وَاَحَلَّ اللّٰهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبٰوا ؕ
ওয়া হাল্লা-ল্লাহু বাঈঁয়া ওয়া হাররামা-র-রিবা।
ওয়া হাল্লা-ল্লাহু বাঈঁয়া — এবং আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন।
ওয়া হাররামা-র-রিবা–এবং নিষিদ্ধ করেছে রিবা (সুদ)
আমরা হারামের বাংলা শব্দ নিষদ্ধ এবং হালালের বাংলা শব্দ বৈধ এর মর্ম সঠিক ভাবেই উপলব্ধি করতে পারি কোন অসুবিধে হয় না। কিন্তু রিবার অর্থ যখন ভিন দেশী ভাষায় সুদ শব্দ ব্যবহার করা হয় তখনই সমস্যার সৃষ্টি হয়, জটিলতা দেখা দেয়। আরবী শব্দ রিবার অনুবাদ সুদ ব্যবহার করে সঠিক মর্ম উবলবদ্ধী করতে বাধা গ্রস্থ করা হচ্ছে। কারন সুদ শব্দটি ভিন দেশর ভাষা থেকে ধার করে নেওয়া। যেমন সালাতের অর্থ নামাজ শব্দটিও বাংলা নয় বলেই সালাত নিয়ে এত বিতর্ক।
সুদ কি ? কেউ বলেন আসলের অতিরিক্ত কোন মুমাফা বা পন্য গ্রহন করাই সুদ। আবার অনেকে মনে করেন, বিনিয়োগকৃত মুল ধনের অতিরিক্ত কিছু গ্রহন করাই সুদ। এভাবে উত্তর নয় ছয় দেওয়া হয়ে থাক। অতিরিক্ত শব্দের আরবী জিয়াদা। তাই সুদের অর্থ যদি অতিরিক্ত গ্রহন করা মনে করা হয় সেটা নির্ঘাত ভুল হবে। কারন আয়াতে জিয়াদা শব্দ ব্যবহার করা হয় নাই। করা হয়েছে রিবা।
সুদ বলতে আমাদের প্রচলিত যে ধারনা তার সাথে আল্লাহর বর্ণিত রিবার কোন মিল নেই। রিবার সঠিক বাংলা অনুবাদ না হওয়ায় আমাদের ধারনাটা অন্য দিকে টার্ণ নিয়ে বসে আছে। কারণ রিবার বাংলা যদি সুদ হয়, আর সুদ শব্দ থেকে বাঙালীরা আমরা যা বুঝি, তাতে আমরা কেউ তো সুদ থেকে মুক্ত নই। যেহেতু রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক চাকাটাই ঘুরে সুদের উপর। সে ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক আর সোনালী ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য খুঁজা মানে শুকরের পেটে খাসির কলিজা তালাস করা। এমন কি মাদ্রাসা মসজিদ গুলোর বেতন-ভাতাও সুদ মুক্ত নয়। যেহেতু তা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে আসে। আর রিবায় নিমজ্জিত থাকা কারো এবাদত আল্লাহর নিকট কখনোই গ্রহন যোগ্য নয়। প্রশ্ন আসে, আচ্ছা ! তাহলে আল্লাহ কি জীবন ব্যবস্থা এত জটিল করে দিয়েছেন আমাদের ? যেখানে সুদের মত হারামের সাথে প্রতিটি মানুষ কোন না কোন ভাবে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় জড়িত। না কখনোই আল্লাহ জুলুম করেন না, বরং “আল্লাহ বলেন আমি তোমাদের জন্য দ্বীনকে সহজ করে দিয়েছি।”
সুদকে ইংরেজীতে Interest বলা হয়, কিন্তু মজার বিষয় Interest এর আরবী কিন্তু ইহতিমাম।اهتمام(স্বার্থ)। অন্যদিকে অতিরক্ত বাংলা শব্দের আরবী إضافي তাই কোরান থেকেই রিবার প্রকৃত বাংলা শব্দ কি তা বের করতে না পারলে রিবার সঠিক উপলব্ধি বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য কখনোই সম্ভব নয়। কারন রিবার বাংলা সুদ নয়। সুদ পারশিয়ান ভাষা। তাই রিবার সঠিক বাংলা নির্নয় করতে সক্ষম হলেই বিষয়টি ক্লিয়ার হবে।
