Categories
My text

যাকাত সদাকা ফিতরা

সুদ,ঘুষ, প্রতারণা করে সম্পদের পাহাড় গড়ে, অন্তরের ভয়,পাপ রাশি লুকাবার জন্য সে  তখন যাকাত খুজে। যাকাতের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে পাপমুক্ত ভাবে।

যাকাত কি কালো টাকা সাদা করার অফার?
যা দিয়ে সে হারাম সম্পদ হালাল করবে?

বছরে একবার যাকাত দিয়ে ভাবে আমি গংগায় স্নান করে  সুচি হলাম। এতে লাভবান হয়  —এ প্রথার প্রচলনকারীরা, আপনি বিন্দু মাত্রও না।  আল্লাহর সন্তুষ্টি তো দূরে থাক।

চামড়া,দান, সদকা, ভক্ষন কারীরা যাকাত কে ২.৫% এর উৎসে কর আদায়ের তহবিল করে নিয়েছে। আল্লাহ কি কোথাও যাকাতকে এ ভাবে ২.৫% আদায়ের বর্ননা করেছেন?

হ্যা আছে, হাদীসে। যাকাত একটি গুরুত্তপুর্ন বিষয় যা সালাতের সাথে আষ্ঠে-পিষ্ঠে জড়িত। যেখানেই সালাতের উল্লেখ করেছেন আল্লাহ সেখানেই যাকাত এসেছে।  কিন্তু পরিমান সম্পদের ২.৫% যদি যাকাতের নেসাব হতো অবশ্যই আল্লাহ তা কোরানে উল্লেখ করতেন।  যেমন: উল্লেখ  করেছেন মৃত ব্যক্তির সম্পদের উত্তরাধিকারী আইন।  কে কত অংশ পাবে? মৃত ব্যক্তির সম্পদের অংশ উল্লেখ করতে পারলে, জীবিত ব্যক্তির সম্পদের কত অংশ যাকাত দিতে হবে অবশ্যই উল্লেখ করতেন মহান রব।

দান, সাদাকা, ফিতরা, উশর, যাকাত একাকার করে তালগুল পাকিয়ে ফেলা হয়েছে।

লোকে কি ব্যয় করিবে সে সম্বন্ধে তোমাকে প্রশ্ন করে। বল, যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় করিবে তাহা পিতা-মাতা, আত্নীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিস্কীন এবং মুসাফিরদের জন্য। উত্তম কাজের যাহা কিছু তোমার কর না কেন আল্লাহ্ তো সে সম্বন্ধে সম্যক অবহিত। (2:215)

আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (৬৩:১০)

আরও জানিয়া রাখ, যুদ্ধে যাহা তোমরা লাভ কর তাহার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহ্‌র, রাসূলের, রাসূলের স্বজনদের, ইয়াতীমদের, মিস্কীনদের এবং মুসাফিরদের, যদি তোমরা ঈমান রাখ আল্লাহে এবং তাহাতে যাহা মীমাংসার দিন আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করিয়াছিলাম, যেই দিন দুই দল পরস্পর সম্মুখীন হইয়াছিল এবং আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে শক্তিমান। (সূরা নম্বরঃ ৮, আয়াত নম্বরঃ ৪১)

যাহারা যাকাত প্রদান করে না এবং উহারা আখিরাতেও অবিশ্বাসী।
الَّذِيْنَ  لَا يُؤْتُوْنَ الزَّكٰوةَ وَهُمْ بِالْاٰخِرَةِ هُمْ كٰفِرُوْنَ (সূরা নম্বরঃ ৪১, আয়াত নম্বরঃ ৭)

প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীকে প্রতি বছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, যদি তা ইসলামী শরিয়ত নির্ধারিত সীমা (নিসাব পরিমাণ) অতিক্রম করে তবে, গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণের নিয়মকে যাকাত বলা হয়।

