দীর্ঘদিন যদি কোন মিথ্যে শুনতে শুনতে অভ্যস্থ হয়ে গেলে এবং তার বিপরীত কোন সত্য হাজির না হলে, তবে সেই মিথ্যেটাও একদিন সত্যে পরিনত হয় এবং তা মানব হৃদয়ে মজবুদ এক ভিত গেড়ে বসে। সে তখন সেই প্রাচীর টপকিয়ে আর বের হয়ে আসতে পারে না, যত সত্যই তার সামনে উপস্থাপন করা হোক না কেন। এবং এই বিশ্বাসের ঘরে কেউ আঘাত করলে তা সে মেনে নিতে পারে না। এমনকি নিজ সন্তানকেও সে ত্যাগ করতে প্রস্তুত। বন্ধু-বান্ধব, পাড়া পড়শি, আত্মীয়- স্বজন তো দুরে থাক। তার মনে দীর্ঘ দিনের লালিত সে বিশ্বাসের বিপরীতে কোন সত্যকেও উপস্থাপন করা হলে সে আৎকে উঠে। প্রতিহত করতে চায়, বিরোধিতায় লিপ্ত হয়, এমন কি জীবন দিতেও প্রস্তুত হয়ে যায়। আর সে বিশ্বাস যদি হয় ধর্মীয় – তবে তো আর কথাই নেই। ফলে অনেক উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার পরও দেখা যায় একটি মানুষ তার গোড়ামীর প্রাচীর ভেদ করে বেরিয়ে আসতে পারে না। তার মুল কারন সত্যটা তার সামনে শুরুতে কোন দিন উপস্থাপন করা হয়নি। ফলে পৃথিবী নামক গ্রহের বুকে, জাতী একটি হলেও ধর্ম চার হাজারের অধিক। কেউ কাউকে তার বিশ্বাসের ভিত থেকে এক বিন্দু টলাতে সক্ষম নয়। কারন জন্মগত ভাবে সে এই নিয়ামাচার গুলো দেখে আসতেছে। বহু পুর্ব হতে বাপ-দাদাদেরকেও এরুপই করতে দেখে এসেছে। সে যাকে, যাকে ভক্তি শ্রদ্ধা করে, যাকে যাকে ইত্তেবা করে তার মুখেও এমনি শুনে এসেছে। তাই তার অন্য কোন কথা, মত কানে পৌছা মাত্র গা জ্বলে উঠে। শোনা বা তা একটু রিভিউ করে দেখা তো দূরে থাক।
যার জন্য যুগে যুগে আল্লাহ নবী-রাসুল, পথ প্রদর্শক, জ্ঞান বিজ্ঞানে সামৃদ্ধ বহু মনষীদের পৃথিবীর বুকে প্রেরন করেছেন এবং সাথে দিয়েছেন ঐশী গ্রন্থ। পাশাপাশি দিয়েছেন মানুষকে সভ্যতার ক্রম বিকাশের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জ্ঞান ভান্ডারের তার সৃষ্ট কিছু মানুষ। যারা সভ্যতা সাংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে তুলে পৃথিবীকে সুন্দর বসবাস উপোযোগী করে তুলতে সহায়ক হয়েছেন। প্রযুক্তি যেমন যুগের চাহীদায় ক্রম পরিবর্তন হয়ে আসছে, মহান আল্লাহও বিভিন্ন ঐশী গ্রন্থ গুলিও তেমনে মুলনীতি অপরবর্তনীয় রেখে, যুগ ও সময়ের চাহীদায় সর্বশেষ সংস্কারকৃত এবং পুর্ণাঙ্গ ঐশী গ্রন্থ আল কোরআনকে উপহার দিয়ে মানবের জীবন বিধানের গাইড লাইন দিয়ে দিয়েছেন এবং এটাই শেয ও চুড়ান্ত বলে ঘোষণা করে জানিয়ে দিলেন পুর্ববর্তি তোমাদের কাছে যা কিছুই থাকুক না কেন এ কোরান পৌছার পর এটিই চুড়ান্ত ও সর্বশেষ এটির বাহককে সহ এই কিতাবের ইত্তেবা করতে, যে কিনা তোমাদের কাছে ইতিপুর্বে যা দেয়া হয়েছে তারও সত্যায়ন করতে সক্ষম। (৩:৮১)
(3:81)
وَ اِذْ اَخَذَ اللّٰهُ مِیْثَاقَ النَّبِیّٖنَ لَمَاۤ اٰتَیْتُكُمْ مِّنْ كِتٰبٍ وَّ حِكْمَةٍ ثُمَّ جَآءَكُمْ رَسُوْلٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهٖ وَ لَتَنْصُرُنَّهٗ١ؕ قَالَ ءَاَقْرَرْتُمْ وَ اَخَذْتُمْ عَلٰى ذٰلِكُمْ اِصْرِیْ١ؕ قَالُوْۤا اَقْرَرْنَا١ؕ قَالَ فَاشْهَدُوْا وَ اَنَا مَعَكُمْ مِّنَ الشّٰهِدِیْنَ
