুগত্যের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করি। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, দ্বীনের আনুগত্যে সেজদা থাকতে হবে, কারণ সকল দ্বীনের ক্ষেত্রে সকল কিছুই আল্লাহর জন্য। (জুমা, ৩ আয়াত)। এবং সকল সেজদা আল্লাহর জন্য। (সূরা-জিন, ১৮ আয়াত)। আর দুনিয়াবী আনুগত্যের ক্ষেত্রে কোনো সেজদা থাকবে না। কিন্তু রসূলের আনুগত্যের ভিতরে সেজদা আছে, কারণ আদম রসূল আল্লাহর খলিফা। (সূরা-বাকারা, ৩০ আয়াত)। আর আল্লাহর খলিফা আদম রসূল সেজদা পায়। (সূরা-হিযর, ২৯ আয়াত)। তাহলে রসূলের আনুগত্য সেজদা আছে প্রমাণিত হয়। আমরা জানি সেজদা যেখানে দ্বীন সেখানে। অতএব রসূলের আনুগত্য দ্বীনের আনুগত্যে প্রমাণিত। পক্ষান্তরে উলিল আমরগণের আনুগত্যে কোনো সেজদা নেই বিধায় এদের আনুগত্য দুনিয়াবী ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। কাজেই উলিল আমরগণ কখনো রসূল নয় কিংবা রসূলের বিকল্প নয়। কিংবা এরা নায়েবে রসূলও নয়। আবার সূরা-নেসার ৫৯ আয়াত অনুসারে অনেকেই রসুলের বিকল্প হিসেবে দ্বীনের ক্ষেত্রে উলিল আমরগণের আনুগত্য করে থাকে। এই আয়াতে এসেছে রসূলের আনুগত্য কর এবং উলিল আমরগণের আনুগত্য কর। যেহেতু এই আয়াতে রসূল এবং উলিল আমরগণের মাঝখানে ‘এবং’ কথা এসেছে, তাহলে দুইজনের আনুগত্য করাই ফরয। যদি দুইয়ের মাঝখানে ‘অথবা’ কথা আসত, তাহলে উলিল আমরগণ রসূলের বিকল্প হিসেবে প্রমাণ হতো। যেহেতু ঐ আয়াতে দুই এর মাঝখানে এবং কথা এসেছে এতে প্রমাণ হয় যে, উলিল আমরগণ রসূলের বিকল্প নয়। তারপরও নেসার ৫৯ আয়াতটি যখন নাজেল হয়েছে তখনতো নবী (সা.) জীবিত। এই আয়াত নাজিল হওয়ার পরে দ্বীনের ক্ষেত্রে নবী (সা.) এর পরও তৃতীয় ব্যক্তির আনুগত্য করা প্রয়োজন হতো। কেননা এই আয়াতটি তখনকার মোমিনদের জন্য প্রয়োজ্য ছিল। তৎকালীন সময়ে দ্বীনের ক্ষেত্রে নবী (সা.) ভিন্ন অন্য কোনো তৃতীয় ব্যক্তির আনুগত্য মোমিনগণ করেছে এমন কোনো প্রমাণ নেই। বিধায় একমাত্র রসূল ভিন্ন দ্বীনের ক্ষেত্রে তৃতীয় কোনো ব্যক্তির অস্থিত্ব নেই বিধায় যারা নেসার ৫৯ আয়াত অনুসারে উলামাগণকে কিংবা উলিল আমরগণকে কিংবা তাবলিগের আমীর গণকে কিংবা তিন পন্থী পীরগণকে কিংবা মসজিদের বেতনভুক্ত ইমামগণকে রসূলের বিকল্প হিসেবে দ্বীনের ক্ষেত্রে আনুগত্য করছে তারা শেরেকে গণ্য আছে। কারণ দ্বীনের ক্ষেত্রে একত্ববাদ ছাড়া তিন পন্থীর কোনো অস্তিত্ব নেই। তিন পন্থী বলতে এখানে আল্লাহ, রসূল এবং পীর। এই তিন তত্ব এসে যায়। সেক্ষেত্রে পূর্ব আলোচনা অনুসারে আল্লাহ ও রসূল একত্ববাদে গণ্য হয়। কারণ রসূলের আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্যে গণ্য হয়। কিন্তু রসূল ভিন্ন তৃতীয় ব্যক্তিকে একত্ববাদে আনার কোনো সুযোগ নেই। যেহেতু