আরবী الزكاة ‘যাকাত’ শব্দের আভিধানিক অর্থ বৃদ্ধি ও উন্নতি। যাকাত শব্দের আভিধানিক আরেকটি অর্থ হয় التطهير (তাতহির), যার বাংলা অনুবাদ পবিত্র করা। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿قَدۡ أَفۡلَحَ مَن زَكَّىٰهَا ٩﴾ [الشمس: 9]

“সে নিশ্চিত সফল হয়েছে যে তাকে (নফসকে) পবিত্র করেছে”। [সূরা আশ-শামস, আয়াত: ৯]

কাকে জাকাত দেওয়া যায় এবং কাকে দেওয়া যায় না, এ ব্যাপারে ইসলামে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে। কোরআনে বলা হয়েছে যে ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায় কর্মী, নও মুসলিম ও অনুরাগী, দাস-দাসী, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, মুজাহিদ ও বিপদগ্রস্ত মুসাফিরকে জাকাত দিতে হবে।

সুরা তাওবার ৬০ নম্বর আয়াত অনুযায়ী যারা জাকাত পাওয়ার উপযোগী, তারা হলেন:

১. ফকির: যার বেঁচে থাকার মতো সম্বল নেই বা খুব সামান্য। ২. মিসকিন: এমন অভাবী, যার রোজগার তার নিজের এবং তার ওপরে নির্ভরশীলদের অপরিহার্য প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। ৩. জাকাত সংগ্রহ ও বিতরণকাজে নিয়োজিত কর্মচারী, যাদের আমিলিন বলে। ৪. নব্য মুসলিম যার ইমান পরিণত হওয়ার পথে আছে অথবা ইসলাম গ্রহণ করতে ইচ্ছুক কোনো অমুসলিম। ৫. মুক্তিপণ ধার্যকৃত দাস বা রিকাব। ৬. ঋণী ব্যক্তি যিনি জাকাতের অর্থে ঋণ পরিশোধ করতে চান। ৭. আল্লাহর পথে ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত ব্যক্তি (মুজাহিদ)। ৮. বিপদগ্রস্ত মুসাফির।

যাদের জাকাত দেওয়া যায় না

নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, যে ব্যক্তি অন্যূন ৮৫ গ্রাম সোনা বা ৫৯৫ গ্রাম রুপার সমপরিমাণ নগদ অর্থ বা সমমূল্যের দ্রব্যসামগ্রী বা বাণিজ্য পণ্যের মালিক, তাকে জাকাত দেওয়া যায় না। এমন ব্যক্তির জাকাত গ্রহণ নিষেধ। নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারীকে জাকাত দিলে আদায় হবে না।

নির্দিষ্ট আত্মীয়: কেউ তার আপন মা, বাবা, মাতামহ, মাতামহী, পিতামহ ও পিতামহী এবং তাদের পিতা-মাতাকে জাকাত দিতে পারবে না। একইভাবে নিজের ছেলে, মেয়ে, নাতি ও নাতনি এবং তাদের সন্তানদে জাকাত দেওয়া যায় না। আবার স্বামী স্ত্রীকে জাকাত দিতে পারবেন না।স্ত্রী স্বামীকে জাকাত দিতে পারবেন না।

সেবার প্রতিদান: পারিশ্রমিক হিসেবে কাউকে জাকাত দেওয়া যায় না ।

কর্মচারীর মজুরি: গৃহভৃত্য বা অন্য কোনো কর্মচারীকে মজুরি হিসেবে জাকাত দেওয়া যায় না। অবশ্য মজুরি ছাড়া উপহার হিসেবে তাদের জাকাত দেওয়া যায়।

আর আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে যাহা তাহাদের দিয়াছেন তাহাতে যাহারা কৃপণতা করে তাহাদের জন্য উহা মঙ্গল, ইহা যেন তাহারা কিছুতেই মনে না করে। না, ইহা তাহাদের জন্য অমঙ্গল। যাহাতে তাহারা কৃপণতা করিবে কিয়ামতের দিন উহাই তাহাদের গলায় বেড়ি হইবে। আস্মান ও যমীনের স্বত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহ্‌রই। তোমরা যাহা কর আল্লাহ্ তাহা বিশেষ ভাবে অবহিত। (৩ঃ১৮০)

