নামাজ প্রতিষ্ঠার অংশ হিসাবে সারা পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য মসজিদ নির্মান করা হয়েছে এবং হচ্ছে। মসজিদ নিমানে দান করা সদগায়ে জারিয়া। যতদিন মানুষ মসজিদে নামাজ পড়বে ততদিন মসজিদ নির্মাতা সোয়ায়াব পাইতে থাকিবে। কিন্তু কোরান কি এ ধারনা নিশ্চিত করে। কোরানে ৮২ বার সালাতের কথা বলা হয়েছে বলে আমরা জানি। কিন্তু কি বলা হয়েছে?
কোরানে সালাত শব্দ দ্বারা আমাদের পরিচিত এবং প্রচলিত নামাজকে বুঝানো হয় নাই। কোরানে এর অর্থ ব্যাপক। পরিচিত এবং প্রচলিত এই নামাজকে কোরান থেকে বুঝতে হলে হাদীস এবং ফিকাহ,তাফসীর বা অন্যান্য ইতিহাস গ্রন্থকে আগে আপাদত বন্ধ করে রাখতে হবে। কারন কোরান যে স্বয়ং সম্পুর্ণ পরিপুর্ণ একমাত্র রবের পক্ষ থেকে ঐশী কিতাব, কোরানের এই চ্যালেঞ্জকে প্রমান করতে হলে। নচেৎ বুঝা যায় কোরান পরিপুর্ন কিতাব নয়, তার সহযোগিতার জন্য মানব রচিত হাদীসের কিতাব গুলিরও সাহায্য লাগে। সে ক্ষেত্রে কোরানের চ্যালেঞ্জ ( পরিপুর্ন কিতাব) প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
একটা মিথ্যে, অপব্যাখ্যায়িত হাদীসের নিঃশর্ত বিশ্বাসই আমাদের পথ ভ্রষ্ট হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
যা হোক নামাজ শব্দটি ফার্সী। কোরানে বর্নিত সালাত শব্দটির বহুমাত্রিক ব্যবহার হয়েছে। কোরানে নামাজে কোন ডিটেইল তো নেই বরং পুর্ব ধারনা না থাকলে কোরানে বর্নিত সালাতের আয়াত গুলো থেকে কেউ নামাজের পরিচত গঠন বিষয়ে সামান্যতম কিছু অনুমানও করা সম্ভব হবে না। আমরা আমাদের ছোটবেলায় নামাজের পুরো স্ট্রাকচার মুখস্থ করেছি। শরীর পাক, কাপড় পাক, নামাজের জায়গা পাক, কেবলামুখি হওয়া রুকু করা, সিজদা করা ইত্যাদি। সেই পুর্ব নির্ধারিত সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করেই কেবল বিচ্ছিন্ন – বিক্ষিপ্ত ভাবে এখানে রুকুর কথা বলা হয়েছে, বা এই যে এখানে সিজদার কথা আছে, ঐখানে কিয়ামের কথা আছে,এই যে এর অর্থ জামাতে নামাজ আদায় করা বা এই আয়াতের অর্থ নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ আদায় করা ফরজ, এই ভাবে কিছু ধারনা পাওয়া যাবে কিন্তু কিয়াম,রুকু,সিজদা এই সমস্ত শব্দ গুলি দ্বারা প্রভাবিত না হলে কোরান থেকে স্পষ্ট নামাজ বুঝা সম্ভব নয়। কিন্তু কোরানের বিভিন্ন আয়াতে ব্যবহৃত এই শব্দ গুলির অর্থ বিশ্লেষন করলে বুঝা যাবে রুকু,সিজদা,কিয়াম দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে।
নামজকে কেন্দ্র করেই মুসলমানদের মধ্যে এত এত মাযহাব উপমাযহাব। কারন কোরানে তো নামাজের স্ট্রাকচারাল গাইড লাইন নাই ই, বরং সাথে হাদীসকে যুক্ত করালেও নামাজের সর্বসম্মত স্ট্রাকচার দাড় করানো সম্ভব নয়। পরিচিত নামাজের ধারাবিবরন অতটা জটিল নয় যে কোরানে এ বিষয়ে বর্ননা দিতে অনেক আয়াত লাগতো বা হাদীসেও ডিটেইল প্রচলিত এই নামাজের ধারাবাহিক ধারা বর্ননা খুজে পাওয়া যায় না।
দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে তাদের বেহস্ত কনফার্ম না পড়লে জলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। এত গুরুত্ত পুর্ণ একটি বিষয়ে ডিটেইল থাকবে না কোরানে তবে কোরান পরিপুর্ন কিতাব চ্যালেঞ্জ প্রশ্নের মুখোমুখি হয়। কোরানে তো নেই ই এমন কি হাদীসেও বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু আলোচনা ছাড়া বিস্তারিত কোন বর্ন্না পাওয়া যায় না।
আল্লাহ ছয় হাজারেরও বেশী আয়াত নাযিল করেছেন, যাতে আমাদের প্রধান ইবাদত। ধনী-গরীব,সুস্থ-অসুস্থ, মৃত্যু পথযাত্রী সকল মুসলমানের জন্য সর্ব অবস্থায় ফরজ। বরং কোরানে বর্নিত সালাতের শব্দ গুলি দিয়ে আমাদের পরিচিত এই নামাজকে বুঝানো হয়েছে, এটা পুর্বধারনা ছাড়া বুঝা প্রায় অসম্ভব।
কোরানের দুই আয়াত দিয়েই আল্লাহ রোজার ডিটেইল বর্ননা দিয়েছেন। নামাজের ক্ষেত্রেও দিতে পারতেন না কি?