তাহলে আসা যাক রিবা দ্বারা আল্লাহ আসলে কি বুঝাতে চেয়েছেন। কোরান থেকেই তা নিরুপন করি।
এ ক্ষেত্রে আমাদের কোরানের ভাষার একটি মুল নীতিকে অনুসরন করতে হবে। আর তা হলো কোরানে প্রত্যেকটা শব্দের একটি বিপরীত শব্দ কোন না কোন জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে। যেমনঃ
শীত (সীতাঈ)الشِّتاء — গ্রীষ্ম (সাইফ)وَالصّفِ
রাত্রী (লাইল) الليل — দিবস (নাহার) نهار
কম (আকালু) أقل —- বেশী ( আকছার) أكثر
আকাশ السماء —– জমিন (আরদ) الارض
আগুন (নার) النار —– পানি (আলমা)الماء
সত্যবলা(সদ্দকা) —- মিথ্যা বলা (কাজ্জাবা)
⛔ কোন আরবী শব্দের বিপরীত শব্দের মধ্য হতে একটির বাংলা জানা থাকলে অপরটির বাংলা অনুবাদ করা সহজ হয়। তখন অন্য কোন দেশের ভাষার উপর আর নির্ভর করতে হয় না। অর্থাৎ বিপরীত মুখী দুটি আরবী শব্দের একটির বাংলা অর্থ জানা থাকলে তার বিপরীত শব্দটির সঠিক বাংলা অর্থ চয়ন করা সহজ।
وَاَحَلَّ اللّٰهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبٰوا ؕ ؕঅত্র আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ ব্যবসাকে করেছি হালাল আর রেবাকে করেছি হারাম।
এখানে —– হালালের বিপরীতে হারাম। এবং বাঈয়ার বিপরীত রেবা ব্যবহার করেছেন।
বাঈ হল ব্যবসা। আর রেবা হল সুদ।
তাই রিবার বাংলা শব্দ উদঘাটন করতে হলে ব্যবসা বা বাঈঁয়া এর বিপরীত বাংলা শব্দ উদঘাটন করতে হবে। সেক্ষেত্রে দৃষ্টি দিতে হবে
ব্যবসার বিপরীত কাজ কি? চাকরী, কৃষিকাজ, শ্রম ? না, তাও না।
এবার আসা যাক — বাঈঁয়া ও রিবা এ দুটি বিপরীত মুখী আরবী শব্দের বাংলা নির্নয় করি।
বাঈঁয়া এর বাংলা ব্যবসা। এটা নিশ্চিত তা জানি, তাহলে ব্যবসার বিপরীত কি, সেটা নির্নয় করতে পারলেই রিবার সঠিক বাংলা চয়ন করা যায়। তার জন্য আরেকটি আয়াতের সহায়তা নেই।
আল্লাহ বলেনঃ তোমরা যখন লেন- দেন কর বা চুক্তি বদ্ধ হও তখন লিখিত ভাবে কর অথবা স্বাক্ষী রেখো, আর তা এ জন্য যে, একে অপরের প্রতি কোন জুলুম/নৈরাজ্য না সংঘঠিত হয়।
তার মানে এখান হতে স্পষ্ট ব্যবসার বিপরীত জুলুম/নৈরাজ্যতা/লুন্ঠন/ জোর জবর দস্তি।
ব্যবসার বিপরীত কাজ হল নৈরাজ্যতা, অরাজকতা, অনৈতিকতা সৃষ্টি করা। বা কারো অর্থ সম্পদ অন্যায় ভাবে লুন্ঠন করা, আত্মসাত করা।
এবার বাঈয়ার বিপরীত রিবার প্রচলিত অর্থ সুদের পরিবর্তে নৈরাজতা শব্দটি যদি চয়ন করি তবে আমরা বাংলা ভাষাভাষীরা অত্র বাক্যে আল্লাহর সঠিক উদ্দেশ্য বুঝতে সক্ষম হব।
তার মানে অত্র আয়াতের বাংলা অনুবাদ দাড়ায়ঃ আল্লাহ ব্যবসাকে করেছে বৈধ এবং নৈরাজ্যতাকে করেছেন নিষিদ্ধ।