হে মু’মিনগণ! পণ্ডিত এবং সংসার বিরাগীদের মধ্যে অনেকেই লোকের ধন-সম্পদ অন্যায় ভাবে ভোগ করিয়া থাকে এবং লোককে আল্লাহ্‌র পথ হইতে নিবৃত্ত করে। আর যাহারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং আল্লাহ্‌র পথে ব্যয় করে না উহাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও। ( ৯ঃ৩৪)

যেদিন জাহান্নমের অগ্নিতে উহা উত্তপ্ত করা হইবে এবং উহা দ্বারা তাহাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হইবে সেদিন বলা হইবে, ‘ইহাই উহা যাহা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করিতে। সুতরাং তোমরা যাহা পুঞ্জীভূত করিয়াছিলে তাহা আস্বাদন কর।’
সূরা নম্বরঃ ৯, আয়াত নম্বরঃ ৩৫

উহাদের সম্পদ হইতে ‘সাদাকা’ গ্রহণ করিবে। ইহার দ্বারা তুমি উহাদেরকে পবিত্র করিবে এবং পরিশোধিত করিবে। তুমি উহাদেরকে দু’আ করিবে। তোমার দু’আ তো উহাদের জন্য প্রশান্তিদায়ক। আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
সূরা নম্বরঃ ৯, আয়াত নম্বরঃ ১০

যাকাত এবং ফিতরার মধ্যে পার্থক্য কী?

ইসলামে দান-খয়রাতের নানা মাত্রিক ধরন রয়েছে। সাদাকা ইফাক ফী সাবিলিল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়। সব ধরনের দানই আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়। দানকে ফরয করে বিধান চালু হয় হিজরতের পর। একে বলা হয় যাকাত। যাকাত শব্দের অর্থ পবিত্রতা ও বৃদ্ধি।

যাকাতও ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান। কুরআনের বহু স্থানে সালাতের আদেশের সঙ্গে যাকাতের আদেশ দেওয়া হয়েছে। যাকাত ফরয হবার বহু পূর্বে দান করার অর্থে যাকাত দেবার নির্দেশ নাযিল হয়। ইরশাদ হয়েছে, সালাত কায়েম করে যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহকে দাও উত্তম ঋণ (কর্যে হাসানা) তোমরা তোমাদের মঙ্গলের জন্য অগ্রিম যা কিছু প্রেরণ করবে তোমরা পাবে আল্লাহর নিকট। ওটাই উৎকৃষ্টতর এবং পুরস্কার হিসেবে মহত্তর। আর তোমরা ক্ষমা চাও আল্লাহর নিকট। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সূরা মুয়াজ্জিম : আয়াত ২০)।

ইসলামী শরীয়াতের পরিভাষায় জীবন যাত্রার অপরিহার্য প্রয়োজন পূরণের পর সম্পদে পূর্ণ এক বছরকাল অতিক্রম করলে ওই সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট অংশ আল্লাহর নির্ধারিত খাতে ব্যয় করাকে যাকাত বলা হয়।

সূরা তওবার ৬০ নম্বর আয়াতে যাকাত ব্যয় করার ৮টি খাত নির্ধারিত করে বিধান নাযিল করা হয়। এখানে লক্ষণীয় এতে যাকাতকে সাদাকাত বলা হয়েছে। আল্লাহ ইরশাদ করেন : সাদাকা (যাকাত) তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণভারাক্রান্তদের জন্য, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান, আল্লাহ সব জানেন, প্রজ্ঞাময়। (সূরা তওবা : আয়াত ৬০)।

যাকাত আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আয়কর নয় কিংবা গরিবের প্রতি দয়ার দানও নয়। এটা ধনীর সম্পদে গরিবের অধিকার যা আল্লাহ বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন।