কোরানে বর্নিত আকিমুস সালাত অর্থ — সর্ব অবস্থায় আল্লাহর বিধি নিষেধ ছায়ার মত অনুসরন করা।
সূরা ক্বিয়ামাহ : (৭৫:৩১ও ৩২) ফালা সদ্দকা ওয়ালা ছল্লা, ওয়ালেকিন কাজ্জাবা ওয়া তাওয়াল্লা।
فَلَا صَدَّقَ وَلَا صَلّٰىۙ
وَلٰكِنْ كَذَّبَ وَتَوَلّٰىۙ
এ আয়াতের প্রচলিত অনুবাদ হচ্ছে,
“সে বিশ্বাস করে নাই এবং সালাত আদায় করে নাই।”
বরং সে সত্য প্রত্যাখ্যান করিয়াছিল ও মুখ ফিরাইয়া লইয়াছিল।
এই আয়াতের প্রেক্ষাপটে ছাল্লা মানে কখনোই নামাজ নয়। (صَدَّقَ) সদ্দকা মানে সত্য বলা,স্বীকার করা বা বিশ্বাস করা। এর বিপরীত হচ্ছে (كَذَّبَ) কাজ্জাবা অর্থাৎ মিথ্যা বলা,অস্বীকার করা বা অবিশ্বাস করা। আর ( تَوَلّٰىۙ) তাওয়াল্লা মানে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া বা টার্ণ ব্যাক। যার বিপরীতার্থক শব্দ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে صَلّٰىۙ ছাল্লা। অর্থাৎ টার্ণ টু ওয়ার্ডস। ফোলো বা অনুসরন করা। সুতরাং এ আয়াতের যৌক্তিক অনুবাদ হয়,
সে সত্য বলে নাই, অনুসরনও করে নাই। বরং সে মিথ্যে বলেছে এবং মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
সূরা আনকাবুত, আয়াত ৪৫, এখানে সালাতের অর্থ নামাজ ধরে অনুবাদ করলে দাড়ায় :
” আপনি কোরান পড়ুন এবং নামাজ আদায় করুন। নিশ্চয় নামাজ অনৈতিক ও অন্যায় কাজ হতে ফরাইয়া রাখে। “
কিন্তু নামাজ কি নিশ্চিত অনৈতিক ও অন্যায় কাজ হতে ফিরাইয়া রাখতে সক্ষম হয়? একজন মানুষ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে একি সাথে অনৈতিক, অন্যায় কাজের সাথে জড়িত হতে পারে। একমাত্র কোরানের নিরবাচ্ছন্ন অনুসরনই একজন মানুষকে অন্যায়, অনৈতিক কাজ থেকে ফিরায়ে রাখতে পারে। তাহলে বুঝা যায় সালাতের অনুবাদ কখনোই নামাজ নয়। সালাতের অনুবাদ রবের ঐশী কমান্ড ছায়ার মত অনুসরন করা। পুর্ন মেনে চলা।
সুতরাং এ আয়াতের যৌক্তিক অনুবাদ হবেঃ
” আপনি কোরআন পড়ুন এবং সে অনুযায়ী কাজ করুন। নিশ্চয় কোরনকে নিরবিচ্ছন্ন অনুসরন অন্যায় অনৈতিক কাজ হতে ফিরাইয়া রাখে। “