সালাতের নিয়ম কানুন কোরান থেকে রেফারেন্স সহ জানাতে চেয়ছেন।
কোরানে সালাতের মুল বিষয়ে অবশ্যই ইংগিত করেছেন আল্লাহ।
তা জানার জন্য কোরানকে গভীর ভাবে অনুশীলন করতে হবে। আমি যতটুকু পেয়েছি উপস্থাপন করছি।
১) সালাতের ওয়াক্ত বিষয়ে আয়াত:
নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর ‘মাওকুতা’ নির্দিষ্ট সময়ে ফরয। (৪ঃ১০৩)
২) সালাতুল ফজর ও মাগরিবের আয়াত:
তুমি সালাত কায়েম কর দিবসের দুই প্রান্তভাগে ও রজনীর প্রথমাংশে। সৎকর্ম অবশ্যই অসৎকর্ম মিটাইয়া দেয়। যাহারা উপদেশ গ্রহণ করে, ইহা তাহাদের জন্য এক উপদেশ। (১১ঃ১১৪)
সূর্য হেলিয়া পড়িবার পর হইতে রাত্রির ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করিবে এবং কায়েম করিবে ফজরের সালাত। নিশ্চয়ই ফজরের সালাত উপস্থিতির সময়।১৭:৭৮
৩) সালাতুল যোহর/দুলুকিশ শামস এর আয়াত:
তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হইবে, বিশেষত মধ্যবর্তী সালাতের এবং আল্লাহ্র উদ্দেশে তোমরা বিনীত ভাবে দাঁড়াইবে;(২ঃ২৩৮)
৩) সালাতুল আসর এর আয়াতঃ
এবং অপরাহ্নে ও যোহরের সময়ে; আর আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে সকল প্রশংসা তো তাঁহারই। (৩০ঃ১৮)
অতএব উহারা যাহা বলে তাহাতে তুমি ধৈর্য ধারণ কর এবং তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে,
সূরা নম্বরঃ ৫০, আয়াত নম্বরঃ ৩৯
(৪ ) সালাতুল মাগরিব এর আয়াতঃ
এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর। সূরা নম্বরঃ ৩৩, আয়াত নম্বরঃ ৪২
সূর্য হেলিয়া পড়িবার পর হইতে রাত্রির ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করিবে এবং কায়েম করিবে ফজরের সালাত। নিশ্চয়ই ফজরের সালাত উপস্থিতির সময়।
সূরা নম্বরঃ ১৭, আয়াত নম্বরঃ ৭৮
তুমি সালাত কায়েম কর দিবসের দুই প্রান্তভাগে ও রজনীর প্রথমাংশে। সৎকর্ম অবশ্যই অসৎকর্ম মিটাইয়া দেয়। যাহারা উপদেশ গ্রহণ করে, ইহা তাহাদের জন্য এক উপদেশ। সূরা নম্বরঃ ১১, আয়াত নম্বরঃ ১১৪
সুতরাং উহারা যাহা বলে, সে বিষয়ে তুমি ধৈর্য ধারণ কর এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর এবং রাত্রিকালে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর, এবং দিবসের প্রান্তসমূহেও, যাহাতে তুমি সন্তুষ্ট হইতে পার।
সূরা নম্বরঃ ২০, আয়াত নম্বরঃ ১৩০
(৫) সালাতুল এশা এর আয়াতঃ
ফজরের সালাতের পূর্বে, দুপুরে যখন তোমরা তোমাদের পোশাক খুলে রাখ, এবং ‘ইশার সালাতের পর। (২৪ঃ৫৮)
(৬) সালাতুল তাহাজ্জুত এর আয়াত:
এবং রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করিবে, ইহা তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করিবেন প্রশংসিত স্থানে।
সূরা নম্বরঃ ১৭, আয়াত নম্বরঃ ৭৯
৭) সালাতুল জুম্মা এর আয়াতঃ
হে মু’মিনগণ! জুমু’আর দিনে যখন সালাতের জন্য আহ্বান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহ্র স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর, ইহাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা উপলব্ধি কর। সূরা ৬২, আয়াত নম্বরঃ ৯