যাকাত দিলে দাতার অর্থ সম্পদ এবং তার নিজের আত্মা পবিত্র-পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। যাকাতের শরয়ী অর্থই তো, আল্লাহর সন্তোষ লাভের উদ্দেশ্যে কোনো মালদার ব্যক্তি কোনো হকদার ব্যক্তিকে তার মালের নির্ধারিত অংশ দিয়ে দেবে।

ফিতরা:
ফিতরাও এক ধরনের যাকাত, একে সাদাকাতুল ফিতরও বলা হয়। রমাদানুল মুবারকের শেষে ফিতরা ওয়াজিব হয়ে যায় শরী’আত দ্বারা। নির্দিষ্ট করে দেওয়া নির্দিষ্ট পরিমাণ ধন-সম্পদের অধিকারীর ওপর অর্থাৎ সাহিবে নিসাবের ওপর।

যাকাতের নিসাব ও ফিতরার নিসাব সমান হলেও ধন-সম্পদের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। যাকাতের ক্ষেত্রে নিসাব পরিমাণ ধন-সম্পদ পূর্ণ এক বছরকাল স্থায়ী হলে সেই সাহিবে নিসাবের ওপরে যাকাত বাধ্যতামূলক হয়ে যায় শতকরা আড়াইভাগ হিসাব করে যাকাত দেওয়া, কিন্তু ফিতরার ক্ষেত্রে পূর্ণ এক বছরকাল স্থায়ী হবার প্রয়োজন হয় না বরং ঈদুল ফিতরের দিন সকালে নিসাব পরিমাণ ধন-সম্পদের অধিকারী হলেই তার ওপর ফিতরা ওয়াজিব হয়ে যায়।

নিসাবের পরিমাণ হচ্ছে সাড়ে সাত তোলা সোনা অর্থাৎ ৮৭.৪৫ গ্রাম সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য অর্থাৎ ৫১২.১৫ রৌপ্য অথবা ওই পরিমাণ সোনা বা রৌপ্যের দামের অর্থ অথবা সম্পদ। বর্তমানে যা প্রায় ৭৮ হাজার টাকার সমপরিমাণ সম্পদ। ফিতরার জন্য নির্ধারিত নিসাবের অধিকারীকে ফিতরার জন্য নির্ধারিত মাথাপিছু হিসেবে গরিব-মিসকিনদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে।

সাহিবে নিসাব নিজের পরিবারের নাবালিগ সন্তানাদি, গৃহভৃত্য সবার ফিতরা তিনি আদায় করবেন। এমনকি ঈদুল ফিতরের দিন সকাল বেলার পূর্বে যদি কোনো সন্তান জন্মগ্রহণ করে তারও ফিতরা আদায় করবেন। ঈদের দিন সকালে ঈদের সালাত আদায় করতে যাওয়ার পূর্বে ফিতরা দেওয়া উত্তম।

ফিতরার মাধ্যমে রমাদানের সিয়ামের মধ্যে যদি কোনো অনিচ্ছাকৃত ছোটখাটো ত্রুটি বিচ্যুতি হয়ে থাকে তার প্রায়শ্চিত্ত সঞ্চিত হয়।

সাদকাতুল ফিতর শুধু মাত্র রমজান মাসে রোজাদরদের ভুল-ত্রুটি ইত্যাদির কাফ্ফারা হিসেবে দিতে হয়। আর যাকাত অর্জিত সম্পদের বাৎসরিক হিসাবের ওপর নির্ধারিত হয়।

আলোচনায়ঃ এ,কে,এম,একরামুল হক।

By Ekramul hoq

I am A.K.M Ekramul hoq MA.LLB. Rtd Bank Manager & PO of Agrani Bank Ltd. I am interested writing and reading. Also innovator of history of Islam. Lives in Bangladesh, District Jamalpur.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

en_USEnglish
Verified by MonsterInsights