এ নৈরাজ্যতা ব্যক্তি পর্যায়েও হতে পারে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও হতে পারে। সেটা ব্যবসায়েও হতে পারে, কৃষি কাজেও হতে পারে, শ্রমের ক্ষেত্রেও হতে পারে।
কোন ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লক্ষ্যে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কোন পন্য বিক্রী করলে সে নৈরাজ্যতা সৃষ্টি করল। এটাই রেবা। কোন কর্মকর্তা তার দায়িত পালনে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে যথা সময়ে যথাযথ কাজটি না করে বিলম্ব ঘটালে সেটাও নৈরাজ্যতা বা রেবা। রাষ্ট্র প্রধানও তার অর্পিত দায়িত্ত পালন না করে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে নৈরাজ্যতা সৃষ্টি করলে সেটাকেও রেবা বলা হবে। আল্লাহর দৃষ্টিতে তা নিষিদ্ধ।
অথচ রেবার অর্থ সুদ বলে তাকে আমরা ব্যাংকের লেন দেন, মহাজনী লেন-দেন কে বুঝি থাকি। বড় জোর আসলের অতিরিক্ত কোন কিছু গ্রহন করাকে বুঝে থাকি।
একটু চিন্তা করতেও চাই না আল্লাহ আসলে রিবা দিয়ে কি বুঝাতে চেয়েছেন আর আমরা কি বুঝে বসে আছি । কোরআনকে নিজের ভাষায় আয়ত্ত না করায় আজ এ দৈন্যতা। আরেকটু পিছন ফিরে যদি দেখি —- যখন রেবার আয়াত নাযিল হয়েছিল তখন কি ব্যাংকিং প্রথা ছিল ? অনেকে বলতে পারেন ব্যাংকিং প্রথা না থাকলে মহাজনী প্রথা ছিল। না কোরান নাজিল সময় কালে ব্যাংকিং বা মহাজনী প্রথা ছিল না।
দ্বীতিয় প্রশ্ন আসতে পারে এ আয়াত নাযিলে পর প্রথম আব্বাস রাঃ কে রিবা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন রাসুল সাঃ হাদীসে আছে। হ্যা মেনে নিলাম হাদীস বিশুদ্ধ ও সহী। অসুবিধা কোথায় আব্বাস রাঃ এর ইসলাম গ্রহন পুর্বে সামাজিক যে প্রভাব ও নৈরজ্যতা চলমান ছিল, সেটাকে বন্ধ করার জন্য রাসুল সা: তাঁকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার মহাজনী কোন লেনদেন না। সে সময়ে আসল টাকা বিনোয়গ করে বর্তমান সময়ের মত মুনাফা অর্জনের হাদীস তো দুরের কথা ইতিহাসেও পাবেন না।
বড় জোর তিনি মদ মজুদ রাখতেন এবং সংকটে নৈরাজ্যতার মাধ্যমে স্বাভাবিকের অতিরিক্ত মুল্য নিতেন। এ মর্মে হাদীসের ইংগীত পাওয়া যায়।
তার মানে ব্যক্তি,পরিবার,সমাজ বা রাষ্ট্র যে কোন পর্যায়ে যে কোন প্রকার নৈরাজ্য সৃষ্টি করাই রেবা। আর এটাকেই আল্লাহ মানব কল্যানে নিষিদ্ধ বা হারাম ঘোষণা করেছেন।
তাই অন্যত্র আল্লাহ বলেনঃ
হে মু’মিনগণ ! তোমরা সুদ খাইও না ক্রম বর্ধমান হারে এবং আল্লাহ্কে ভয় কর যাহাতে তোমরা সফলকাম হইতে পার।(৩ঃ১৩০)
এ আয়াতে রিবার বাংলা নৈরাজ্যতা বসিয়ে দেখেন মর্ম কি দাড়ায়।। আর সুদ বসালে মর্ম কি দাড়ায়। সুদ বসালে মর্ম হবে সুদ খাওয়া যাবে তবে চক্রবৃদ্ধি না। ইসলামী ব্যাংকের শরীয়া বোর্ড যাকে মুদারাফা নাম দিয়ে খাসির কলিজা বানিয়েছে।
A.K.M.Ekramul hoq
Mail ekramulhoq11545@gmail.com