*** শিয়ারা যে আয়াত মুলে সালাত দৈনিক তিন ওয়াক্ত ফরজ মনে করেনঃ
হে মু’মিনগণ! তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসিগণ এবং তোমাদের মধ্যে যাহারা বয়ঃপ্রাপ্ত হয় নাই তাহারা যেন তোমাদের কক্ষে প্রবেশ করিতে তিন সময়ের অনুমতি গ্রহণ করে, ফজরের সালাতের পূর্বে, দ্বিপ্রহরে যখন তোমরা তোমাদের পোশাক খুলিয়া রাখ তখন এবং ;ইশার সালাতের পর; এই তিন সময় তোমাদের গোপনীয়তার সময়। সূরা নম্বরঃ ২৪, আয়াত নম্বরঃ ৫৮
তার আগে বুঝতে হবে নীতি নৈতিকতা এবং আচার- অনুষ্ঠান মিলেই ইবাদত। খালি আচার-অনুষ্ঠানের যেমন মুল্য নেই তেমনি নীতি নৈতিকতা বিহীন আচার- অনুষ্ঠানও
আল্লাহর নিকট পুন্ড সার বলে আখ্যায়িত।
প্রশ্ন আসতে পারে কখন কয় রাকাত কি ভাবে প্রতি রাকাত আদায় করতে হবে?
একটি প্রাত্যহিক উপমার মাধ্যমে আমি বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করবো। ধরুন —
কোন অনুষ্ঠানে খাবার টেবিলে খাবার পরিবেশন করে সবাইকে খেতে বলা হল, কেউ হাত ধুয়ে হাত দিয়ে খেতে শুরু করলো, কেউ হাত না ধুয়েই চামচ দিয়ে খেতে লাগলো, তাতে কি কেউ মুল আদেশ খাবার বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। মুল উদ্দেশে খাদ্য পেটে প্রবেশ করা।
তদ্রুপ মুল বিষয় রুকু সিজদাহ কিয়াম ঠিক রেখে কোরান তেলোয়াত, আপনার চাওয়া পাওয়ার প্রার্থনা রবের নিকট করা এবং যা বলছেন তা বুঝে বলে সে অনুযায়ী বাস্তব জীবনে প্রতিফলন করাই আপনার সালাত। নাভীর নীচে না উপরে হাত বাধা, না হাত একদম ছেড়ে দিয়ে রাখা, আমিন আস্তে না জোড়ে বলা, চার রাকাত না দুই রাকাত পড়া এসব মুল উদ্দেশ্য নয় এবং এসব নিয়ে কোরানে আল্লাহ আলোচনাও করেন নাই। আর কোরানে যা নিষেধাজ্ঞা নেই তা আপনার মত মতো পরিপালনে কোন আপত্তিও নেই। আমি যতটুকু কোরান বুঝে পড়েছি। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন অঞ্চলের চলে আসা অতীতের পদ্ধতি রেওয়াজ অনুসরনের ক্ষেত্রে কোন বাঁধা নিষেধ আরোপ করেন নাই রব। আপনার মুল লক্ষ্য পরিবেশিত খাদ্য পুষ্টির জন্য পেটে ঢুকানোর বিষয়টি যেমন।
যার জন্য আল্লাহ সূরা মাআরিজের ২৩ নং আয়াতে বলেছেন:
আল্লাযিনা হুম আলা সালাতিহিম দাইয়েমুন
অর্থ: যাহারা তাহাদের সালাতে সদা প্রতিষ্ঠিত,
এ আয়াত থেকে বুঝতে হবে মানুষ সর্বক্ষন কি ভাবে সালাতে রত থাকতে পারে। তার মানে আল্লাহর নির্দেশনা মোতাবেক সকল কাজকর্ম পরিচালনা করাই সার্বক্ষনিক সালাতে রত থাকা বুঝিয়েছেন। এক কথায় কোরানকে সর্বাবস্থায় অনুসরন করে চলাই সালাতুল দাইয়েমুন।
কায়েম শব্দটি অভিধানিক বাংলা অর্থ হচ্ছে- প্রতিষ্ঠিত, এবং দায়েম শব্দটি অভিধানিক বাংলা অর্থ হচ্ছে- সর্বদা, অবিরাম। এই দুইটি শব্দের প্রায় একই অর্থ বহন করে।
এখানে আমাদের আলেম সাহেবগন মাদ্রসার শিশুদের ছোট বেলা থেকে শিক্ষা দিয়ে আসছেন ৫ ওয়াক্ত নামায জামাতের সহিত পড়াই হলো কায়েম করা। নিজে পড়া এবং সবাইকে নিয়ে জামাতে পরার নামই কায়েম করা।
আল্লাহ পবিত্র কোরআনের একাধিক বারই বলেছেন যার যার বোঝা তাকেই বহন করতে হবে। তবে জামাতে নামায আদায় করলেই কায়েম হবে কি করে?
