কোরানের ভাষায় সুদ কাকে বলেঃ
কোরআনে আল্লাহ الرِّبٰٓوا ‘রিবা’কে হারাম/নির্দ্ধারণ করেছেন, যার অর্থ অতিরিক্ত। কিন্তু অনুবাদ গুলোতে রিবাকে সুদ বলা হয়েছে।
রিবা অর্থ অতিরিক্ত, যেটা ব্যবসার ক্ষেত্রে আল্লাহ একটা নীতিমালা দিয়েছেন। লাভ/অতিরিক্ত/রিবা দ্বিগুণের বেশি ভক্ষণ করা যাবে না। (3:130)
যেমন আল্লাহ বলেনঃ”হে ঈমানদার গণ ! তোমরা সুদ খাইও না চক্রবৃদ্ধী হারে। (৩ঃ১৩০)
এ অনুবাদ থেকে এমন মর্ম বুঝায় যে, “আল্লাহ সুদ খেতে নিষেধ করেননি, বরং নিষেধ করেছেন চক্রবৃদ্ধি হারে খেতে।” (নাউযুবিল্লাহ)। বাংলা শব্দ চয়ন যথাযথ না হওয়ায় এমন ধারনার সৃষ্টি করে থাকে।
সাধারন ভাবে সুদ বলতে বুঝায় বিনোয়োগ কৃত মুলধনের অতিরিক্ত যে অর্থ বা সম্পদ মুলধনের সাথে “অতিরিক্ত” গ্রহন করা হয় তাহাই সুদ।
হাদীস বিশারদগণ আল্লাহর বর্ণিত রিবাকে আবার দুই ভাগে ভাগ করেছেন।
রিবা আন নাশিয়াহ (الربوا النسيئة) এবং
রিবা আল ফাদাল (الربوا الفضل).
একটি নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করা হবে যা পরে ফেরত দিতে হবে। এটি রিবা আন নাশিয়াহ (الربوا النسيئة)।
অপরদিকে রিবা আল ফাদল (الربوا الفضل). হলঃ
রিবা আল-ফাদল (বিভিন্ন পরিমাণে বিনিময়)। ফাদল শব্দের আক্ষরিক অর্থ অতিরিক্ত। একেই অনুবাদ গুলিতে লিখা হয়েছে চক্রবৃদ্ধি।
ফাদল বা অতিরিক্ত এর বাংলা শব্দ চয়ন যদি “অসঙ্গত” গ্রহন করা হয়, তা হলে আল্লার এ আয়াতের ভাবার্থ যথার্থ প্রকাশ পায়। অন্যদিকে হারাম শব্দের অনুবাদ নিষিদ্ধ বলা হয়েছে। যদি হারাম শব্দের অনুবাদ “নির্ধারন” চয়ন করা হয় সে ক্ষেত্রে আল্লাহর রিবা ও বায়উ (ব্যবসা) সংক্রান্ত আয়াতটি সুস্পষ্ট ভাবে প্রকাশিত হয়। কারন আরবী হারামের প্রতি শব্দ হালাল হলেও বাংলার ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ এবং বৈধ চয়ন করা হয়েছে। আয়াতটির বাংলা তরজমা হওয়ার কথা এরুপঃ “আল্লাহ রিবাকে অবৈধ নির্ধারন করেছেন এবং ব্যবসাকে বৈধ নির্ধারন করেছেন। ”
এক্ষেত্রে আবার ব্যবসা হলেই যে রিবা মুক্ত তা বলা যাবে না। কারন আপনি যদি ব্যবসায় পন্যের মুল্য আসলের দ্বীগুন গ্রহন করেন সে ক্ষেত্রে আল্লাহ যে ব্যবসাকে বৈধ নির্ধারন করেছেন তা (৩ঃ১৩০) আয়াত মুলে রিবার অন্তর্গত হয়ে যাবে।
আল্লাহ এ জন্যই বলেছেনঃ
হে বিশ্বাসী গন! তোমরা সুদ খেয়ো না কয়েকগুন অতিরিক্ত হারে। (এই কয়েক গুন অতিরিক্তকেই অসঙ্গতি মুনাফা বলে।) যাহা –রিবা বা অতিরক্ত। রিবার অনুবাদ “অতিরিক্ত” চয়ন করা হলে আয়াতের ভাবার্থ ও উদ্দেশ্য সঠিক ভাবে প্রতিফলিত হয়।