শব্দার্থ: وَإِذْ = এবং ( স্মরণ কর) যখন , أَخَذَ = গ্রহণ করেন , اللَّهُ = আল্লাহ, مِيثَاقَ = অঙ্গীকার, النَّبِيِّينَ = নবীদের (থেকেএইবলেযে) , لَمَا = অবশ্যই যা, آتَيْتُكُمْ = তোমাদের আমি দিয়েছি, مِنْ = (থেকে) , كِتَابٍ = কিতাব, وَحِكْمَةٍ = ওহেকমত, ثُمَّ = এরপর (যখন ) , جَاءَكُمْ = তোমাদের কাছে আসবে , رَسُولٌ = কোনরসূল, مُصَدِّقٌ = সত্যায়নকারী, لِمَا = তারযা, مَعَكُمْ = তোমাদের সাথে আছে, لَتُؤْمِنُنَّ = তোমরা অবশ্যই বিশ্বাস করবে, بِهِ = তার উপর , وَلَتَنْصُرُنَّهُ = ওতাকে তোমরা অবশ্যই সাহায্য করবে, قَالَ = তিনি বললেন , أَأَقْرَرْتُمْ = তোমরা অঙ্গীকারকরলেকি, وَأَخَذْتُمْ = ও তোমরা গ্রহণ করলে (কি) , عَلَىٰ = উপর , ذَٰلِكُمْ = এসবের, إِصْرِي = দায়িত্বভার, قَالُوا = তারা বলল, أَقْرَرْنَا = আমরা অঙ্গীকারকরলাম, قَالَ = তিনি বললেন , فَاشْهَدُوا = তোমরা সাক্ষীথাকো, وَأَنَا = এবং আমি ও, مَعَكُمْ = তোমাদের সাথে , مِنَ = অন্তর্ভুক্ত (রইলাম) , الشَّاهِدِينَ = সাক্ষীদাতাদের ,
অনুবাদ: স্মরণ করো, যখন আল্লাহ নবীদের থেকে এই মর্মে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, “আজ আমি তোমাদের কিতাব ও হিকমত দান করেছি, কাল যদি অন্য একজন রসূল এই শিক্ষার সত্যতা ঘোষণা করে তোমাদের কাছে আসে, যা আগে থেকেই তোমাদের কাছে আছে, তাহলে তোমাদের তার প্রতি ঈমান আনতে হবে এবং তাকে সাহায্য করতে হবে।” এই বক্তব্য উপস্থাপন করার পর আল্লাহ জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমরা কি এ কথার স্বীকৃতি দিচ্ছো এবং আমার পক্ষ থেকে অঙ্গীকারের গুরুদায়িত্ব বহন করতে প্রস্তুত আছো?” তারা বললো, হ্যাঁ, আমরা স্বীকার করলাম। আল্লাহ্ বললেনঃ “আচ্ছা, তাহলে তোমরা সাক্ষী থাকো এবং আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী থাকলাম,
মানুষের জন্মগত ভাবে পোষনকৃত এই পুর্ববর্তি ধর্মীয় অনুভুতি সত্য – না মিথ্যে তা যাচাই করে বিশ্বাসের পরিশুদ্ধতা অর্জনের জন্য এই কোরানই একমাত্র উপদেশ গ্রন্থ। তাই এই কোরানের প্রতি যার পরিপুর্ণ ঈমান রয়েছে সেই একমাত্র সৌভাগের সরল পথ ও বিশ্বাসের সন্ধান পাবে।
এ আলোচনার মুল প্রতিপাদ্য আমি আমার ধর্মীয় অনুভুতি, এবাদত বন্দেগী এবং আমার জীবন ব্যবস্থাকে কোরানের আলোকে যাচাই বাছাই করে নিয়ে পরিপালন করবো, এর বাহিরে যা তা আমার জীবন বিধান হিসেবে পরিত্যাজ্য। অবশিষ্ট যেসকল গ্রন্থ হতে পারে তা আমার শিক্ষা-সাংস্কৃতি,জ্ঞান বিজ্ঞানের সহায়ক হিসেবে গ্রহনীয় কিন্তু আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান হিসাবে প্রয়োগের জন্য নয়। এ বিষয়ে দ্বীমত থাকলে তবে পরবর্তি আলোচনায় না যাওয়ার অনুরোধ। আমি আমার এ চিন্তা একমাত্র সঠিক এবং তা অন্যকেও অনুসরনের পরামর্শ দেব না। কারন রিলিজিয়াস সেন্টিমেন্ট একটি সংবেদনশীল সাবজেক্ট যা অনস্বীকার্য।
রোগ-শোক,বিসন্নতা,ঝড়,জলোচ্ছাস,যুদ্ধ-বিগ্রহ এমন কি মুমুর্ষ অবস্থাতেও নামাজ পড়তে হবে। এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়লে ৮০ হুগবা দোজখে বাস করতে হবে। এটাই চির সত্য, বদ্ধমুল বিশ্বাস গড়ে আছে। আসলেই কি আল্লাহ এত কঠোরতা আরোপ করেছেন মানুষের উপর? কোরানের আলোকে যাচাই করে দেখি। আমরা যাকে নামাজ বলে জানি কোরানে তা সালাত শব্দে বর্ণিত। ৮০+ জায়গায় বিভিন্ন ভাবে এ সালাত শব্দটি এসেছে। যা আমরা দৈনিক পাচ ওয়াক্ত পড়তে হয় বলে জানি এবং গুরুত্তে সাথে পড়ে থাকি। প্রকৃত কি এই যে প্রচলিত নামাজ আমরা পড়ি আল্লাহ কোরানে যে সালাত কায়েম করার কথা বলেছেন তা প্রকৃত কি এভাবেই, না অন্য কিছু? কোরানের আলোকে দেখে নেই।
চলমান—-