আর যার যার কায়েমী নামায যদি তার তার হয় তবেই সেটা কায়েম করা সম্ভব। আমি শুধু একটা কথাই বলতে চাচ্ছি কায়েম যার যার তার তার।
সালাতের উদ্দেশ্য এবং বাস্তব জীবনে এর প্রতিফলন সম্বন্ধে আমাদের সমাজে মোটেই ধারণা নেই। আমাদের সালাত হলো উঠ বস করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
আল্লাহ তাইতো বলেনঃ
তুমি কি দেখিয়াছ তাহাকে, যে দীনকে অস্বীকার করে ?
সুতরাং দুর্ভোগ সেই সালাত আদায়কারীদের, যাহারা তাহাদের সালাত সম্বন্ধে উদাসীন, যাহারা লোক দেখানোর জন্য উহা করে,(১০৭ঃ১-৬)
শেষ বিচার দিবসে আল্লাহ যখন বলিবেন, কি সে তোমাদের সাকারে নিয়ে আসলো, তখন—
উহারা বলিবে, ‘আমরা মুসল্লিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না,
(৭৪ঃ৪৩) মুছুল্লী অর্থ অনুসারী। তা হলে কিসের অনুসারী ছিল না তারা। সুরা মাউনে তার ব্যাখ্যা রয়েছেঃ
তুমি কি দেখিয়াছ তাহাকে, যে দীনকে অস্বীকার করে ?
সুতরাং দুর্ভোগ সেই সালাত আদায়কারীদের/ মুছুল্লীদের
যাহারা লোক দেখানোর জন্য উহা করে,১০৭ঃ৬
প্রকৃত কোরানের সালাত শব্দটি দিয়ে নামাজ বলতে আমরা যা বুঝে থাকি তা আমাদের প্রচলিত বুঝের মধ্যে সীমা বদ্ধ নয়। কোরানে বর্নিত সালাতের অর্থ ব্যাপক।
একটু চিন্তা করলে কোরআনের আলোকেই তা বুঝা যায়।
فلا صدق ولا صلي ولكن كذب وتولي (৭৪ঃ৪৩)
ফালা সদ্দকা ওয়া লা ছল্লা ওয়ালিকিন কাজ্জাবা ওয়া তাওয়াল্লা। (৭৪:৪৩)
আমরা সলাতে অর্থ জানি নামাজ। নামাজ মানে কি? সেটা আর বলতে পারে না। এ আয়াতে ছল্লার বিপরীতে তাওয়াল্লা আছে। আবার সদ্দকার বিপরীতে কাজ্জাবা।
ফা লা সদ্দাকা — সে সত্য বলে নাই
ওয়া লা ছল্লা — সে সলাত ও করে নাই
ওয়ালিকিন কাজ্জাবা — বরং সে মিথ্যে বলেছে
ওয়া তাওয়াল্লা — এবং মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
তাওয়াল্লার অর্থ মুখ ফিরেয়ে নেওয়া। এটা ভুল নেই।
কিন্তু ছল্লার অর্থ কি? এটা বের করতে হবে। যদিও হুজুররা ছল্লা মানে নামাজ বলে। নামাজ কি? তা আর বলতে পারে না। কারন শব্দটা ধার করা। আমাদের ভাষার না। কোরান থেকেই ছল্লার মর্ম অর্থ বের করতে হবে।
যেমন হারামের বিপরীত হালাল
সুদের বিপরীত ব্যবসা
সদ্দকার বিপরীত কাজ্জাবা
অনুরপ ছল্লার বিপরীত তাওয়াল্লা।
