সিফফিন যুদ্ধের মাধ্যমে মুসলিম সমাজ দুটি শ্রেণীতে ভাগ হয়ে যায়। একটি পক্ষ চলে যায় হযরত আলীর সাথে এবং অপর পক্ষটি চলে যায় মোনাফেক মোয়াবিয়ার পক্ষে। মক্কা বিজয়ের পর যারা জীবন বাঁচাতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে, তারা সবাই মোয়াবিয়ার পক্ষে চলে যায়। এদের সংখ্যাই অধিক ছিল। এই তথাকথিত সাহাবী সমন্ধে পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ ঘোষণা করছেন, “মক্কা বিজয়ের পরে যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে তাদের হৃদয়ে পূর্ণ ঈমান প্রবেশ করেনি। তারা শুধু মুখে ইসলাম গ্রহণ করেছে”। সিফফিন যুদ্ধে মোয়াবিয়া পরাজিত হওয়ার পর গুপ্ত ঘাতক নিয়োগ করে মাওলা আলীকে হত্যা করার জন্য।
প্রচুর স্বর্ন মুদ্রার বিনিময়ে তথাকথিত মোনাফেক সাহাবী মুলজিম মাওলা আলীকে হত্যা করতে রাজি হয়। এই মুলজিম ছিল একজন হাফেজ। মুলজিম যখন মাওলা আলীকে নামাজরত অবস্থায় হত্যা করার আগ মূহুর্তে সূরা বাকারা আয়াত পাঠ করে এবং মাওলা আলীকে কাফের ফতোয়া দেয়। আর বলে হে আলী তোকে হত্যা করা ফরজ এবং তোকে হত্যা করতে পারলে জান্নাত অবধারিত। আমি একজন কাফের এবং জাহান্নামীকে হত্যা করছি, এই বলে সে তলোয়ার দিয়ে আলী রাঃ এর মাথায় কোপ দেয় এবং আলী রাঃ শহীদ হন।
মোয়াবিয়া মৃত্যুর সময় সকল প্রাদেশিক গর্ভনর ডেকে এজিদকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে যায়। শুধুমাত্র মক্কা ও মদিনার গর্ভনর এজিদের কাছে বায়াত গ্রহণ করে না। তৎকালীন সমাজের অধিকাংশ সমাজপতি, হাফেজ ও আলেম সম্প্রদায় সানন্দ চিত্তে এজিদের নিকট বায়াত গ্রহণ করে। কিন্ত ইমাম হোসাইন রাঃ এবং সিফফিন যুদ্ধে আলী রাঃ পক্ষের অনুসারীগণ এজিদের হাতে বায়াত গ্রহণ করে না এবং খলিফা হিসাবে মেনে নেয় না। মোয়াবিয়া মৃত্যুর সময় এজিদকে সতর্ক করে যায়, এজিদ তোমার একমাত্র পথের কাটা ইমাম হোসাইন। তাকে তুমি সরিয়ে দিতে পারলে, তোমার রাস্তা পরিস্কার। এজিদ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে মাওলা ইমাম হোসাইনকে বায়াত হওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু ইমাম হোসাইন সরাসরি এজিদের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে। এতে এজিদ ক্ষুব্ধ হয়ে প্রত্যেক মসজিদের ইমাম এবং আলেম সমাজকে রাজ দরবারে তলব করে। তখন সকল আলেম সমাজ মিলে মাওলা ইমাম হোসাইনকে কাফের ফতোয়া দেওয়া হয়। কারণ
