Categories
My text

মানুষ শ্রমনির্ভর রূপে সৃষ্টি

মানুষ শ্রমনির্ভর রূপে সৃষ্টি

لَاۤ اُقْسِمُ بِهٰذَا الْبَلَدِۙ
১) আমি শপথ করিতেছি এই নগরের
وَاَنْتَ حِلٌّ ۢ بِهٰذَا الْبَلَدِۙ
২) আর তুমি এই নগরের অধিবাসী,
وَوَالِدٍ وَّمَا وَلَدَ ۙ
৩) শপথ জন্মদাতার ও যাহা সে জন্ম দিয়াছে।
لَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ فِىْ كَبَدٍؕ
৪) আমি তো মানুষ সৃষ্টি করিয়াছি কষ্ট-ক্লেশের মধ্যে।

অনুবাদঃ নিশ্চয় আমি মানুষকে শ্রমনির্ভর রূপে সৃষ্টি করেছি।

اَيَحْسَبُ اَنْ لَّنْ يَّقْدِرَ عَلَيْهِ اَحَدٌ‌ ۘ
৫) সে কি মনে করে যে, কখনও তাহার উপর কেহ ক্ষমতাবান হইবে না ?
يَقُوْلُ اَهْلَكْتُ مَالًا لُّبَدًا ؕ
৬) সে বলে, ‘আমি প্রচুর অর্থ নিঃশেষ করিয়াছি।’
اَيَحْسَبُ اَنْ لَّمْ يَرَهٗۤ اَحَدٌ ؕ
৭) সে কি মনে করে যে, তাহাকে কেহ দেখে নাই ?
اَلَمْ نَجْعَلْ لَّهٗ عَيْنَيْنِۙ
৮) আমি কি তাহার জন্য সৃষ্টি করি নাই দুই চক্ষু ?
وَلِسَانًا وَّشَفَتَيْنِۙ
৯) আর জিহবা ও দুই ওষ্ঠ ?
وَهَدَيْنٰهُ  النَّجْدَيْنِ‌ۚ
১০) আর আমি তাহাকে দুইটি পথ প্রদর্শন করেছি।

না আমি শপথ করছি এই নগরের, এমন এক নগর যার নাগরিক স্বয়ং তুমি! শপথ করছি জন্মদাতার এবং যা সে জন্ম দেয়। নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কঠিন পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে যাওয়ার জন্য।সে কি মনে করে যে তার উপরে কারো ক্ষমতা নেই,বলে কি না অনেক টাকা উড়িয়ে দিলাম, সে কি মনে করে যে তাকে কেউ দেখছে না? আমি কি তাকে দুটি চোখ বানিয়ে দেই নি, একটা জিহব,দুটি ঠোট ?

আর আমি তাকে  দুইটি পথ প্রদর্শন করেছি।।। (সূরা বালাদ)

১-১০ নং আয়াতের তাফসীর সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ এখানে জনবসতিপূর্ণ শান্তির সময়ের মক্কা নগরীর শপথ করছেন। তিনি শপথ করে বলেছেনঃ হে নবী (সঃ) এখানে একবার তোমার জন্যে যুদ্ধ বৈধ হবে, তাতে কোন পাপ বা অন্যায় হবে না। আর ঐ যুদ্ধে যা কিছু পাওয়া যাবে সেগুলো তোমার জন্যে শুধু ঐ সময়ের জন্যে বৈধ হবে। নবী করীম (সঃ) বলেছেনঃ “এখানে (মক্কায়) যুদ্ধ-বিগ্রহের বৈধতা সম্বন্ধে কেউ আমার যুদ্ধকে যুক্তি হিসেবে পেশ করলে তাকে বলে দিতে হবেঃ আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর রাসূল (সঃ)-এর জন্য অনুমতি দিয়েছেন, তোমাদের জন্যে দেননি।”

এরপর আল্লাহ্ তাআ’লা পিতা এবং সন্তানের শপথ করেছেন।  পিতা দ্বারা হযরত আদম (আঃ) কে এবং সন্তান দ্বারা সমগ্র মানব জাতিকে বুঝানো হয়েছে। এখানে সাধারণভাবে সকল পিতা এবং সকল সন্তানের কথা বলা হয়েছে।

অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ আমি মানুষকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর, সুষম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অধিকারী করে সৃষ্টি করেছি। মায়ের পেটেই তাকে এই পবিত্র গঠন-বিন্যাস এবং উন্নত আকৃতি প্রদান করা হয়ে থাকে। যেমন আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি)“হে মানুষ! কিসে তোমাকে ভোমার মহান প্রতিপালক সম্বন্ধে বিভ্রান্ত করলো যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুঠাম করেছেন এবং সুসমঞ্জস করেছেন। যেই আকৃতিতে চেয়েছেন তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” (৮২ ৬-৮) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)অথাৎ “আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠনে।” (৯৫:৪)  মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, মানুষ প্রথমে ছিল বীর্য বা শুক্র, তারপরে হয়েছে রক্তপিন্ড এবং এরপরে হয়েছে গোশতটুকরা। মোটকথা, মানুষের জন্ম খুবই বিস্ময়কর এবং কষ্টকরও বটে, যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “তার মাতা তাকে কষ্ট করে গর্ভে বহন করেছে এবং কষ্ট করে প্রসব করেছে।” (৪৬:১৫) মা সন্তানকে দুধ পান করানোতে এবং লালন-পালন করাতেও কঠিন কষ্ট স্বীকার করেছে।

মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন তারা কি মনে করে যে, তাদের উপর কেউ ক্ষমতাবান হবে না? অর্থাৎ তারা ধারণা করে যে, তাদের ধন-মাল নিতে কেউ সক্ষম নয়? তারা কি মনে করে যে, তাদের উপর কারো কর্তৃত্ব নেই? তারা কি জিজ্ঞাসিত হবে না যে, তারা কোথা থেকে ধন-সম্পদ উপার্জন করেছে এবং কোথায় তা ব্যয় করেছে? নিঃসন্দেহে তাদের উপর আল্লাহর কর্তৃত্ব রয়েছে এবং আল্লাহ তাদের উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।

তারা বলে বেড়ায়ঃ আমরা বহু ধনমাল খরচ করে ফেলেছি। তারা কি মনে করে যে, তাদেরকে কেউ দেখছে না? অর্থাৎ তারা কি নিজেদেরকে আল্লাহর দৃষ্টি থেকে অদৃশ্য মনে করে?

এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি কি মানুষকে দেখার জন্যে দুটি চক্ষু প্রদান করিনি? মনের কথা প্রকাশ করার জন্যে কি আমি তাদেরকে জিহ্বা দিইনি? কথা বলার জন্যে, পানাহারের জন্যে, চেহারা ও মুখমণ্ডলের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যে কি আমি তাদেরকে দুটি ওষ্ঠ প্রদান করিনি? সুতরাং আমার সন্তুষ্টিমূলক কথা মুখ থেকে বের কর এবং অসন্তুষ্টিমূলক কথা থেকে জিহ্বাকে বিরত রাখো।

এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা বলেনঃ আমি তাদেরকে ভালো মন্দ দুটি পথই দেখিয়েছি। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্র বিন্দু হতে, তাকে পরীক্ষা করবার জন্যে, এ জন্যে আমি তাকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টি শক্তিসম্পন্ন। আমি তাকে পথের নির্দেশ দিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে।” (৭৬:২-৩)
তারপর আরেকটু এগিয়ে জানিয়ে দিলেন …
এবং এই পথই আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা ইহারই অনুসরণ করিবে এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করিবে না, করিলে উহা তোমাদেরকে তাঁহার পথ হইতে বিচ্ছিন্ন করিবে। এইভাবে আল্লাহ্ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন, যেন তোমরা সাবধান হও। (৬:১৫৩)

By Ekramul hoq

I am A.K.M Ekramul hoq MA.LLB. Rtd Bank Manager & PO of Agrani Bank Ltd. I am interested writing and reading. Also innovator of history of Islam. Lives in Bangladesh, District Jamalpur.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

en_USEnglish
Verified by MonsterInsights