অনুঃ ০১ ; সূরা যুমার,আয়াতঃ২২
“আল্লাহ যার বক্ষকে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, অতঃপর সে তার রবের পক্ষ থেকে আলোর মাঝে রয়েছে। যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরনের ব্যাপারে কঠোর, তাদের জন্য দূর্ভোগ! তারা সুস্পষ্ট বিভ্রান্তীতে রয়েছে।” (সূরা যুমারঃ২২)
أَفَمَن شَرَحَ اللَّهُ صَدرَهُ لِلإِسلٰمِ فَهُوَ عَلىٰ نورٍ مِن رَبِّهِ ۚ فَوَيلٌ لِلقٰسِيَةِ قُلوبُهُم مِن ذِكرِ اللَّهِ ۚ أُولٰئِكَ فى ضَلٰلٍ مُبينٍ
বাক্য বিশ্লেষনঃ
أَفَمَن شَرَحَ اللَّهُ صَدرَهُ لِلإِسلٰمِ
(আফামা শারাহাল্লাহু ছাদরাহু লিল ইসলাম),আল্লাহ যার বক্ষকে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।
فَهُوَ عَلىٰ نورٍ مِن رَبِّهِ
(ফাহুয়া আ’লা নূরীম মির রাব্বিহী) অতঃপর সে তার রবের পক্ষ হতে আলোর উপর থাকে।
فَوَيلٌ لِلقٰسِيَةِ
(ফাওয়াই লুলিল ক্বাসিয়াতি), সুতরাং দুর্ভোগ সেই পাষানের জন্য।
قُلوبُهُم مِن ذِكرِ اللَّهِ
(ক্বুলুবিহিম মিন যিকরিল্লাহি), যাদের অন্তর সমুহু আল্লাহর স্মরণ হতে
أُولٰئِكَ فى ضَلٰلٍ مُبينٍ
(উলাইকা ফী দালা — লিম মুবীন), ঐ সব লোকের মধ্যে রয়েছে সুস্পষ্ঠ গোমরাহী।
বাক্য বিন্যাসঃ
ইসলাম গ্রহনের জন্য আল্লাহ যার বক্ষ উন্মোচিত করে দিয়েছেন,যার ফলে সে তার প্রতিপালকের দেয়া আলোর উপর রয়েছে।( সে কি তার সমান যে পাষান হৃদয়ের)? দূর্ভোগ তাদের জন্য যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরনের ব্যাপারে পাষান হয়ে গেছে। তারা আছে সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে।
ভাবার্থঃ
আত্মসমর্পনকারীদের অন্তর দরজা আল্লাহ খুলে দেন, ফলে তারা আল্লাহর নূরের মাঝে অবস্থান করে। অন্যদিকে যে আল্লাহকে জানতে চায় না অর্থাৎ কোরআন পড়ে না আল্লাহ তাকে আত্মসমর্পনকারী হতে সহয়তা প্রদান করেন না ফলে সে দুর্ভাগা ও পথভ্রষ্ঠ রয়ে যায়। আল্লাহকে জানার আগ্রহে যে হৃদয় বিমুখ সে দূর্ভাগা এবং পথভ্রষ্ট।
অনুবাদ বিভ্রাটঃ
ইসলাম আরবী শব্দের অনুবাদ আত্মসমর্পনকারী। Not শান্তি। যিকিরিল্লাহ আরবী শব্দের অনুবাদ আল্লাহকে স্মরণ করা তথা কোরআন পড়া। Not আল্লাহু আল্লাহু উচ্চারন করে জপা।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
(অনুঃ০২,সূরা যুমার আয়াতঃ২৩)
“আল্লাহ উত্তম বাণী তথা কিতাব নাযিল করেছেন, যা সামঞ্জস্যপূর্ণ, পূনঃ পূনঃ পঠিত। এতে তাদের লোম কাঁটা দিয়ে উঠে চামড়ার উপর, যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে, এরপর তাদের চামড়া ও অন্তর আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়। এটাই আল্লাহর পথ নির্দেশ, এর মাধ্যমে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করেন। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন, তার কোন পথপ্রদর্শক নেই।” (৩৯ঃ২৩)
اللَّهُ نَزَّلَ أَحسَنَ الحَديثِ كِتٰبًا مُتَشٰبِهًا مَثانِىَ تَقشَعِرُّ مِنهُ جُلودُ الَّذينَ يَخشَونَ رَبَّهُم ثُمَّ تَلينُ جُلودُهُم وَقُلوبُهُم إِلىٰ ذِكرِ اللَّهِ ۚ ذٰلِكَ هُدَى اللَّهِ يَهدى بِهِ مَن يَشاءُ ۚ وَمَن يُضلِلِ اللَّهُ فَما لَهُ مِن هادٍ
বাক্য বিশ্লেষনঃ