তাহলে তাওয়াল্লার বাংলা শব্দ যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়া হয়।
তবে ছল্লার বাংলা শব্দ মুখোমুখি হওয়া, যোগাযোগ করা, সম্পর্ক করা হবে।
সলাত এর বাংলা নামাজ। এই ভিনদেশী শব্দটা ঢুকিয়ে দিয়েই কোরানের বর্ণিত সলাতকে বুঝতে সমস্যা তৈরী করেছে এবং বিতর্ক করার সুযোগ ঘটেছে।
আল্লাহর সাথে মুখোমুখি হওয়া,/ সংযোগ স্থাপন করা/যোগাযোগ করা/সম্পর্ক করা/ অনুসরন করার নামই সলাত। আর এটিই কোরানে বর্ণিত আরবী সলাত শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ। এই জন্য বলা হয় মুছুল্লী। মুছুল্লী মানে অনুসরন করা।
উহারা বলিবে, ‘আমরা মুসল্লিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না,
সুতরাং দুর্ভোগ সেই সালাত আদায়কারীদের,
যাহারা তাহাদের সালাত সম্বন্ধে উদাসীন, (১০৭:৬)
আল্লাহ কোরানে সালাত নিয়ে আরো বলেন:
ক) পুর্বপশ্চিমে কল্যান নেই
খ) পাখিরাও সালাত করে
গ) প্রত্যেকের একটি ইবাদতের পদ্ধতি রয়েছে
ঘ) পরপর্তিরা সালাত নষ্ট করিল
ঙ) সালাত অশ্লীল ও কুকর্ম থেকে বিরত রাখে।
এ থেকে বুঝা যায় কোরানে বর্নিত সালাত অর্থ আমরা প্রচলিত যে নামাজকে বুঝি আসলে তা এই আনুষ্ঠানিক আচর অনুষ্ঠানের মধ্যে শুধু সীমাবদ্ধ নয়। এর অর্থ ব্যাপক। সার্বক্ষনিক কোরানের বর্ননা নির্দেশনা মোতাবেক জীবন ব্যবস্থা পরিচালনাকে সালাত বুঝানো হয়েছে। তার মানে প্রচলিত সালাতের আনুষ্ঠানিকতাকে বাদ দেয়া নয়। আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সালাত পরিপালনে সাথে নীতি নৈতিকতার উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে জীবন পরিচালনাকে সালাত বলা হয়েছে। মিরাজ থেকে সালাতের আগমন নয়।সালাত বহু পুর্ব থেকে সকল নবীর উপর ছিল। রাসুল সা: এর মিরাজের ঘটনা ৫৩ বছর বয়সে। তার মানে তিনি কি এর আগে ৫০/৫২ বছর সালাত আদায় করেন নাই। অবশ্যই করেছেন। এবং সে সালাত কেমন ছিল? এ দিকে একটু চিন্তা করলে সালাত শব্দটির ব্যাপকতা বুঝতে আরো সহজ হবে।
ভুল ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে রেফারেন্স সহ জানানোর অনুরোধ জানাচ্ছি। কেউ এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষন করতে পারেন। আমার চিন্তাতে একমত পোষনের জন্য আমি আহবান করছি না।