আল্লাহ ও রসূলকে একত্ববাদে আনা যাচ্ছে কিন্তু তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে একত্ববাদে আনা যাচ্ছে না বিধায় আল্লাহ বলেন, তোমরা আল্লাহ বিশ্বাস কর ও রসূল বিশ্বাস কর কিন্তু তিন বলিও না। (সূরা-নেসা, ১৭১ আয়াত)। এই আয়াত অনুসারে তিন পন্থীরা বা তিন পন্থী পীর পন্থীরা বা নায়েবে রসূল পন্থীরা শেরেকে গণ্য। কারণ এই তিন পন্থীরা বলে আল্লাহ তো তিনের ভিতরে একজন (মায়েদা-৭৩)। তারপরও যদি কেউ নেসার ৫৯ আয়াতটি দ্বীনের ক্ষেত্রে তিন পন্থী বা তিন পন্থী পীরপন্থী প্রমাণ করে তাহলে সেই তিনপন্থী বুঝটা নেসার ১৭১ আয়াতের এবং সূরা মায়েদার ৭৩নং আয়াতের পরিপন্থী বলে গণ্য হবে। কিন্তু পবিত্র কোরআনের এক আয়াত আরেকটি আয়াতের পরিপন্থী নয়। এটা নিশ্চিত। তাই নেসার ৫৯ আয়াতে উল্লিখিত উলিল আমরগণের আনুগত্য কর নির্দেশ দিয়ে দ্বীনের ক্ষেত্রে তিনপন্থী প্রমাণ করা থেকে বিরত থাকাই উচিত। বরং নেসার ৫৯ আয়াতে উ্েদ্দশ্য হচ্ছে, উলিল আমরগণের আনুগত্য কর বলতে রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিগণকে আনুগত্য করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেমন রাজা, বাদশা, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এরাই উলিল আমর। তবে এদের আনুগত্য করার সময় আল্লাহর নিয়তে বা রসূল নিয়তে আনুগত্য করা যাবে না কিংবা এ আনুগত্যে কোনো মাথানত বা সেজদা থাকবে না। বরং এই নিয়ত করা যাবে যে, আমি আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক দুনিয়াবী ক্ষেত্রে এদের আনুগত্য করছি মাত্র। এরা দুনিয়াবী প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত বিধায় উলিল আমরগণের আনুগত্যের নির্দেশটা দুনিয়াবী আনুগত্যের নির্দেশ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এখন যদি কেউ নেসার ৫৯ আয়াতে উল্লিখিত উলিল আমরগণের আনুগত্যটা দ্বীনের ক্ষেত্রে নেয় তাহলে এই আয়াতের যে উদ্দেশ্য ছিল দুনিয়াবী আনুগত্যের নির্দেশ সেটা ব্যর্থ হবে। সেক্ষেত্রে আল্লাহর কোনো আয়াতের উদ্দেশ্য ব্যর্থ করার চেষ্টা করলে তার জন্য কঠিন শাস্তি জাহান্নাম। (সূরা-হজ, ৫১ আয়াত)।
যেহেতু তিন পন্থী পীর পন্থীরা বা নায়েবে রসূল পন্থীরা শেরেকে গণ্য, ফলে যারা শেরেক করে ওরা মুশরিক। আল্লাহ বলেন, তোমরা মুশরিকগণকে উপেক্ষা কর। (-হিযর, ৯৪ আয়াত)। যেহেতু শেরেক সবচেয়ে বড় পাপ, কারণ শেরেকের অপরাধ ক্ষমা করা হবেনা। (নেসা, ৪৮ আয়াত)। তাই মুশরিকগণ পাপিষ্ঠ। আল্লাহ বলেন, তোমরা পাপিষ্টগণের সঙ্গ ধারণ করিওনা। (দাহর, ২৪আয়াত)। পীর পন্থীরা তিন পন্থী এই জন্য যে, এরা আল্লাহ, রসূল ও পীর এই তিন তত্বে বিশ্বাসী হয়ে একে অপরকে পৃথক করে বা ংবঢ়ধৎবঃব করে বা ফারাক করে বিধায় তিনপন্থীতে