২) কারণ মাওলা ইমাম হোসাইন খলিফা এজিদের নিকট বায়াত গ্রহণ করতে অস্বীকার করছে। আলেম সমাজ রাজ দরবার থেকে উপঢৌকন নিয়ে কুফা, দামেস্ক, বসরা নগরীর প্রতিটি মসজিদের খুৎবায় মাওলা ইমাম হোসাইনকে প্রকাশ্যে কাফের ফতোয়া এবং মাওলা ইমাম হোসাইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ফরজ ঘোষণা করা হয়। আর মাওলা ইমাম হোসাইনের পক্ষে যারা থাকবে, তারাও কা*ফের হিসাবে গণ্য হবে। পবিত্র কুরআন শরীফের দুটি আয়াত দলিল হিসাবে অপব্যাখ্যা করে। তারা বলে নুহ নবীর ছেলে কেনান এবং রাসূল পাক সঃ এর চাচা আবু জেহেল যেমন কাফের। ঠিক তেমনিভাবে হোসাইন মহামান্য খলিফা এজিদের হাতে বায়াত অস্বীকার করে কা*ফের হয়ে গেছে। হোসাইন এখন বিদআত এবং কুফরিকাজে লিপ্ত।
কিন্তু কুফার প্রায় ৪০ হাজার লোক এজিদের ফতোয়া অমান্য করিয়া মাওলা ইমাম হোসাইনের নিকট বায়াত গ্রহণ করার শপথ করে। তাদের দাওয়াতে মাওলা ইমাম হোসাইন কুফা নগরীতে সৈন্য সামন্ত রেখে শুধু পরিবার পরিজন নিয়ে ৮২ জন কাফেলা কুফায় রওনা দেয়। মাওলা ইমাম হোসাইন কারবালা প্রান্তরে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য তাবু ঘারে। এই সুযোগে এজিদের ২২ হাজার সৈন্য ফোরাত নদী এবং চারিদিকে ঘেরাও করে ফেলে। এইদিকে কুফার সেই ৪০ হাজার লোক এজিদের সৈন্যদের ভয় এবং স্বর্ন মুদ্রার বিনিময়ে বেইমানি করে। আর কুফা নগরী অবরুদ্ধ করে রাখে, যাতে মাওলা ইমাম হোসাইনের ভক্তরা হোসাইনকে সাহায্য করতে না পারে। যুদ্ধের ময়দানে মাওলা ইমাম হোসাইন এক জ্বালাময়ী ভাষন প্রদান করে।
মাওলা ইমাম হোসাইন বলেন,
” আমি তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে আসি নাই বরং তোমাদের দাওয়াতে বায়াত দিতে আসছি। এখন তোমরা যদি বায়াত গ্রহণ করতে না চাও, তাহলে আমাকে মক্কা চলে যেতে দাও। তোমাদের ভিতরে কি একজন মুসলমানও নেই, আমাকে সাহায্য করার জন্য।”
অথচ এজিদের সৈন্য বাহিনীর মধ্যে সবাই ছিল তথাকথিত সাহাবী এবং তাবেঈন। এরমধ্যে কোরআনের হাফেজ ছিল ২৫০ জন ও মুফতিসহ অসংখ্য আলেম ছিল। তাছাড়া এই সৈন্য বাহিনীর অধিকাংশ লোক ছিল সিফফিনের যুদ্ধে মোয়াবিয়ার পক্ষের সৈন্য এবং তাদের সন্তান। মূলত এরা সিফফিন যুদ্ধের পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণ করতেই এসেছিল।
এজিদের সেনাপতি ওমর সাদ মাওলা ইমাম হোসাইনকে প্রস্তাব দেয়, হোসাইন তুমি এখন কা*ফের হয়ে গেছ। তাই তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ফরজ হয়ে গেছে। তুমি যদি তওবা করে এজিদের নিকট বায়াত গ্রহণ কর, তাহলে তুমি মুক্তি পাবে। নচেৎ তোমার মাথা কেটে এজিদের নিকট নিয়ে যাব। মাওলা ইমাম হোসাইন বায়াত গ্রহণ অস্বীকার করলে, শুরু হয় অসম যুদ্ধ। মাওলা ইমাম হোসাইনসহ ৭২ জন শহীদ হয় এবং বাকী সদস্য মহিলাদেরকে বেঁধে এজিদের নিকট হস্তান্তর করা হয়। সীমার যখন মাওলা ইমাম হোসাইনের মাথা মোবারক কা*টে, তখন সেনাপতি ওমর সাদ বলে সীমার