اَللّٰهُ نَزَّلَ
(আল্লাহু নাঝঝালা)
আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন
اَحْسَنَ الْحَدِيْثِ كِتٰبًا
(আহসানাল হাদিসী কিতাবা)
উত্তম হাদীস সম্বলিত গ্রন্থ।
مُّتَشَابِهًا مَّثَانِىَ
(মুতাশা-বিহাম মাছা-নিয়া)
সুসামঞ্জস্যপুর্ন পুনরাবৃত্ত,
تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُوْدُ
(তাকশা’ইররু মিনহু জুলুদ)
তা থেকে শিউরে উঠে দেহ
الَّذِيْنَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْۚ
(আল্লাযিনা ইয়াখশাওনা রাব্বাহুম)
যারা ভয় করে তার রবকে।
ثُمَّ تَلِيْنُ جُلُوْدُهُمْ وَقُلُوْبُهُمْ
(ছুম্মা তালীনু জুলুদুহুম ওয়া ক্বুলুবুহুম)
অতঃপর বিগলিত হয় তাদের সারাদেহ ও অন্তর সমুহ।
اِلٰى ذِكْرِ اللّٰهِ
(ইলা যিকরিলাহি)
আল্লাহর স্মরনের প্রতি।
ذٰ لِكَ هُدَى اللّٰهِ
( যালিকা হুদাল্লাহি ইয়াহদী বিহী)
এটা আল্লাহর (হেদায়ত)পথনির্দেশ।
يَهْدِىْ بِهٖ مَنْ يَّشَآءُ
(ইয়াহদি বিহী)
এ দিয়ে তিনি সৎপথে চালান।
مَنْ يَّشَآءُ
(মাই ইয়াশা-উ)
যাকে তিনি চান।
وَمَنْ يُّضْلِلِ اللّٰهُ
(ওয়া মাই ইউদলি লিল্লাহ)
এবং আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন
فَمَا لَهٗ مِنْ هَادٍ
(ফামা লাহু মিন হা-দ)
তখন তার কোন পথপ্রদর্শক থাকে না।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বাক্য বিন্যাসঃ
আল্লাহ উত্তম হাদিস সম্বলিত গ্রন্থ অবতীর্ন করেছেন,যা সামাঞ্জস্যপুর্ন এবং বিষয়াবলী পুনারাবৃত্তি করা হয়েছে। যারা তার রবকে ভয় করে এতে তাদের গা শিউরে উঠে। অতপর আল্লাহর স্মরনে (কোরআন পাঠে) বিগলিত হয় তাদের সারা দেহ ও অন্তর সমুহ। এ হলো আল্লাহর হেদায়েত(পথনির্দেশ)। এ দিয়ে তিনি যাকে ইচ্ছে সৎপথে চালান। এবং যে বিভ্রান্তে থাকে আল্লাহ তার কোন পথপ্রদর্শক থাকেন না।
ভাবার্থঃ
আল্লাহর হাদীস উত্তম ও সামাঞ্জস্যপুর্ন,যা মহা গ্রন্থে বিষয়াবলী ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বর্ননা করা হয়েছে। যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের এ শুনে লোম কাঁটা দিয়ে উঠে। কোরআন পাঠে তাদের দেহ ও মন ব্যকুল হয়ে পড়ে, তারাই আল্লাহর হেদায়েত প্রাপ্ত। এ ভাবে যে ইচ্ছে করে আল্লাহ তাদের সরল পথে চালান। এবং এ থেকে যে বিভ্রান্তিতে থাকে দূরে সড়ে থাকে, আল্লাহ তাকে হেদায়েত থেকে বঞ্চিত করে রাখেন আর আল্লাহ বঞ্চিত করেন তখন তার কোন পথ প্রদর্শক থাকে না।
ব্যতিক্রম ধারনাঃ
“আল্লাহ যাকে ইচ্ছে হেদায়েত দান করেন আর যাকে ইচ্ছে বিভ্রান্ত (গোমরাহ) করেন। “
এ অনুবাদটি ভুল হওয়ায় আল্লাহর প্রতি দোষারোপ সৃষ্টি হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছে হেদায়েত দেন — এ দ্বারা তখন বুঝায় আল্লাহ ন্যায় বিচার করেন না। এমন ধারনা জন্মায় আল্লাহর হেদায়েত নির্ধারিত না থাকলে হেদায়েত প্রাপ্তির প্রশ্নই উঠে না। বিষয়টি তা নয়। যে হেদায়তের ইচ্ছে প্রকাশ করে তাকে আল্লাহ পথনির্দেশ বা হেদায়েত প্রদান করেন, আর যে বিভ্রান্তিতে ডুবে থাকে আল্লাহ তাকে পথনির্দেশ বা হেদায়েত প্রদান করেন না ৷ আর তখন তার কোন পথ নির্দেশক থাকে না।
নতুন পোস্ট আপডেট দেখতে প্রতিদিন চোখ রাখুন এই একই লিংকে