গণ্য, যা দ্বীনের ক্ষেত্রে শেরেক। এরা বলে আল্লাহ এই তিনের মধ্যে একজন (সূরা-মায়েদা, আয়াত-৭৩)। কাজেই সূরা-নেসা, ১৭১ আয়াত এবং সূরা-মায়েদা, আয়াত-৭৩ অনুসারে তিন পন্থী পীর পন্থীরা বা নায়েবে রসূলগণ শেরেকে গণ্য। আবার অনেকে নায়েবী রসূল নামে দ্বীনের ক্ষেত্রে তিনপন্থী বুঝ নিয়ে আসে, তাদের জন্য বলতে হচ্ছে যে কারণ সেজদার মালিক আল্লাহ। সূরা-জিন, ১৮ আয়াত। আর আদম আল্লাহর খলিফা (সূরা-বাকারা, ৩০ আয়াত)। তাই আদম সেজদা পায়। (সূরা-হিযর, ২৯ আয়াত)। ইবলিস আদমকে সেজদা না দিয়েই কাফের (সূরা-বাকারা, ৩৪ আয়াত)। মানুষ যখন আদম কাবায় আল্লাহকে সেজদা দিবে তখন সে ইবলিস থেকে পবিত্র হবে। এইভাবে রসূল মানুষকে পবিত্র করেন। (সূরা-বাকারা, ১৫১ আয়াত)। আল্লাহর খলিফার কাবায় সেজদার মাধ্যমে মানুষকে ইবলিসমুক্ত করার লক্ষ্যে আল্লাহ তার খলিফার ধারা অব্যাহত রাখেন এই ভাবে যে, যারা ইমান আনবে এবং সৎকর্ম করবে তাদের মধ্য থেকে আল্লাহ পৃথিবীতে তাঁর খলিফা নির্ধারন করেন। (সূরা-নূর, ৫৫আয়াত)। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে রিসালাতের ভার অর্পণ করেন (সূরা-আনআম, ১২৪ আয়াত)। এই প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক নবী তার শেষাংশে আল্লাহর খলিফা হিসেবে রসূল রেখে যান। (সূরা-ইমরান, ৮১ আয়াত)। সেই রসূলগণ তার শেষাংশে একই প্রক্রিয়ায় আল্লাহর খলিফা হিসেবে পরবর্তী রসূল রেখে যান। রসূল রাখার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর খলিফাকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত রাখা। আবার রসূলগণের মাধ্যমে যে রসূলগণ আসছে এরা যদি স্বয়ং আল্লাহর খলিফা না হয় তাহলে সমাজে আল্লাহর খলিফা প্রতিষ্ঠিত থাকছে না। আল্লাহর খলিফা না থাকলে আদম কাবায় সেজদার মাধ্যমে মানুষ ইবলিসমুক্ত হতে পারছে না। আর তাই মানুষকে ইবলিসমুক্ত করার লক্ষ্যে আল্লাহর খলিফা দরকার বিধায় এই রসূলগণই আল্লাহর খলিফা। যেহেতু এই রসূলগণ আল্লাহর খলিফা, সেহেতু এরা কোনো অবস্থায় নায়েবী রসূল নয় বরং এরা তথা সম্যক গুরুগণই স্বয়ং রসূল। এই রাসূলের আনুগত্য করলেই সে আনুগত্য আল্লাহর হবে। (সূরা নেসা : ৮০) অনেকেই উলামাগণকে কিংবা উলিল আমরগণকে, কিংবা তাবলীগের আমীরগণকে, কিংবা পীরগণকে, কিংবা মসজিদের বেতনভুক্ত ইমামগণকে, নায়েবী রসূলজ্ঞানে বিশ্বাস করে থাকে। তাদের এ বিশ্বাসের কোনো ভিত্তি নেই, কারণ নায়েবী রসূল শব্দ কোরআনে নেই। কাজেই নায়েবী রসূলপন্থী কিংবা তিন পন্থী পীরপন্থী বা তিন পন্থীরা শেরেকে গণ্য। এদের পরিচয় হচ্ছে এরা আল্লাহ ও রসূলকে একাকার ও অবিচ্ছিন্নভাবে বিশ্বাস করে রসূল কাবায় আল্লাহকে সেজদা করে না বিধায় এরা ইবলিসের অনুসারী এতে কোনো সন্দেহ নেই।
সংগৃহীত
Categories