পবিত্র কুরআনে বিশ্বাসের দিকনির্দেশনার উপাদান:
1) কুরআন নিখুঁত এবং এর পাশে অন্য কোন লেখার প্রয়োজন নেই। আমাদের সর্বদা মনে রাখা উচিত যে আল্লাহ কুরআনে নিম্নোক্ত কথা বলেছেন: “…আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, এবং তোমাদের উপর আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য ধর্ম হিসেবে অনুমোদন করলাম…” (৫:৩); “আপনার প্রতিপালকের বাক্য পূর্ণ সত্য ও সুষম। তাঁর বাক্যের কোন পরিবর্তনকারী নেই। তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।” (৬:১১৫)। এর অর্থ হল কুরআনকে ‘সম্পূর্ণ’ করার বা এতে নুতন কিছু ‘সংযোজন’ করার বা এর পাশে অন্য কোনো উৎস খোঁজার প্রয়োজনই নেই। আল্লাহ আমাদের জন্য একটি নিখুঁত, সংক্ষিপ্ত গ্রন্থ বাছাই করেছেন , যাতে আমাদের ধর্মে প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছুর বিশদ বিবরণ রয়েছে এবং তাঁর নির্দেশনা ও করুণা পাওয়ার জন্য শুধুমাত্র এটি মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। “তাদের জন্য এটা কি যথেষ্ট নয় যে আমি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি, যা তাদের কাছে পাঠ করা হয়? এতে রয়েছে রহমত ও উপদেশ সেই লোকদের জন্য যারা ঈমান আনে। বলুন, আল্লাহই আপনার ও আমার মধ্যে সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট। তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সবকিছু জানেন। যারা মিথ্যা বিশ্বাস করে এবং আল্লাহকে অবিশ্বাস করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।” (২৯:৫১-৫২)।
2) কুরআনই হল প্রজ্ঞা/হিকমত।
আল্লাহ কুরআনে নিম্নোক্ত কথা বলেছেন: “তিনিই উম্মীদের মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তার আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত। …” (৬২:২)। মুহাম্মদী ঈমাম মোল্লারা ভুলভাবে প্রচার করেন যে ৬২:২ এবং অন্যান্য কুরআনের আয়াতে উল্লিখিত “প্রজ্ঞা/Wisdom/حِكْمَةَ” শব্দটি কুরআনের বাইরের কিছু বা এর বাইরে অন্য কোনো উৎসকে বোঝায়। আমাদের দাবি এই যে – “হিকমত” ও “কিতাব” উভয়ই কুরআনকেই বোঝায়। প্রমাণ: আসুন আমরা মূসা এবং হারুন সম্পর্কে এই আয়াতটি সংক্ষেপে চিন্তা করি: “আমরা মূসা ও হারুনকে দিয়েছি মানদণ্ড, আলো এবং ধার্মিকদের জন্য একটি স্মরণ।” (২১:৪৮)। এই তিনটি বড় শব্দ সমার্থকভাবে শুধুমাত্র একটি জিনিসকে বোঝায়: তাওরাত। এই শব্দগুলো দিয়ে কখনোই মূসা ও হারুনকে দেওয়া তিনটি জিনিস বা তিনটি বই বোঝায় না। একইভাবে আল্লাহ এই আয়াতে মূসা ও হারুনকে প্রদত্ত তাওরাত বর্ণনা করেছেন: “এবং আমি উভয়কে দিয়েছিলাম সুস্পষ্ট কিতাব।” (৩৭:১১৭)। এটি তাওরাতের পাশে অন্য কোন গ্রন্থ নয় , যেমন ৩৭:১১৭ তাওরাতকেই বোঝায়।
অনুরূপভাবে, আসুন আমরা যীশু সম্পর্কে এই আয়াতগুলি সংক্ষেপে চিন্তা করি: “…কীভাবে আমি তোমাকে কিতাব এবং হিকমত এবং তাওরাত এবং ইঞ্জিল শিখিয়েছি…” (৫:১১০); “এবং তিনি তাকে কিতাব এবং হিকমত এবং তাওরাত এবং ইঞ্জিল শিক্ষা দেবেন” (৩:৪৮)। এর মানে এই নয় যে আল্লাহ যীশুকে চারটি ভিন্ন বই দিয়েছেন বরং, তাকে মূসাকে দেওয়া তাওরাত শেখানো হয়েছিল এবং তাকে ইঞ্জিল দেওয়া হয়েছিল। যখন “কিতাব” এবং “হিকমত” দুটি শব্দ ইঞ্জিলকে নির্দেশ করে। এই আয়াতে এটাকে জোর দিয়ে বলা হয়েছে: “যখন যীশু স্পষ্টীকরণ নিয়ে এসেছিলেন, তিনি বলেছিলেন, “আমি আপনাদের কাছে হিকমত নিয়ে এসেছি…” (৪৩:৬৩)। সুতরাং,হিকমত হল আল্লাহর বাণী/গ্রন্থ: তাওরাত, ইঞ্জিল এবং কুরআন।
“হিকমত” শব্দটি কুরআনের আয়াতগুলিকেও বর্ণনা করে: “এটি কিছু হিকমত যা তোমার প্রভু তোমাকে প্রকাশ করেছেন…” (১৭:৩৯)। আল্লাহ মুহাম্মদ, তাঁর স্ত্রীদের এবং সমস্ত বিশ্বাসীদের আদেশ দেন কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করতে। দেখুন – ২৭:৯২”.. যেন আমি কোরআন পাঠ করে শোনাই”এবং ৩৫:২৯ “যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে..”। মুহাম্মাদের স্ত্রীদের উদ্দেশে এই আয়াতে কুরআনের আয়াতগুলিকে হিকমত হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে: “এবং আল্লাহর আয়াত এবং হিকমত , যা আপনার বাড়িতে পাঠ করা হয় তা মনে রাখবেন…” (৩৩:৩৪) সুতরাং, “হিকমত” শব্দটি কুরআনেরই সমার্থক এবং একই কথা অন্যান্য শব্দ যেমন “আলো” এবং “আল-ফোরকান” ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
পড়ুন এই আয়াত – “… আল্লাহর সে অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যা তোমাদের উপর রয়েছে এবং তাও স্মরণ কর, যে কিতাব ও হিকমতের কথা তোমাদের উপর নাযিল করা হয়েছে, এটি দ্বারা তোমাদেরকে উপদেশ/ওয়াজ করা হয়।…” (২:২৩১)। এটি/بِهِ একবচন সর্বনাম। এর মানে দাড়ায় , আরবি ব্যাকরনের জ্ঞান যাদের আছে তাদের বোধগম্য হওয়ার কথা – কুরআনের ভাষা এই নির্দেশ করে যে , কিতাব এবং হিকমত দুটি নয় , একটিই জিনিস: কুরআন নিজেই।