তাড়াতাড়ি কর আছরের নামাজ কাযা হয়ে যাবে। আমরা সবাই দামেস্ক নগরে গিয়ে আছরের নামাজ আদায় করব। মাওলা ইমাম হোসাইনের মাথা মোবারক ব*র্শার মাথায় বিদ্ধ করে আল্লাহ আকবর ধ্বনি দিতে দিতে এজিদর নিকট রওনা হয়। মাওলা ইমাম হোসাইনের মাথা মোবারক যখন এজিদের সামনে হাজির করা হয়, তখন এজিদ মাওলা ইমাম হোসাইনের চোখ ও দাত মোবারক খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আনন্দ উল্লাস করে। পরবর্তীতে মাওলা ইমাম হোসাইনের মাথা মোবারক সামনে রেখে দুই রাকাত শোকরানা নামাজ আদায় করে এবং মাওলা ইমাম হোসাইনের মাথা মোবারক বর্শার আগায় বিদ্ধ করে শহরের অলি গলিতে বিজয় মিছিল করে। আর এই বিজয় মিছিলে অধিকাংশ লোক শামিল হয়। আর কিছু হোসাইনি ভক্ত নীরবে চোখের জল ফেলে।
আমি যখনই ঐসব সাহাবী, তাবেইন, কোরআনের হাফেজ এবং আলেমদের কথা শুনি, তখনই আমি আতকে উঠি। আর হৃদয় ও চোখে মুখে ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। হায়রে সেলুকাস মুসলিম জাতি! যিনি ধর্মের কান্ডারী এবং জান্নাতের যুবকদের সর্দার, তাঁকে হ*ত্যা করে আমরা আনন্দ প্রকাশ করি। এরচেয়ে আজব জাতি সৃষ্টি জগতে আছে কিনা আমার জানা নেই। আজও সেই ধারা সমাজে হুবহু বিদ্যমান রয়ে গেছে। আমরা যখন মাওলা ইমাম হোসাইনের শোকে মাতম এবং শোক প্রকাশ করি, তখন এজিদের আলেম মোল্লা সমাজ আমাদের কা*ফের ও বিদআতি ফতোয়া দিয়ে দেয়। আর এজিদকে লানত দিলে আমাদেরকে শিয়া, পীর ও মাজার পূজারী আখ্যায়িত করা হয়। অথচ তারা মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে এজিদের প্রশাংসায় লিপ্ত। কারণ আপনারা মসজিদের মিম্বর ১৪০০ বছর আগে থেকেই দখল করে আসছেন। সেখানে আমরা বড়ই অসহায়। এমন তুঘলকি কান্ড কেবলমাত্র অবিবেচক মুসলিম জাতির পক্ষেই সম্ভব। এই যে এজিদি মোল্লা শুনুন, আমরা আপনাদের এজিদি ধর্ম অনেক আগেই তালাক দিয়েছি। তাই আপনাদের ফতোয়ার ধার ধারি না। বরং আমরা হোসাইনি ধর্ম পালন করি। তাই আপনাদের ধর্ম আর আমাদের ধর্ম সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী আলাদা ধর্ম। মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে আর কতকাল পাক পাঞ্জাতনের বিরোধিতা করবেন? একবার হোসাইনি ভক্তরা জেগে উঠলে পা*লানোর পথ খুঁজে পাবেন না। অপেক্ষায় থাকুন একদিন অবশ্যই জেগে উঠবে হোসাইনি প্রেমিকরা। অতি তাড়াতাড়ি আসছে আমাদের শুভদিন। জয় মাওলা ইমাম হোসাইনের জয়।
হাছান হোসাইন জান্নাতের সরদার থাকলে নবী মোহাম্মদ সাঃ কি থাকবেন এবং অন্যান্য নবীরা কি হিসেবে থাকবে? মা ও ছেলে জান্নাতের সরদার থাকবেন অর্থাৎ নারীদের ফাতেমা ও নরদেব হাছান হোসাইন।আলী কি থাকবে?এমন শয়তানের কথা কে বলেছে?