প্রচলিত অনুবাদ অনুযায়ী রিবার অর্থ সুদ হলে দেখা যায়– “হে ঈমানদার গণ ! তোমরা সুদ খেয়ো না চক্রবৃদ্ধী হারে।”
তার মানে ,”আল্লাহ সুদ খেতে নিষেধ করেননি, বরং নিষেধ করেছেন চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেতে।(নাউযুবিল্লাহ)। আরবী শব্দের বাংলা অনুবাদের সময় শব্দ চয়নের ভুলের জন্য এমন অপব্যাখ্যার সুযোগ ঘটে।
একই আয়াতের অনুবাদ যখন এ ভাবে করা হবেঃ
” হে ঈমানদার গণ ! তোমরা অতিরিক্ত (মুল্য) ভক্ষন করো না অসঙ্গত হারে।”
তখন এ আয়াতের অপব্যাক্ষার আর সুযোগ থাকে না।
সাধারন ভাবেও যদি আমরা সুদের প্রচলিত সংঙা বলি সে ক্ষেত্রে বুঝে থাকি –“কোন মুলধন বিনিয়োগ করে আসল অর্থের অতরিক্ত যে অর্থ গ্রহন করা হয় তাহাই সুদ।”
এখানেও দেখা যায় ” অতিরক্ত” শব্দটি দ্বারা যা বুঝায় সেটুকুই সুদ। মুলধনের অতিরক্ত না নিলে তাকে আমরা সুদ বলি না। আরবী ভাষায় এই অতিরিক্ত শব্দটিকেই আল্লাহ “রিবা” বলে উল্লেখ করেছেন।**
কিন্তু আমরা “রিবা” অর্থ সুদ অনুবাদ পড়তে পড়তে এতটাই অভ্যস্থ হয়ে গেছি যে “অতিরিক্ত” শব্দটি উপলব্ধিতে আসতে চায় না।
অন্য দিকে মুল শব্দ রা-বা-ওয়া। আরবী রাবা এর অর্থ প্রভু তথা আসল। রিবা শব্দের অর্থ অতিরিক্ত।
আসলের অতিরিক্ত সকল অর্থ বা সম্পদই রিবা। শুধু আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রেই এই রিবা সীমাবদ্ধ নয়। যে কোন সম্পদের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য।
এমন কি ব্যবসার ক্ষেত্রেও রিবা প্রযোজ্য।
ব্যবসা আল্লাহ হালাল বলেছেন কিন্তু তার উপরও বিধি বিধান নির্ধারন করে দিয়েছেন। যেমন ওজনে কম দিতে না করেছেন। দ্বীগুনের বেশী মুনাফা করলে,হঠাৎ মুল্য বৃদ্ধী, কৃত্রিম ক্রাইসিস সৃষ্টি করা,পণ্যের গুন গোপন করে বাজার মূল্যে বিক্রী করা,(ফেকুন) ইত্যাদী সকল কার্যক্রম আল্লাহর বিধান অনুযায়ী রিবা। কারণ এসব আল্লাহর অন্যত্র বর্ণিত আয়াতের পরিপন্থি। ব্যবসা হলেই সব হালাল বা বৈধ এমনটি ভাবার অবকাশ নেই।
আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর রিবাকে হারাম করেছেন। রিবা অর্থ অতিরিক্ত। ব্যবসায় অতিরিক্ত কি পরিমান মুনাফা নেয়া যাবে তাও নির্ধারন করে দিয়েছেন। “চক্রবৃদ্ধী” মানে দ্বীগুন এর বেশী নয়। দ্বীগুনের অতিরিক্ত গ্রহন করাও রিবা বা সুদ। (৩ঃ১৩০)
আলোচনার বিষয়ে কোন দ্বীমত পোষন হলে রেফারেন্স সহ মন্তব্য প্রদানের উন্মুক্ত অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি পরিশুদ্ধ হতে আগ্রহী।
আমাদের সুদ সম্পর্কে প্রচলিত যে ধারনা জন্মে আছে তা মুলত “রিবা” এর ভুল অনুবাদের জন্য।